নদী তীরবর্তী কয়েকটি সভ্যতার নাম উল্লেখ কর

নদী তীরবর্তী কয়েকটি সভ্যতার নাম উল্লেখ কর
নদী তীরবর্তী কয়েকটি সভ্যতার নাম উল্লেখ কর

নদী তীরবর্তী কয়েকটি সভ্যতার নাম উল্লেখ কর

উত্তর ৷ ভূমিকা : সভ্যতা বলতে সংস্কৃতির এমন অংশকে বুঝায় যা একটি বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে সমাজকে নিরাপত্তা প্রদান করার শক্তি সামর্থ্য অর্জন করে। 

প্রাচীনকালে যেসব সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল সেসব সভ্যতা কোন না কোন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। এজন্য ঐতিহাসিকগণ সভ্যতাকে নদী সম্পদের সৃষ্ট আশীর্বাদরূপে ব্যাখ্যা করেছেন ।

নদী তীরবর্তী সভ্যতাসমূহ : প্রাচীনকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেসব সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তার পিছনে নদী সম্পদের অবদান ছিল অপরিসীম। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. মিশরীয় সভ্যতা : ঐতিহাসিকগণ মিশরীয় সভ্যতাকে “নীলনদের দান” বলে অভিহিত করেছেন। মূলত নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। 

মধ্য আফ্রিকার উচ্চ ভূমিতে উৎপন্ন হয়ে নীলনদ ভূমধ্যসাগরে পতিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ মাইল প্রবাহিত হয়েছে।

২. মেসোপটেমীয় সভ্যতা : টাইগ্রিস (দজলা) ও ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর জলধারাকে কেন্দ্র করে এ দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে মেসোপটেমীয় সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল। 

এ দুই নদীর পানি প্লাবিত হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো কৃষিকাজের উপযোগী হয়ে উঠে। ফলে বিভিন্ন দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষ নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে আসতে থাকে। এভাবেই মেসোপটেমীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।

৩. সিন্ধু সভ্যতা : সিন্ধু সভ্যতার উৎপত্তির পিছনে সিন্ধু নদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সিন্ধু নদের পানি প্লাবিত হয়ে প্রাচীন ভারতের বহু অঞ্চল কৃষিকাজ ও পশু পালনের উপযোগী ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। 

ফলে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বসতি স্থাপন করে যা ‘সিন্ধু সভ্যতা' নামে পরিচিত।

৪. পারস্য সভ্যতা : পারস্য সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। আরব মরুভূমির সীমান্তরেখায় দক্ষিণাঞ্চলীয় তৃণভূমি ও দানিয়ুব নদীর নিম্নাঞ্চলের পূর্বদিক এবং কৃষ্ণ সাগরের উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণ রাশিয়া পর্যন্ত এ সভ্যতার বিস্তৃতি ছিল। 

৫. গ্রিক সভ্যতা : গ্রিক সভ্যতার উৎপত্তির পিছনে আর্ডিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর ও ইজিয়ান সাগরের অবদান ছিল । এশিয়া মাইনরের নৈকট্য এবং ইজিয়ান সাগরের অবস্থান গ্রিক সভ্যতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছিল।

৬. রোমক সভ্যতা : রোমক সভ্যতার উৎপত্তি পিছনে টাইবার নদী, ভূমধ্যসাগর, এড্রিয়টিক সাগর ও ইট্রাকান সাগরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সভ্যতার বিকাশে নদনদীর অবদানকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। 

প্রাচীনকালে মানুষের জীবন কঠিন ও দুর্বিষহ হওয়ায় যাযাবর শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার সন্ধান করতো। নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আধিক্য থাকায় এসব অঞ্চলে বহু সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ