পোষক পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর

পোষক পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর
পোষক পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর

পোষক পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর

  • অথবা, পোষক-পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লেখ।
  • অথবা, পোষক-পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পোষক-পোষ্য সম্পর্কের ধারণা সুপ্রাচীন। প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ সম্পর্ক বিদ্যমান। ইউরোপে মধ্যযুগে এ সম্পর্কের ধারণার বিকাশ লাভ করে। 

গ্রিস, রোম, ইতালি প্রভৃতি রাষ্ট্রে প্রথমে পোষক- পোষ্য ধারণার বিকাশ লাভ করে। এখানে দুধরনের শ্রেণি লক্ষ করা যায়। 

যেখানে একটি শ্রেণি অপর শ্রেণিকে সাহায্য করে । বিনিময়ে এক শ্রেণি অপর শ্রেণি থেকে সুযোগ সুবিধা লাভ করে ।

● পোষক-পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে পোষক-পোষ্য সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো :

১. রাজনৈতিক নেতা ও জনগণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতা ও তার অনুসারীদের মধ্যে পোষক-পোষ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রামীণ রাজনীতিতে পোষক শ্রেণিরা জাতীয় নেতার ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। 

স্থানীয় জনগণ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি, সরকারি অফিস আদালতে যোগাযোগ; সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা লাভ করে।

২. প্রতিষ্ঠান কর্মী ও স্থানীয় গ্রাহক : পোষক-পোষ্য সম্পর্কের অন্যতম দিক হলো প্রতিষ্ঠান কর্মী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সম্পর্ক। বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্থানীয় সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন— ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, এনজিও ইত্যাদি কাজ করে। 

এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও অফিসাররা স্থানীয় শিক্ষিত, প্রভাবশালী, মাতব্বর, সম্পদশালী নানান ধরনের ব্যক্তিবর্গের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তাদের নানামুখী কাজে সহায়তা করে থাকে। 

৩. স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি ও তার অনুসারীগণ : বাংলাদেশে পোষক-পোষ্য সম্পর্কের অন্যতম দিক হলো স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি ও তার অনুসারীগণের মধ্যে সম্পর্ক। 

স্থানীয় নির্বাচনকালীন তার অনুসারীগণ নির্বাচনে প্রচারণা, তফশিল নির্ধারণে সহায়তা, ভোট সংগ্রহে সহায়তা, মিছিল, মিটিং, কনফারেন্স প্রভৃতি কার্যে সহায়তা করে থাকে। 

এভাবে সহায়তা করার পর প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসলে পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে ।

৪. রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি : বাংলাদেশে পোষক-পোষ্য সম্পর্কের অন্যতম দিক হলো রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি। এ দুই শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসায়িক শ্রেণির কাছে নির্বাচনকালীন আর্থিক সুবিধা লাভ করে। 

নির্বাচনে এসব অর্থ তারা ব্যয় করে থাকে। পরবর্তীতে যখন রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচিত হয়ে আসে তখন তারা ঐ ব্যবসায়িক শ্রেণিকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে ।

৫. ভূস্বামী ও ভূমিহীন পোষক-পোষ্য সম্পর্ক : বাংলাদেশে গ্রামীণ রাজনীতির ধারায় ভূস্বামী ও ভূমিহীনদের মধ্যে পোষক- পোষ্য সম্পর্ক দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ভূস্বামী তার অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনকে বর্গা চাষের আওতায় দিয়ে থাকে । 

এক্ষেত্রে ফসল ঘরে তোলা হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল অথবা অর্থ ভূস্বামী নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন ও ভূস্বামী উভয়ই লাভবান হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পোষ্য-পোষক সম্পর্ক তাদের নিজস্ব স্বার্থের দিক লক্ষ রেখে গড়ে ওঠে। একদিকে পোষ্য যেমন পোষককে সাহায্য সহযোগিতা করে, অন্যদিকে তারা আবার লাভবানও হয়। 

রাজনৈতিক নেতা, সম্পদশালী ব্যক্তি, ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ এখানে পোষক হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, সমাজের অন্য অংশের লোকজনেরা নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ