রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা কর

রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা কর
রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা কর

রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা কর

  • অথবা, রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট তত্ত্ব বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এলিট তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এলিট মক্তবাদের মধ্যে প্যারেটো (Vilfredo Pareto) এর সমসাময়িক রাজনৈতিক তাত্ত্বিকদের মধ্যে রবার্ট মিশেলস্ এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 

মিশেলস্ তাঁর Political Parties' গ্রন্থে এলিট সম্পর্কিত মতবাদের অবতারণা করেছেন। তিনি এলিট তত্ত্বকে কতিপয় ব্যক্তির শাসন বা Rull of Oligarchy বলে অভিহিত করেছেন।

মিশেলস্ এর তত্ত্বের মূল বক্তব্য : এলিট তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও বুঝাবার ক্ষেত্রে মিশেলস্ (Robert Michels) এর এলিট সম্পর্কিত মতবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত। 

তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'Political Parties' এ মূল সুরের অবতারণা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, সকল রাজনৈতিক দলেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গ নেতৃত্ব প্রদান করেন। 

সকল দলীয় সংগঠনেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তির কর্তৃত্বকে মিশেলস্ অবশ্যম্ভাবী ও বাস্তব বলে মনে করেছেন। সে সম্পর্কে তিনি তাঁর সামগ্রিক যুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর মতবাদকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন।

তাঁর ধারণা মতে, এলিট তত্ত্ব হল মুষ্টিমেয়ের কঠোর বিধি (The Iron law of Oligarchy)।

ঐতিহাসিক সত্যতা : রবার্ট মিশেলস্ (Robert Michels) মনে করেন যে, "মুষ্টিমেয়ের কঠোর বিধি এমন এক ঐতিহাসিক নিয়ম যা হতে কোন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং কোন রাজনৈতিক দলও পুরোপুরি মুক্ত নয় এবং যুক্ত থাকতেও পারে না।” [Source : Robert Michels' First Lectures in Political Sociology)

সংগঠনের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা : তাঁর (Robert Michels) তত্ত্ব বা বিধি সমর্থনকারী প্রধান উপাদানটি হচ্ছে সংগঠন। সংগঠন ব্যতীত কোন আন্দোলন বা রাজনৈতিক দল কার্যকর হতে পারে না। 

অন্য কথায় সংগঠন হচ্ছে কতিপয় ব্যক্তির শাসনের এক মূর্ত প্রতীক। মিশেলস্ বলেছেন, “প্রত্যেক মানবিক সংগঠনেই কতিপয় ব্যক্তির শাসনের প্রবণতা অন্তর্নিহিত থাকে, যা কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনে সচেষ্ট হয়।” 

কতিপয় ব্যক্তির শাসন বৃহত্তর সামাজিক সমষ্টির এক পূর্বনির্ধারিত সাধারণ রূপ। সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ সংখ্যালঘু ব্যক্তিবর্গের অধীনস্থ থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং পূর্ব নির্ধারিত মানবজীবনের সবক্ষেত্রেই নেতৃত্ব একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। 

সকল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা রাজনৈতিক দল এবং সভ্যতা অভিজাততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে থাকে। মিশেলস্ (Robert Michels) এর মতে, কোন রাজনৈতিক দল যতই আকারে বৃদ্ধি হয় ততই তাদের কার্যাবলি অধিক পরিমাণে কতিপয় নেতা বা এলিট শ্রেণির হাতে হস্তান্তরিত হয়। 

কালক্রমে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা নেতাদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতার পরিচয় দেবে। নেতারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং কায়েমি স্বার্থের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে। 

মিশেলস্ এর মতে, এটা অবশম্ভাবী হিসেবে ঘটে থাকে। বর্তমান বিভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে রবার্ট মিশেলস্ (Robert Michels) এর এলিট তত্ত্বের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠের মানসিকতা : মিশেলস্ (Robert Michels) কতিপয় ব্যক্তির শাসনকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মানসিকতার (Mass Mind) সাহায্যে তাঁর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করেছেন। 

তিনি বলেছেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ উদাসীন (Apathetic), অলস (Indolent) এবং দাসোচিত (Slavish)। তারা দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরী করবার জন্য একান্তভাবেই অনুপযুক্ত।

রাজনৈতিক দলের নেতারা অতি সহজেই তাদের এ চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করেন। এবং তারা নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখেন। 

নেতারা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং সুষ্ঠু বাচনভঙ্গি, তোষামোদ ও ভাবপ্রবণতাকে তারা উত্তমরূপে কাজে লাগান। 

যখন তারা ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন তখন কেউই তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয় না। তাদের এ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকল্পে যদি আইন পাস করা হয় তাহলে উক্ত আইনই বরং ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। নেতারা দুর্বল হন না। 

এমতাবস্থায় কোন কোন সময় বিপ্লব (Revolution) সংঘটিত হতে পারে এবং স্বৈরাচারী শাসকদের পতন ঘটতে পারে। তবে নতুন স্বৈরাচারী শাসকদের আবার আবির্ভাব ঘটে এবং সমাজ পুনরায় আগের মতোই চলতে থাকে।

সমালোচনা : রবার্ট মিশেলস্ এর এলিট তত্ত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। নিম্নে তাঁর তত্ত্বের সমালোচনা তুলে ধরা হল : 

১. কতিপয় ব্যক্তি : তিনি শুধু কতিপয় ব্যক্তিকে শাসক বলেছেন, তাদের গুণের প্রতি কোন নজর দেন নি।

২. নেতার শাসন : তিনি যে নেতার কর্তৃত্বের কথা বলেছেন তা সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে তিনি নেতা নির্ভর বা নেতা সর্বস্ব হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন।

৩. মানসিকতা : তিনি কতিপয় ব্যক্তির যে মানসিকতার কথা বর্ণনা করেছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে সম্পর্কে তিনি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেন নি।

৪. বিপ্লব : তিনি যে বিপ্লবের কথা বলেছেন সেক্ষেত্রে তিনি গণতন্ত্রের কবর রচনায় সাহায্য করেছেন।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এলিট সম্পর্কে রবার্ট মিশেলস্ এর তত্ত্ব পুরোপুরি অবাস্তব নয় । যদিও তার তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

বর্তমানে আধুনিক দল ব্যবস্থায় বা সাংগঠনিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তার এলিট তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এক্ষেত্রে (Robert Michels) এর এলিট তত্ত্বকে খাটো করে দেখবার অবকাশ নেই । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ