সামাজিক বনায়নের পূর্বশর্তগুলো কী কী। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলার পূর্বশর্ত কী কী

সামাজিক বনায়নের পূর্বশর্তগুলো কী কী। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলার পূর্বশর্ত কী কী
সামাজিক বনায়নের পূর্বশর্তগুলো কী কী। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলার পূর্বশর্ত কী কী

সামাজিক বনায়নের পূর্বশর্তগুলো কী কী। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলার পূর্বশর্ত কী কী

উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীতে সবুজ গাছপালা প্রাণের ধারক ও বাহক। মানুষ ও বনায়ন এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের দেশে মানুষের সাথে যে ধরনের বনায়ন গড়ে ওঠে তার বেশির ভাগই সামাজিক বনায়ন নামে পরিচিত। 

গাছপালা CO2 শোষণ করে এবং O ত্যাগ করে এতে পরিবেশ নির্মল থাকে। আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় গাছপালা অনেক কম। 

সরকারি হিসাব মতে আমাদের দেশে ১৭.০২% বনভূমি রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। 

এর কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত গ্রামাঞ্চলে সামাজিক বনায়ন দেখা যায় কারণ গ্রামে পতিত জমির পরিমাণ বেশি থাকে। 

যেসব মাটিতে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করা যায় না সেসব পতিত জমিতে সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা যায় । আমাদের দেশের কৃষকেরা সাধারণত এ ধরনের বনায়ন তৈরি করতে ভালবাসে ।

→ সামাজিক বনায়নের পূর্বশর্ত : আমাদের দেশের সকল কাজের জন্য কিছু পূর্বশর্ত উল্লেখ থাকে। কারণ প্রতিটি কাজের একটি উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট থাকবে এটা স্বাভাবিক তাই সামাজিক বনায়ন তৈরি করতে হলে এর কিছু পূর্বশর্ত থাকবে। নিম্নে সামাজিক বনায়নের কিছু পূর্বশর্ত আলোচনা করা হলো :

১. জনসচেতনতা তৈরি : যেকোনো ধরনের বনায়নের উপর নির্ভর করে সেদেশের পরিবেশগত অবস্থান ও আবহাওয়া এবং জলবায়ু । কারণ যেদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বনভূমি থাকে সে দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। 

আমাদের দেশের প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি অনেক কম। তাছাড়া মানুষের অসচেতনতার কারণে তারা অনেক গাছ কেটে ফেলে। 

বনায়নের যে গুরুত্ব অপরিসীম তা জনসাধারণের মাঝে জানাতে হবে। এজন্য সমাজের যারা সচেতন ব্যক্তি তাদেরকে এ বিষয়টা তদারকি করা দরকার। 

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাই তারা এসব বনায়নে আগ্রহী হবে না। এজন্য তাদেরকে, যথার্থ জ্ঞান দানের মাধ্যমে বনায়ন তৈরির কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত করতে হবে। 

সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বেড়ে যাবে।

২. উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা : আমাদের দেশে যে সামাজিক বন গড়ে ওঠে এর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। 

আর এরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না। কারণ এরা বেশির ভাগই নিরক্ষর। আমাদের দেশে প্রতিটি পরি গ্রামে যদি সামাজিক বনায়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তবে গ্রামের মানুষ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝতে পারবে। 

তারা সবাই এ ধরনের বনায়ন তৈরিতে আগ্রহী হবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে। তারা কৃষির মতই এ বনায়নের যত্ন নিতে পারবে। 

এজন্য আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন NGO কে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। তবে এজন্য বন ও পরিবেশবিদদের সাথে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশে আয়তন ও জনসংখ্যার অনুপাত বেশ সাংঘর্ষিক। তবুও আমাদের পরিবেশ অনেকটা নির্মল। আরো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা যেত। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন আরো বাড়ানো যাবে। তাই পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

৩. জনগণের চাহিদা পূরণ : আমাদের দেশের জনগণ চাহিদা পূরণের উপর নির্ভর করে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি। কারণ গ্রামের মানুষ সাধারণত জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ বনের উপর নির্ভরশীল এবং বিশেষত সামাজিক বনায়নের উপর। 

তাছাড়া বাড়ির আসবাবপত্র, খাদ্য সংগ্রহের জন্য অনেক সময় মানুষ সম্পূর্ণভাবে বনায়নের উপর নির্ভর করে। 

যেমন- অনেক কৃষক নিজ জমিতে ফলের বাগান যেমন, আম, কাঁঠাল, লিচু এর বাগান গড়ে তোলে। এটি তার জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি তার পরিবারের জ্বালানি উপকরণ সরবরাহ করে থাকে।

৪. উপযুক্ত কলাকৌশল প্রয়োগ : যেহেতু আমাদের দেশ উন্নত প্রযুক্তিতে পদার্পণ করতে পারেনি। তাই যথাযথ কৌশলের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। 

কারণ আধুনিক পদ্ধতিতে বনায়ন না তৈরি করলে আশানুরূপ সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা যাবে না। কারণ লোনা এলাকায় লোনা পানির বনায়ন অর্থাৎ যেসব গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে সেগুলো রোপণ করতে হবে। তাছাড়া যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেসব এলাকায় জলাবদ্ধ সহিষ্ণু গাছ রোপণ করতে হবে। 

৫. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা : আমাদের দেশের উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনায় যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকে তবে সেটি আরো বৃদ্ধি পাবে। 

আর এতে মানুষ আগ্রহী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। আমাদের দেশে সাধারণত সামাজিক বনায়ন তৈরি করলে এর জন্য অবশ্যই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে। 

কারণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা যদি থাকে তবে সাধারণ মানুষের জন্য এটি হবে পথ প্রদর্শক। তাই এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা জরুরি ।

উপসংহার : উপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক বনায়ন একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের পরিবেশগত উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন করার লক্ষ্যে সামাজিক বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। 

কারণ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর CO2 কমে যায় আর পরিবেশ নির্মল থাকে। তাছাড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গরিব। তারা দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ