সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ করে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা কর

সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ করে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা কর
 সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ করে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা কর

সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ করে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা কর

  • অথবা, পৃথিবীর সভ্যতাসমূহ কত ভাগে ভাগ করা হয়েছে? এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : মানবসভ্যতার ইতিহাস অতি বিচিত্রময়। এ সভ্যতার ইতিহাস কখন, কিভাবে শুরু হয়েছিল, এ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও পৃথিবীতে মানবসভ্যতার উত্থান হয়েছিল এবং সে সাথে কোন কোন সভ্যতা সাফল্যের চূড়ান্ত শীর্ষে আরোহণ করেছিল, এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। 

তাই মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষের বিবর্তন ও আবির্ভাবের সাথে সাথে যেসব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বকীয়তা ও গুণাবলি প্রকাশিত হয়, তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। 

বর্বরতা থেকে বন্যতা এবং বন্যতা থেকে সভ্যতার উত্তরণে মানুষের হাজার হাজার বছর লেগেছিল। মানুষের আবির্ভাবের সাথে সাথে সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ হতে থাকে। 

অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রথম মানুষের আবির্ভাব ঘটে এবং মানুষ যে কর্মকাণ্ড করে তাই সংস্কৃতি। এ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নত, আদর্শ ও চরম রূপই হচ্ছে সভ্যতা।

সভ্যতা : সভ্যতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Civilization'। এ শব্দটি 'Civis' or 'Civitas' থেকে এসেছে, যার অর্থ নাগরিক। 'Civilization' শব্দটি আমাদের কাছে অতিপরিচিত, যার আভিধানিক অর্থ হল সভ্যতা।

দার্শনিক ভলতেয়ার সর্বপ্রথম 'Civilization' শব্দটি ব্যবহার করেন। এছাড়া কোন অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহে যখন একটি জনগোষ্ঠী নগরপত্তন করে এক উন্নততর জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং তার অগ্রগতির সহায়ক নিয়ামক হিসেবে উদ্ভাবিত হয় লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার ব্যবস্থা, বাণিজ্য, নব প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সুস্পষ্ট ধর্মীয় দর্শন তখন তাকে সভ্যতা বলা হয় । এ সভ্যতা সাধারণত মৌলিক ও জটিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকগণ সভ্যতা সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :

মন্টেস্কু এবং হান্টিংটন বলেছেন, “সভ্যতা হচ্ছে ভৌগোলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের আশীর্বাদপুষ্ট এক ফসল।” 

মর্গান (Morgan) তাঁর 'Ancient Society' গ্রন্থে বলেছেন, "সভ্যতা হচ্ছে বিবর্তন নামক সিঁড়িটির শীর্ষ ধাপ। যে সমাজে লেখা ভাষা ও বর্ণমালা আছে, ধাতুর ব্যবহার ও লিখিত দলিলের প্রচলন আছে, সে সমাজই সভ্য।”

টেইলর (Taylor) বলেছেন, "A civilization is a culture which has attained a degree of complexity usually characterized by urban life." অভাব, প্রয়োজন ও তাগিদ সভ্যতা উনোষের জন্য দায়ী। আর্নল্ড টয়েনবি এ মতের অন্যতম সমর্থক। বস্তুত সভ্যতা উদ্ভবের জন্য অনেক উপাদানই দায়ী।

ম্যাকাইভার ও পেজ (Maclver and Page) এর মতে, "সভ্যতা বলতে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবনধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা বা সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রূপ। 

কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানারূপ নীতি সভ্যতার অন্তর্গত তা নয়, নানাবিধ কারিগরি কলাকৌশল ও বাস্তব যন্ত্রপাতি এর অন্তর্ভুক্ত।

পাসকুলার জিসবার্ট (P. Gisbert) এর মতে, "সংস্কৃতির সে স্তরকে সভ্যতা বলা হয়, যে স্তর একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত ও মিশ্র সমাজে বহুসংখ্যক জনমানবের সমাবেশ সৃষ্টি করেছে, যাদের আমরা নগর আখ্যা দিয়ে থাকি।"

জিসবার্ট (Gisbert) এর আরও বক্তব্য হল, "সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হল বহু জনমানব অধ্যুষিত নগরগুলো এবং এ সভ্যতা মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনের একটি পরিণত স্তর।"

ই. এস. বার্নস, লী রালফ, লার্নার ও মিয়াচাম সভ্যতা সম্পর্কে একই ধরনের মতবাদ পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, “সভ্যতা হল ঐতিহাসিক বিকাশ ধারার সেই পর্যায় যেখানে মানুষ উন্নত লিখন পদ্ধতি, কলা ও বিজ্ঞান এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।”

জার্মান দার্শনিক অসওয়াল্ড স্পেংলার (Oswald Spengler) বলেছেন, “সভ্যতা হল উৎকর্ষ সাধিত বা আদর্শ সংস্কৃতির চূড়ান্ত রূপ।”

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, সভ্যতা মানব সৃষ্ট একটি আদর্শ প্রত্যয়। এটি সংস্কৃতির সর্বোৎকৃষ্ট রূপ। 

মানুষ যখন প্রকৃতিতে জ্ঞানবিজ্ঞান ও কারিগরি পদ্ধতি আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয় এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তথা দর্শন, সাহিত্য, শিল্প বাণিজ্য ও কলা কারিগরিতে মানুষের সামগ্রিক জীবনধারার পূর্ণ বিকাশ ঘটে তখন সে অবস্থাকে সভ্যতা বলা হয় ।

সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ : সভ্যতাকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

১. ভূসংস্থানিক দিক থেকে

২. দৈশিক দিক থেকে ও কালিক দিক থেকে।

১. ভূসংস্থানিক দিক থেকে : ভূসংস্থানিক দিক থেকে আবার সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

ক. নদীভিত্তিক সভ্যতা,

খ. সাগরভিত্তিক সভ্যতা ও

গ. মহাসাগরভিত্তিক সভ্যতা।

২. দৈশিক দিক থেকে : দৈশিক দিক থেকে সভ্যতাকে দু'ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা ।

ক. প্রাচ্য সভ্যতা ও

খ. পাশ্চাত্য সভ্যতা।

ক. প্রাচ্য সভ্যতা : প্রাচ্য সভ্যতাকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

১. মিশরীয় সভ্যতা,

২. মেসোপটেমীয় সভ্যতা,

৩. পারস্য সভ্যতা,

৪. হিব্রু সভ্যতা,

৫. বিট্রাইট সভ্যতা, 

৬. লিঙীয় সভ্যতা,

৭. ফিনিশীয় সভ্যতা, 

৮. সিন্ধু সভ্যতা,

৯. চৈনিক সভ্যতা ও

১০. ইতালীয় সভ্যতা।

খ. পাশ্চাত্য সভ্যতা : পাশ্চাত্য সভ্যতাকেও তেমনি কয়েকভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :

১. গ্রিক সভ্যতা,

২. রোমান সভ্যতা,

৩. মায়া সভ্যতা,

৪. আজটেক সভ্যতা ও

৫. ইনকা সভ্যতা।

৩. কালিক দিক থেকে : কালিক দিক থেকেও সভ্যতাকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

ক. প্রাচীন যুগীয় সভ্যতা,

খ. মধ্যযুগীয় সভ্যতা।

ক. প্রাচীন যুগীয় সভ্যতা : প্রাচীন যুগীয় সভ্যতাগুলোকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

১. মিশরীয় সভ্যতা,

২. মেসোপটেমিয়া সভ্যতা,

৩. পারস্য সভ্যতা,

৪. সিন্ধু সভ্যতা, 

৫. চৈনিক সভ্যতা, 

৬. হিব্রু সভ্যতা, 

৭. হিটাইট সভ্যতা,

৮. ফ্রিজীয় সভ্যতা

৯. গিতীয় সভ্যতা ও

১০. ফিনিশীয় সভ্যতা।

খ. মধ্যযুগীয় সভ্যতা : মধ্যযুগীয় সভ্যতাগুলোকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :

১. মায়া সভ্যতা,

২. আজটেক সভ্যতা ও

৩. ইনকা সভ্যতা ।

এ শ্রেণীবিভাগের উপর ভিত্তি করে নিম্নে কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হল : 

১. মিশরীয় সভ্যতা : মিশরীয় সভ্যতা আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত নীলনদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল। মিশরীয় সভ্যতার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৫২৫ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত। 

এ সময়কালে মিশর আদিম নবোপলীয় সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নগর সভ্যতার পত্তন ঘটায়। মিশরীয় সভ্যতার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। 

সে সময় আইনের চোখে সবাই সমান ছিল । তবে ধনী গরিবের মধ্যে পার্থক্য ছিল আকাশ পাতাল। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে তুলা, গম, যব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ছিল। শিল্প দ্রব্যের মধ্যে পাথর, নৌযান তৈরি, বয়ন শিল্প প্রভৃতি প্রধান ছিল। 

এছাড়া বর্ণভিত্তিক চিত্র লিপির উদ্ভাবন, লেখার জন্য প্যাপিরাস ও কালির উদ্ভাবন, প্রাচীন ক্যালেন্ডার, মন্দির ও অন্যান্য নিদর্শন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশ ইত্যাদি মিশরীয় সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দিক। এ সভ্যতা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত পিরামিড, স্ফিংস ও মমির কারণে ।

২. মেসোপটেমীয় সভ্যতা : এশিয়া মহাদেশে এটাই প্রাচীনতম সভ্যতা। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠে এ সভ্যতা। 

এ মেসোপটেমীয় অঞ্চলের মধ্যে পরবর্তী সুমেরীয় অঞ্চলীয়, ব্যাবিলনীয়, ক্রসেরীয়, ক্যালডীয় প্রভৃতি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ।

৩. সুমেরীয় সভ্যতা : মেসোপটেমীয়ার দক্ষিণে অঞ্চলভিত্তিক এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সুমেরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ তদের মধ্যে এ অঞ্চলে নগর পত্তন করে। 

এ সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ধাতু, কাঠ, কৃষিজাত ও বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্য এবং এগুলোর আমদানি, রপ্তানি, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, তামার আবিষ্কার, কিউনিফর্ম নামক লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন, পুরাকাহিনী নির্ভা সাহিত্য, বিভিন্ন ভাস্কর্য, চিত্রকলার বিকাশ, মোটামুটি সংঘটিত আইন কাঠামো ইত্যাদি। তাদের অর্থনীতির উৎস ছিল কৃষি।

৪. ব্যাবিলনীয় সভ্যতা : আরব থেকে আগত আমোরাইটরা সুমের ও আক্কাসকে একত্রিত করে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তোলে। এ সভ্যতার শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন হাম্বুরারী। 

এ সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দিক হল ২৮২টি ধারাবিশিষ্ট হাম্বুরানীর আইন। এ সভ্যতায় মেয়েরা ছিল সম্মানিত। এছাড়া জিওরাত নামক ধর্মমন্দির স্থাপন ও গণিতে উন্নতি লাভ তাদের অন্যতম অবদান।

৫. ক্রসেরীয় সভ্যতা : এর কেন্দ্র ছিল উত্তর মেসোপটেমিয়ার আমুরা নামক স্থানে। তারা খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ থেকে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করেছিল এবং ৬১২ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল। 

তাঁদের বিখ্যাত সম্রাট ছিলেন সেন্না চেরিয় এবং আমুর নিপপাস। কথিত আছে যে, তারা অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ আবিষ্কার করেছিল। 

এছাড়া তারা চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি চর্চা করত। সম্রাট আমুর নিপপাস ২২০০ গ্রন্থ সংবলিত লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিল।

৬. চীন সভ্যতা : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্র চীন। এ ইতিহাসের প্রথম যুগ শুরু হয় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এখানে বেশ কয়েকটি রাজবংশের উদ্ভব ঘটেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ব্রোঞ্জের দ্রব্যসামগ্রী তৈরি। 

লিখন পদ্ধতি, সুগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ইত্যাদি। এছাড়া প্রাচীন চীনে স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও যন্ত্র সঙ্গীতের বিকাশ ঘটেছিল। চীনের উল্লেখযোগ্য অবদান ধর্মীয় দর্শনের ক্ষেত্রে।

৭. পারস্য সভ্যতা : ক্রসেরীয়দের পর পারস্য উপসাগরের নিকট খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে পারস্য সভ্যতা গড়ে উঠে। এদের ভাষা ছিল, কিন্তু বর্ণ ছিল না। 

এদের অবদান ছিল প্রশাসনিক, ধর্ম, স্থাপত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, লিখন পদ্ধতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। ধর্ম দর্শন ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এরা চির অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

৮. রোমান সভ্যতা : গ্রিক সভ্যতা যখন স্বর্ণযুগ, তখন ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ইতালীয় উপদ্বীপকে আশ্রয় করে রোমান সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। 

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে পড়ে উঠে এবং ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে এর পতন ঘটে। এদের উল্লেখযোগ্য অবদান হল ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান, সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার প্রভৃতির ক্ষেত্রে। 

তবে এদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল আইনের ক্ষেত্রে, যার জন্য তারা আজও বিশ্বদরবারে পরিচিত।

৯. গ্রিক সভ্যতা : বলকান উপদ্বীপে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তাই বিশ্বখ্যাত গ্রিক সভ্যতা নামে পরিচিত। এ সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। 

এ গ্রিক সভ্যতায় জন্ম নিয়েছিল হোমার, সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, আলেকজান্ডারের মত বিশ্ববিখ্যাত কবি, দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও বীর। 

গ্রিক সভ্যতার অবদানের শেষ নেই। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ধর্ম প্রভৃতি জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাদের অবদান ছিল। গ্রিকদের সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল সাম্রাজ্য বিস্তার ও গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রে। 

তাদের সাম্রাজ্য ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃতি ছিল । পৃথিবীর প্রতিটি জাতি আজ গ্রিকদের অনুকরণ করছে এবং বিশ্ববিখ্যাত অলিম্পিক গেমসের জন্মভূমি গ্রিসেই।

১০. সিন্ধু সভ্যতা : ভারতীয় উপমহাদেশে সিন্ধু নদের অববাহিকায় খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ - ১৭৫০ অব্দ পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। 

এর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ইটের তৈরি দেয়াল, উঁচু অট্টালিকা, বৃহৎ শস্যাগার, স্নানাগার, দুর্গ, রাস্তা ও রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট, ডাস্টবিন ইত্যাদি। ব্যবসায় বাণিজ্য, অর্থনীতি, কৃষিকার্য, স্থাপত্যশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখেছিল।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পৃথিবীর শুরুতে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে, আবার তা ধ্বংসও হয়েছে। 

কোন সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে স্মৃতির অতলে, আবার কোন সভ্যতা ধ্বংস হয়েও পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে। 

তাই সভ্যতার শ্রেণীবিভাগ করা কঠিন। তবে উপরিউক্ত সভ্যতাগুলোর ব্যাপারে ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ