পরিকল্পনার উপাদান গুলি আলোচনা করো

পরিকল্পনার উপাদান গুলি আলোচনা করো । পরিকল্পনার উপাদানসমূহ বর্ণনা কর
পরিকল্পনার উপাদান গুলি আলোচনা করো । পরিকল্পনার উপাদানসমূহ বর্ণনা কর

পরিকল্পনার উপাদান গুলি আলোচনা করো । পরিকল্পনার উপাদানসমূহ বর্ণনা কর

  • অথবা, পরিকল্পনার উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ভূমিকা : পরিকল্পনা একটি গতিশীল, যুক্তিগ্রাহ্য, মানসিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রক্রিয়া যা কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য স্থির এবং ঐ লক্ষ্যার্জনের জন্য ভবিষ্যতে করণীয় সবচেয়ে সম্ভাব্য উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করে। 

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয় বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 

এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও তদারকি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন কতকগুলো উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। যে বিষয়কে ঘিরে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সে বিষয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগকে পরিকল্পনার উপাদান বলা হয়।

© পরিকল্পনার উপাদানসমূহ : একটি পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন উপাদান বিদ্যমান থাকে। 

নিম্নে পরিকল্পনার উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. সুযোগ বা সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া : পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রথম উপাদান হলো কোনো সুযোগ বা সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া। সুযোগ বা সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হয়। 

যে সমস্যা বা বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা সৃষ্টি করার পর তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা প্রয়োজন। 

২. প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ : পরিকল্পনার সাথে জড়িত বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্যের প্রধান উৎসগুলো হলো অতীত কাজের অভিজ্ঞতা, অতীতে সমাধানকৃত সমস্যাসমূহ, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ, দাপ্তরিক কাগজপত্র, গবেষণা, প্রতিবেদন ইত্যাদি। তথ্যের উৎসগুলো জোরদার হলে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজটি সমৃদ্ধ হবে।

৩. তথ্য বিশ্লেষণ : সংগৃহীত তথ্যাবলির মধ্যে শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই পরিকল্পনার জন্য গ্রহণ করতে হবে। বিশ্লেষণের জন্য তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস ও সারণীকরণ প্রয়োজন। তথ্য বিশ্লেষণ সঠিক হলে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে। 

৪. উদ্দেশ্য নির্ধারণ : উদ্দেশ্য নির্ধারণ পরিকল্পনার একটি অন্যতম উপাদান। উদ্দেশ্য নির্ধারণ ব্যতীত কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব নয় । কেননা নির্ধারিত উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। 

৫. নীতিমালা তৈরি করা : নীতি হলো একটি মৌখিক, লিখিত বা অন্তর্নিহিত প্রাথমিক গাইড যা কোনো ব্যবস্থাপককে কর্মের জন্য দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে। 

নীতিমালার মাধ্যমে একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পথ সুগম হয়। নীতিগুলো একটি সংস্থার কার্যসম্পাদনের রূপরেখা হিসেবে কাজ করে।

৬. পরিকল্পনা পটভূমি বিবেচনা করা : পরিকল্পনার পটভূমিতে জনসংখ্যার গতি, উৎপাদন ব্যয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণ, মূলধন ও কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ইত্যাদি পরিবর্তনশীল উপাদান থাকে। 

এসব বিষয়সমূহের পূর্বানুমানে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়। কোন পরিস্থিতিতে কেমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটিও পরিকল্পনার পটভূমিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই পরিকল্পনার পটভূমি বিবেচনা করা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

৭. কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ : কর্মপদ্ধতি হচ্ছে একটি পরিকল্পনার প্রাণশক্তি। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কী উপায়ে পরিকল্পনাটি সম্পাদন করবে কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে তার রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি কাজের বিভিন্ন ধাপ বিচারবিশ্লেষণ করে একটি উপযুক্ত কর্মপদ্ধতি স্থির করতে হবে।

৮. বিকল্প কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ : পরিকল্পনার উপাদান হিসেবে বিকল্প কার্যপদ্ধতিকেও বিবেচনা করা হয়। পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মপন্থার গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে যেটি সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হবে সেটিকে বাছাই করে নিতে হবে। কেননা পরিকল্পনার কাজই হলো বিভিন্ন বিকল্প পন্থা থেকে সর্বোত্তম পন্থটিকে নির্ধারণ করা।

৯. বিকল্প কর্মপন্থাসমূহ পর্যালোচনা : চিহ্নিত কর্মপন্থাগুলোর মধ্যে কোনটি অধিক উপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য তা পরীক্ষানিরীক্ষা করা প্রয়োজন। 

একটি বিকল্প আরেকটির তুলনায় শ্রেয়, নাকি নিকৃষ্ট এবং কেন শ্রেয় বা নিকৃষ্ট তা বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। পরীক্ষানিরীক্ষার পর সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপন্থাকে পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়।

১০. গৌণ পরিকল্পনা প্রণয়ন : মুখ্য পরিকল্পনা সহজ ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের সুবিধার্থে কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। 

এর ফলে মুখ্য পরিকল্পনা সফলতা লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হলে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য কয়েকটি গৌণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। 

যেমন— যন্ত্রপাতি ক্রয়, কাঁচামাল সংগ্রহ, শ্রমিক নিয়োগ, উৎপাদন কৌশল, ক্রেতা ইত্যাদি হচ্ছে গৌণ পরিকল্পনা ।

১১. বাজেট নির্ধারণ : পরিকল্পনার অন্যতম উপাদান হলো বাজেট। যেহেতু পরিকল্পনার জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণাদির খরচপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে তাই অর্থসংস্থানের উৎস ও ব্যয়ের খাতগুলোও নির্ধারণ করা দরকার। 

বাজেট আর্থিক এবং অনার্থিক— এ দুই ধরনের হতে পারে। যেমন— একটি ভবন নির্মাণের জন্য ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন । 

এটি আর্থিক বাজেট । কিন্তু ভবনের ছাদ ঢালাই দিতে গিয়ে অনেক বাঁশ, কাঠ, লোহা ও স্টিলের সাটার প্রয়োজন । এটি হচ্ছে অনার্থিক বাজেট । 

১২. পরিকল্পনার সমন্বয় : এটি পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিভাগ তথা গৃহীত সামগ্রিক কর্মসূচি ও অন্যান্য সকল নীতির সাথে সমন্বয় করে থাকে। 

সঠিক সমন্বয়ের অভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সুতরাং পরিকল্পনার আওতায় এ পর্যায়ে সকল বিভাগের সমন্বয় কার্য সম্পন্ন করা হয় ।

13. কর্তব্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ ও বিশ্লেষণঃ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে নির্ধারিত না হলে সকল ব্যবস্থাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

কোন কর্মী কোন কাজ করবে, তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিসীমা কী হবে তা সঠিকভাবে বণ্টন করা অত্যাবশ্যক । 

একটি পরিকল্পনায় অবশ্যই কর্মীর পদ ও যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ ও বণ্টন করতে হবে । 

১৪. পরিকল্পনার মূল্যায়ন : পরিকল্পনার কার্যকারিতা যাচাই করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ উপাদান হচ্ছে এ ব্যবস্থার দ্বারা গৃহীত কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা মূল্যায়ন করা। 

এতে প্রয়োজনে সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও উন্নতর ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয় । 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিকল্পনার উপাদানসমূহকে চিহ্নিত করে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারলে পরিকল্পনাটি সফলতার মুখ দেখবে। 

যেহেতু কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যগুলো ঠিক করা আর সেগুলো অর্জন করার সবচেয়ে ভালো উপায় আগেই ঠিক করে রাখাই পরিকল্পনা সেহেতু পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সংগত উপাদান গ্রহণ করতে হবে । তা না হলে পরিকল্পনার নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ