সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর । সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো কি কি

সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর । সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো কি কি
সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর । সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো কি কি

সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর । সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো কি কি

  • অথবা, সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো সংক্ষেপে লিখ । 
  • অথবা, সামাজিক বনায়ন যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয় তা সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : মানুষ আদিকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ মানুষ পরিবেশের ধারক ও বাহক। 

মানুষ আদিকালে বনাঞ্চল থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। আজও মানুষ বনের সাথে সম্পৃক্ত। তবে আদিকালের মত বেশি নির্ভরশীল ছিল না। 

মানুষের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান প্রকৃতির সাথে বনের। কারণ গাছ হলো প্রকৃতির একটা অংশ। মানুষ এখন তার নিত্য চাহিদা পূরণ করার জন্য বনভূমি গড়ে তুলেছে কৃত্রিমভাবে। 

এটি সামাজিক বনায়ন নামে পরিচিত। আমাদের দেশে সামাজিক বনায়ন এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একথা সত্য যে, সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি না হলে আমাদের দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ অনেক কমে যেত।

- সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য : সামাজিক বনায়ন কতিপয় উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে। কারণ এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যায় না। 

নিম্নে সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্যগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :

১. গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা : সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করা হলে গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কারণ গ্রামের মানুষ সাধারণত নিজ জমিতে চাষাবাদ বা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। 

আর সামাজিকভাবে বনায়ন তৈরি করতে হলে অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এতে অনেক জনবলের প্রয়োজন পড়ে।

২. গ্রামীণ মানুষের আয় বৃদ্ধি : আমরা জানি, একটি গাছ একটি ইন্স্যুরেন্সের মতো কাজ করে। তেমনি সামাজিক বনায়নে অনেক গাছ এক সাথে রোপণ করা হয়। 

তাই এটি অনেকগুলো ইন্স্যুরেন্সের' মতো কাজ করে। আমাদের দেশে অনেক মানুষ দরিদ্র, তাই এটি বেশি ফলপ্রসূ হয় ।

৩. খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি : আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে । আর গ্রামের মানুষ মূলত নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করে। 

আর বনায়ন বিভিন্নভাবে করা যায় যেমন অনেকেই ফলের বাগান করে। এতে দেখা যায়, তার খাদ্য সরবরাহ বেড়ে যায়।

৪. শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ : গাছপালা শিল্পের কাঁচামাল তৈরির জন্য বেশ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের হার্ডবোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, মিল ও দিয়াশলাই কারখানায় বেশির ভাগ কাঠ উপজাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৫. পশুখাদ্য সরবরাহ : আমাদের দেশে সাধারণত গৃহপালিত পশু যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া মহিষ ইত্যাদির জন্য গাছপালার পাতা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কাঁঠালপাতা, বটপাতা ইত্যাদি। 

তাছাড়া অনেক গাছ আছে যার পাতা পশুখাদ্য হিসেবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে রপ্তানি করা হয়। তবে সামাজিক বনায়ন তৈরির উৎসাহ মানুষের মনে বেড়ে যায় ।

৬. দরিদ্র জনগণের খাস জমির ব্যবহার : বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আবার যারা ভূমিহীন তারা রেললাইনের পাশে বসবাস করে। 

অনেক সময় এসব খাস জমিতে মানুষ গাছপালা রোপণ করে থাকে। এতে দেখা যায় মানুষের জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয় আর মানুষের মাঝে উৎসাহ অনেক বেড়ে যায় ।

৭. গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি : গাছপালা রোপণের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের গ্রামের মেয়েরা অনেক অসহায় । তাই তারা সব কাজের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক বনায়ন একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। 

তবে বনজ সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে যৌথ বা একক প্রচেষ্টায় সামাজিক বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সামাজিক বনায়নের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ