বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা কর

বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা কর
বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা কর

বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা কর

  • অথবা, পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
  • অথবা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিকল্পনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম । এখানে নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান । 

দারিদ্র্য, বেকারত্ব, খাদ্যঘাটতি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সমস্যা ও শিক্ষা সমস্যা আমাদের জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। 

এদেশের সীমিত সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে হলে যথার্থ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসে না।

পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :

. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দ্রুত উন্নয়নের জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা, উন্নয়নের মাপকাঠি ও উন্নয়নের জন্য সহজপথ চিহ্নিত করে এর ওপর নির্দেশনা প্রদান হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। 

বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, জাপান, সুইডেন, নরওয়ের মতো দেশগুলো নিজেদের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বলে আজ বিশ্ব দরবারে উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে।

২. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : পণ্য উৎপাদন এবং সম্পদের ব্যবহার সর্বদা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। 

তাই দেশের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন ।

৩. বেকার সমস্যা সমাধান : বাংলাদেশ একটি বেকার সমস্যায় জর্জরিত দেশ। এখানকার মোট কর্মক্ষম জনশক্তির শতকরা ৩৩ ভাগ বেকার। বেকার সমস্যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

এজন্য দেশের মূলধন ও জনশক্তির মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করে বেকারত্ব দূর করতে হলে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য ।

৪. জাতীয় আয় বৃদ্ধি : বাংলাদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও এর সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

আয়ের সাথে সম্পৃক্ত সপ্তায়, বিনিয়োগ ও উৎপাদন ইত্যাদি বৃদ্ধি পেলে জাতীয় পর্যায়ে একটি সুষ্ঠু অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো যেতে পারে। 

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবমুখী রূপ দেওয়ায় জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

৫. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : খাদ্যঘাটতি বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। প্রতিবছর দেশে খাদ্যঘাটতি থাকে বিধায় বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। 

সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজনের মাধ্যম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায়। সুতরাং দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

৬. মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি : মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

বর্তমানে সরকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির জন্য কতিপয় কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যার সাফল্য হিসেবে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। 

৭. মূলধন গঠন : কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশত হলো সেদেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি। আর তা গঠিত হয় মূলধনের মাধ্যমে। আমাদের দেশে মূলধন গঠনের পরিমাণ খুবই কম। 

আর মূলধনের অভাবে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে মূলধন গঠনের পথ সুগম করা যায়।

৮. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা : বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক ও জনসম্পদ রয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এসব সম্পদের সঠিক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। 

এসব প্রাকৃতিক ও জনসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

৯. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা : অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ সঞ্জয় ও বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যার ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

১০. মুদ্রাস্ফীতি রোধ : মুদ্রাস্ফীতি উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। মুদ্রাস্ফীতি ক্রমবর্ধমান হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়। সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যায় এবং তাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।

১১. নতুন শিল্প স্থাপন ও উৎপাদন বৃদ্ধি : দেশে নতুন শিল্প স্থাপন ও চালু করা, শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পের শ্রেণি নির্ধারণ, কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি চিহ্নিতকরণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। এভাবে পরিকল্পিতভাবে শিল্প স্থাপন করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব।

১২. আর্থসামাজিক উন্নয়ন : দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যথার্থ পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।

১৩. বাণিজ্যিক প্রসার : দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য সম্পদের আন্তর্জাতিক বাজার চাহিদা খুঁজে বের করা, পণ্যের গুণগত মান উন্নত করে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা এবং তা থেকে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয় তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজস্ব প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনার প্রয়োজন।

১৪. কৃষি ও শিল্পোন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় এখানে কৃষির উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিল্পে অগ্রগতি সাধন করাও সময়ের দাবি। এজন্য দরকার যথাযথ পরিকল্পনা।

১৫. অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতা রোধ : অপরিকল্পিত অর্থনীতিতে অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতার ফলে সামাজিক সম্পদের অপব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । সুতরাং অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতা রোধে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা বর্তমান সময়ে উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করে জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের জন্য সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ