রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা শনাক্ত কর এবং প্রকৃতি আলোচনা কর

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা শনাক্ত কর এবং প্রকৃতি আলোচনা কর
রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা শনাক্ত কর এবং প্রকৃতি আলোচনা কর

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা শনাক্ত কর এবং প্রকৃতি আলোচনা কর

  • অথবা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি সমষ্টিগত প্রক্রিয়া যার অধীনে জন্ম নিয়ে মানুষ স্বভাবজাত কারণেই ব্যাপক আচরণবিধির অধিকারী হয়, পরবর্তীতে এসব অন্তর্নিহিত আচরণবিধি বাস্তব আচরণবিধিতে পরিণত হয়।

 Prof. Alan R. Ball তাঁর 'Modern Politics and Government' শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, “Political socialization is the establishment and development of attitudes and beliefs about political systems."

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ (Political socialization) : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগরিত করা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপাত্তের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায় ।

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা : নিম্নে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল :

১. রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শ গড়ে তোলে : বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীর ভূমিকা বিস্তৃত হয়। ছাত্রছাত্রীর নিজস্ব যোগতে ক্ষমতা এবং ইচ্ছা অনিচ্ছার দ্বারা বৃহত্তর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম ও কনো এবং প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের সাথে তাদের জীবন ও রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এ ধরনের পাঠ্যক্রম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শ গড়ে তোলে ।

২. পাঠ্যসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক মূল্যবোধ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পাঠ্যসূচি ছাত্রদের রাজনৈতিক ভূমিকাকে হল্যায়ন ক্ষেত্রে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে। 

বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সমর্থনসূচক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেখানকার পাঠ্যসূচি একটা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। 

বিশেষ করে শিশুর মেধার বিকাশে পাঠ্যসূচি সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জোহারি (J. C. Johari) মন্তব্য করেছেন, "It is for this reason that the selection of courses comes to have an important of its own and the politically conscious people fight for the revision of the syllabus partaining to their interests."

৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ প্রভাব : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ প্রভাবের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও অন্যান্য নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সংযোগ থাকে। 

এ সংযোগ ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিক্ষায়তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া কর্তৃত্বমূলক। এ প্রক্রিয়া বিদ্যার্থীদের মধ্যে এক কর্তৃত্বসম্পন্ন মানসিকতার জন্ম দেয়।

ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন ও কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। বিদ্যায়তনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ফলে অনেক সময় বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধের বিরোধী মানসিকতার সৃষ্টি হয়। 

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বল বলেছেন, “The effect of education of political values can be partly illustrated by the upsurgence of student radicalism in the late 1960s, especially in more industrialised countries even though it may represent only a minority."

৪. বিকেন্দ্রীভূত শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব : অধ্যাপক বলের অভিমত অনুসারে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ বিকেন্দ্রীভূত শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আবার বিকেন্দ্রীভূত শিক্ষাব্যবস্থার কারণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপসংস্কৃতির উদ্ভবের সম্ভাবনা থাকে। অধ্যাপক বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "A decentralised educational system may prevent government interference and may encourage and support sub-culture". 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিকেন্দ্রীভূত শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান। এ কারণে শিক্ষার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক আনুগত্যের উদ্ভব হয়েছে। 

৫. অন্যান্য বৈশ্বিক ব্যাপকতা : এছাড়া অন্যান্য আরো ব্যাপকতা রয়েছে। যেমন-

ক. রাজনৈতিক ব্যাপকতা।

খ. বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ।

গ. সামাজিক যোগ্যতার সাথে রাজনৈতিক যোগ্যতা ।

ঘ. নেতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপকতা।

ও. সরকার গঠনে সামাজিকীকরণ ।

চ. সামাজিকীকরণ ও নেতৃত্ব।

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ধারণা বিচার বিশ্লেষণ করলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কতকগুলো প্রকৃতির সন্ধান লাভ করা যায়। 

নিম্নে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতিসমূহ আলোচিত হল :

ক. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি ও প্রভাব নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় অনেকাংশে সময় ও পরিবেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সহায়ক পরিবেশ হল সমরূপ ও নমনীয় পরিবেশ।

খ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যম বর্তমান। এ মাধ্যমগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পরিপূরক হওয়া প্রয়োজন। 

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো যদি পরস্পরের পরিপূরক ও নমনীয় হয়, তাহলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিরাপদ হয়।

গ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলোর প্রকৃতি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি স্থায়ী ও সুদৃঢ় হয়, তাহলে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সম্ভাবনা থাকে।

ঘ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সুস্পষ্ট হতে পারে আবার প্রচ্ছন্নও হতে পারে। রাজনৈতিক ক্রিয়াদি সম্পর্কে বিশেষ মূল্যবোধ, মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যক্ষভাবে সঞ্চারিত করার প্রক্রিয়া হল রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সুস্পষ্ট ধরন। 

কিন্তু অরাজনৈতিক মনোভাব ও মূল্যবোধের সঞ্চার যখন বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে তাকে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বলে ।

ঙ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব, বয়স ও অভিজ্ঞতার প্রভাব, আর্থসামাজিক অবস্থান ও মনোভাবগত পার্থক্যের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিপন্ন হয়।

চ. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল সমগ্র জীবনব্যাপী অব্যাহত একটি প্রক্রিয়া। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যক্তির অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার অধিকতর স্ফীত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ আধুনিকীকরণ ক্ষেত্রে একটা অন্যতম হাতিয়ারস্বরূপ। 

অর্থাৎ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে জীবনের শৈশব থেকে শুরু করে কৈশোর ও বাস্তব জীবনের সকল ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। 

এক্ষেত্রে অধ্যাপক আশরফ ও শর্মা বলেছেন, "An individual's politically relevant experience arises out of and is contributory to the process of political socialization,"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ