মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা কর

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা কর
মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা কর

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা কর

  • অথবা, মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুর্শিদকুলি খান দাক্ষিণাত্যের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হাজি শফী নামে শায়েস্তা খানের এক দেওয়ান এ বালককে ক্রয় করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে নাম দেন মুহাম্মদ হাদী। 

এ হাদীই বাংলার নবাব বংশের প্রতিষ্ঠাতা নবাব মুর্শিদকুলি খান। যিনি প্রথমে হাজি শফী এবং পরে দেওয়ান আব্দুল্লাহ খোরাসানীর অধীনে চাকরি গ্রহণ করে দেওয়ানি সংক্রান্ত যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

→ রাজস্ব ব্যবস্থা : রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য মুর্শিদকুলি খান প্রধানত ২টি পথ অবলম্বন করেন। যথা-

১. মুঘল কর্মচারীদের সমুদয় জায়গির খাস জমিতে পরিণত করা এবং কর্মচারীবৃন্দকে তার পরিবর্তে উড়িষ্যার অনুন্নত অঞ্চলে জায়গির বরাদ্দ করা।

২. রাজস্ব আদায়ের ভার জমিদারদের নিকট থেকে নিয়ে ইজারাদারদের হাতে ন্যস্ত করা।এছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করেন, সেগুলো নিম্নরূপ :

১. ইজারাদার নিয়োগ : তিনি সরকারি কর্মচারী ও জমিদারদের সব জমি জাতীয়করণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জমিদারদের উৎখাত করে রাজস্ব আদায়ের ভার ইজারাদারদের উপর ন্যস্ত করেন। ইজারাদাররা সংগৃহীত রাজস্বের একাংশ পেতেন।

২. রাজস্ব কর্মচারী পরিবর্তন : রাজস্ব বিভাগে পূর্বে অধিকাংশ | প্রভাবশালী মুসলিম কর্মকর্তারা ছিল অধিক দুর্নীতিপরায়ণ। তাই তিনি তাদের বরখাস্ত করে হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ করেন।

৩. রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা : রাজস্ব আদায়ে তিনি কঠোর নীতি অনুসরণ করেন। সঠিক সময়ে রাজস্ব না দিতে পারলে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

৪. ভূমি জরিপ প্রথা : তিনি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য সমগ্র বাংলাকে ১০টি চাকলায় ভাগ করেন। ভূমি জরিপ প্রথা অবলম্বন করে রাজস্ব আদায় করতেন।

৫. চাকলা গঠন : রাজস্ব আদায়ের সুব্যবস্থার জন্য তিনি বাংলাকে ১৩টি চাকলায় এবং ১৬৬০টি পরগনায় ভাগ করেন। 

৬. আমিন নিযুক্ত : বাংলাকে কয়েকটি চাকলায় বিভক্ত করে প্রতি চাকলায় একজন করে আমিন নিয়োগ করতেন।

৭. মালজামিনি ব্যবস্থা : ভূমি জরিপের পর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করবেন বলে নির্ধারিত হয় ইজারাদারদের রাজস্ব আদায়ের পূর্বেই সে পরিমাণ টাকার চুক্তিপত্রে সই করে দিতে হতো, একেই মালজামিনি ব্যবস্থা বলে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে জমা নিতে না পারলে বিশেষ শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।

৮. হিসাব সংরক্ষণ ও নিরীক্ষণ ব্যবস্থা : তিনি রাজস্ব আদায়ের জন্য সার্বিক হিসাবরক্ষণ, সংরক্ষণ ও নিরীক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করেন।

৯. স্বহস্তে রাজস্ব আদায় : তিনি শুধু রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেই থেমে থাকেননি, বরং রাজস্ব সংস্কারের সাথে সাথে তা আদায়ের দায়িত্বও সম্পূর্ণরূপে নিজ হাতে তুলে নেন।

১০. সপ্তক প্রথার বিলোপ : তিনি পূর্ব প্রচলিত দত্তক প্রথার বিলোপ ঘটিয়ে কোম্পানির কাজ থেকে প্রচলিত হারে শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা বাংলার অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করে। তার রাজস্ব ব্যবস্থা পরবর্তীতে শাসকগণ অনুসরণ করেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ