সংস্কৃতি কাকে বলে। সংস্কৃতি বলতে কি বুঝায়

সংস্কৃতি কাকে বলে। সংস্কৃতি বলতে কি বুঝায়
সংস্কৃতি কাকে বলে। সংস্কৃতি বলতে কি বুঝায়

সংস্কৃতি কাকে বলে। সংস্কৃতি বলতে কি বুঝায়

উত্তরঃ ভূমিকা : মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানবসমাজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ন্যায় প্রাচীন। 

প্রতিটি মানব শিশু জন্মের পর একটি নিজস্ব সাংস্কৃতিক গণ্ডির মধ্যে বেড়ে উঠে। তবে সংস্কৃতি কেউ জন্মসূত্রে পায় না, এটি মানুষকে অর্জন করতে হয়। 

তাই সংস্কৃতি একটি গতিশীল বিষয়। একটা মানুষ তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক গণ্ডির আওতায় পরিপূর্ণভাবে নিজেকে বিকশিত করার প্রয়াস পায়।

সংস্কৃতি : সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Culture' যা ল্যাটিন শব্দ 'Colere' থেকে এসেছে। আর ল্যাটিন শব্দ 'Colere' এর অর্থ দাঁড়ায় কৃষ্টি বা কর্ষণ করা। সুতরাং বলা যায় যে, সংস্কৃতি বা 'Culture' হচ্ছে কর্ষণের মাধ্যমে অর্জিত বিষয়। 

সাধারণভাবে সংস্কৃতি বলতে মানুষের সামগ্রিক জীবনপ্রণালিকে বুঝায়। অর্থাৎ জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তা থেকে একজন মানুষ যে সমস্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে তার সমষ্টিই হচ্ছে সংস্কৃতি।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের নিজস্ব মতামত দিয়েছেন যা নিম্নরূপ :

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী নর্থ (North) তাঁর 'Social Problem' গ্রন্থে বলেন, “মানুষ তার অভাব মোচনের জন্য যে কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে সেটাই তার সংস্কৃতি।”

অধ্যাপক জোনস (Jones) বলেছেন “মানব সৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টি হলো সংস্কৃতি।" (Culture is the sum of man's creation.)

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ( MacIver) বলেছেন, “আমরা যা তাই আমাদের সংস্কৃতি।” (Culture is what we are.)

সমাজবিজ্ঞানী আর. টি. ফেফার (R. T. Schaefer) বলেছেন, “সংস্কৃতি হলো অর্জিত, সামাজিকভাবে সঞ্চালিত জ্ঞান, প্রথা, বস্তুগত উপাদান ও আচরণের সমাহার। একদল মানুষের চিন্তা, মূল্যবোধ, প্রথা ও চিত্রকর্ম এর অন্তর্ভুক্ত।” 

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী জিলবার্ট (Ginsbert) বলেছেন, “সকল বস্তু এবং আচরণের ধারা জাগতিক ও ইহজাগতিক স্বার্থ ও সন্তোষ, এসব কিছুর জটিল সমগ্রককেই সংস্কৃতি বলে।”

নেইল. জে. স্মেলসার (Neil. J. Smelser) তাঁর 'Sociology' গ্রন্থে বলেন, "We may define culture as a set of values, views of reality and codes of behaviour held in common by people who share a distinctive way " of life. "

প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী ই. বি. টেইলর (E.B. Taylor) বলেন, “সংস্কৃতি হলো মানুষের আচার আচরণ, রীতিনীতি ও সামগ্রিক মূল্যবোধের সমষ্টি।

এস কোনিগ (S. Koenig) বলেন, “পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো ও জীবনধারা উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষের সার্বিক প্রচেষ্টাকে সংস্কৃতি বলে।”

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংস্কৃতি হচ্ছে মানবজীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বিভিন্ন উপাদানের সমষ্টি। বিশ্বায়নের এ যুগে বিভিন্ন জাতি বা রাষ্ট্রের বাস হওয়ায় তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি বিদ্যমান। 

তবে প্রতিটি জাতি বা রাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে মৌলিক কিছু দিক থাকে যা ঐ জাতির পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। তাই বলা যায় যে, মানবজাতির পরিপূর্ণ বিকাশে সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ