টেকসই উন্নয়নের শর্ত সমূহ কী কী । টেকসই উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ কি

টেকসই উন্নয়নের শর্ত সমূহ কী কী। টেকসই উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ কি
টেকসই উন্নয়নের শর্ত সমূহ কী কী। টেকসই উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ কি

টেকসই উন্নয়নের শর্ত সমূহ কী কী। টেকসই উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ কি

  • অথবা, টেকসই উন্নয়নের শর্তাবলি আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : টেকসই উন্নয়ন বা Sustainable Development বর্তমান সময়ের ব্যাপক আলোচিত পরিবেশগত ডিসকোর্স। 

এই প্রত্যয়টি আশির দশকে পরিচিতি লাভ করে মানুষের সীমাহীন ও অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ শোষণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য। 

টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে পরিবেশ সচেতনতার ফসল যা পার্থিব পরিবেশ, এর সম্পদ ও মানুষের সীমাহীন চাহিদার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবাহ সৃষ্টি করে ।

- টেকসই উন্নয়নের শর্তসমূহ : পার্থিব পরিবেশকে কোনোক্রমেই বিঘ্নিত না করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মানব সমাজের সার্বিক চাহিদাপূরণের উপযোগী গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ব্যবস্থাকেই টেকসই উন্নয়ন বা Sustainable Development বলে। 

নিম্নে টেকসই উন্নয়নের শর্তগুলো আলোচনা করা হলো :

১. উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিক্ষালাভ ও জীবিকা অর্জনের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হয়।

২. দারিদ্র্যের তীব্রতা হ্রাস : শ্রম নিবিড় অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যবস্থা চালু করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্যের তীব্রতা হ্রাস করতে হবে।

৩. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহজ রীতিনীতি প্রবর্তন করা : আন্তর্জাতিক স্তরে সরল আমদানি রপ্তানির নীতি প্রবর্তন করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে/শুল্ক হ্রাস করতে হবে। 

উন্নয়নশীল দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ঋণের বোঝা হ্রাসের জন্য অল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প আয় বিশিষ্ট দেশগুলোতে মূলধন বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বীমা ও অন্যান্য আর্থিক ব্যবস্থা নিতে হবে ।

৪. জাতীয় পর্যায়ে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা : জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সম্পদ যেমন পানি, বনজ, কৃষিজ প্রভৃতি সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতীয় স্তরে পানি সম্পদের বন্টন ও যোগান ব্যবস্থা সমীক্ষা, বন নিধন রোধ, সামাজিক ও কৃষিজ বনভূমি গড়ে তোলা, কৃষিজমি মাটি সংরক্ষণ, জমি ব্যবহার সংক্রান্ত জ্ঞান বৃদ্ধি প্রভৃতি সম্প্রসারণ করতে হবে।

৫. শক্তি সংরক্ষণ : শক্তি সংরক্ষণ ও শক্তি সম্পদের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। শক্তি উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ রোধের এবং সৌর, বায়ুশক্তি, পানি বিদ্যুৎ, জৈব গ্যাস প্রভৃতি নবায়নযোগ্য পূরণশীল শক্তিগুলো উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

৬. উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা : পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির উপর শুল্ক রহিত ও রহিত কর হ্রাস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

অপচয়হীন সম্পদ উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পুঁজি সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক বাজার দ্রব্যমূল্য দ্রুত হ্রাস বৃদ্ধি রোধের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সম্পদ উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, টিকে থাকার জন্য উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ অবক্ষয় রোধ করতে টেকসই উন্নয়ন ধারণার প্রবর্তন হয়েছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে নানা ধরনের পরিবেশ ধ্বংসলীলা মানুষ যখন নিয়মিত প্রত্যক্ষ করছিল ক্রমশ পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা স্বরূপ টেকসই উন্নয়ন ধারণাটি পরিচিতি লাভ করে যা পরিবেশকে বিঘ্নিত না করে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ