মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা কর

মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা কর
মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা কর

মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা কর

  • অথবা, মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে নবাব আলীবর্দী খানের শাসনকাল একটি স্মরণীয় অধ্যায়। সামান্য অবস্থা থেকে আলীবর্দী খান তাঁর কর্মজীবন আরম্ভ করেছিলেন। স্বীয় যোগ্যতা, দক্ষতার গুণে তিনি উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেন।

→ মারাঠাদের বিরুদ্ধে আলীবর্দী খানের ব্যবস্থা : আলীবর্দী খানের শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মারাঠাদের বারবার আক্রমণ, তাদেরকে দমন করতে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সেগুলো নিম্নরূপ-

১. কাটোয়া আক্রমণ : মারাঠাদের প্রথম বাংলা আক্রমণের ফলে বাংলার জনসাধারণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছিল। তারা ধন, প্রাণ ও মান রক্ষার জন্য দলে দলে ভাগীরথীর পূর্বদিকে পালাতে থাকে । 

ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য লোপ পায়। এমতাবস্থায় আলীবর্দী খান পাটনা ও পূর্ণিয়া থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে বর্ষার শেষ দিকে কাটোয়া আক্রমণ করেন। 

মারাঠারা সে সময় দুর্গাপূজা উদযাপন করেছিল । আলীবর্দী খানের সৈন্যবাহিনী ভোরবেলা নিদ্রিত মারাঠা সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । ফলে বিনা যুদ্ধে মারাঠারা পালিয়ে যায় ।

২. কটক পুনরাধিকার : কাটোয়া থেকে পলায়নরত মারাঠা সৈন্যদের একত্রিত করে ভাস্কর পণ্ডিত মেদিনীপুর অঞ্চলে লুটপাট চালায় এবং কটক অধিকার করে। এমতাবস্থায় আলীবর্দী খান সসৈন্যে অগ্রসর হন এবং কটক পুনরাধিকার করেন।

৩. পেশোয়া বালাজী রাও-এর সাথে সন্ধি : দিল্লির সম্রাট মারাঠারাজ সাহুকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার যৌথ কর আদায় করার অধিকার দেবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

সাহু নাগপুরের মারাঠারাজ রঘুজী ভোঁসলাকে ঐ অধিকার দান করেছিলেন। এমতাবস্থায় আলীবর্দী খান পেশোয়া বালাজীরাও এর সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন ৷

৪. প্রতারণার আশ্রয় : ১৭৪৩ সালে মারাঠারাজ সাহু রঘুজী ভোঁসাল ও পেশোয়া বালাজী রাওকে ডেকে উভয়ের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে দেন। এই মীমাংসায় আলীবর্দী খান সন্তুষ্ট না হয়ে প্রতারণার আশ্রয়ে এদেরকে পরাজিত করেন।

৫. রঘুজী ভোঁসালকে বাংলা থেকে বিতাড়ন : রঘুজী ভোঁসাল বিদ্রোহী হয়ে বাংলা আক্রমণ করলে আলীবর্দী খান বাংলা থেকে এদেরকে তাড়িয়ে দেন। ফলে কিছু সময়ের জন্য শান্তি ফিরে আসে ।

৬. বারহশহরের যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত : ১৭৪৭ সালের নভেম্বর মাসে রঘুজীর পুত্র জানোজী ভোঁসালের নেতৃত্বে মারাঠারা সংঘটিত হয়ে বাংলা আক্রমণ করে। আলীবর্দী খান বারহ শহরের নিকট সংঘটিত যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন।

৭. মেদিনীপুরে স্থায়ীভাবে শিবির স্থাপন : আলীবর্দী খান ১৭৪৯ সালের মার্চ মাসে উড়িষ্যা আক্রমণ করে এক প্রকার বিনা বাধায় তা পুনরুদ্ধার করেন। মারাঠাদের উচ্ছেদ করার জন্য তিনি মেদিনীপুরে স্থায়ীভাবে শিবির স্থাপন করেন। পরবর্তীতে মারাঠারা পালিয়ে যান।

৮. মারাঠাদের সাথে সন্ধি স্থাপন : উভয়পক্ষ ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে তারা সন্ধি স্থাপন করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মারাঠারা বারবার বাংলা আক্রমণ করে এদেশের জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। আলীবর্দী খান বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদেরকে দমন করেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ