বাংলা লোকসাহিত্যের ধাঁধা সম্পর্কে টীকা লেখ
বাংলা লোকসাহিত্যের ধাঁধা সম্পর্কে টীকা লেখ ।
![]() |
বাংলা লোকসাহিত্যের ধাঁধা সম্পর্কে টীকা লেখ । |
উত্তর: ধাঁধা ঃ প্রকৃতি রহস্যময়ী। সে পরোক্ষে থেকে রহস্যময়ী ভাষায়, আকারে ইঙ্গিতে নিজেকে প্রকাশ করে থাকে। এই রহস্যময়ী প্রকৃতির সাথে মানুষের আছে একটা অটুট যোগসূত্র। এজন্য মানুষও রহস্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পায় আনন্দ, রসে হয় সিক্ত, অপরকেও রস পরিবেশন করে। ধাঁধা এই রস রহস্যেরই প্রকাশ।
মানুষের মনে বস্তু, প্রাণী বা ব্যক্তিসম্পর্কিত পরস্পরের সংযোগ, তুলনা এবং সাদৃশ্যবোধ থেকেই ধাঁধার জন্ম। রূপকের সাহায্যে জিজ্ঞাসার আকারে কোন একটি ভাব সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও চিন্তার অনুশীলনের মাধ্যমে ধাঁধায় রূপায়িত হয়েছে। অল্প কয়টি কথায় কবিতার আকারে কাউকে প্রশ্ন করলে ধাঁধা হিসেবে বিবেচিত হয়। দৈনন্দিন জীবন থেকে ধাঁধার বিষয়বস্তু আহরিত হয়।
আগ থেকে জানা না থাকলে ধাঁধার জবাব দেওয়া কঠিন। ধাঁধায় বাহ্যিক কোন কথার অন্তরালে লুকিয়ে থাকে গভীর কোন বিষয়বস্তু। এগুলো অগ্রবর্তী মানব সমাজের পরিণত মনের সৃষ্টি। বুদ্ধি দীপ্তি, সৌন্দর্যবোধ, রসিকতা, চিন্তার উৎকর্ষ সাধন, মননশীলতার পরিচয় দান, প্রতীক ব্যবহারের প্রবণতা প্রভৃতি ধাঁধার মৌলিক বৈশিষ্ট্য ।
ছড়া-প্রবাদের ন্যায় ধাঁধাতেও ছন্দ থাকে। কোন একটি বস্তু বা প্রাণীকে বোঝানোর জন্য ছন্দোবদ্ধ ভাষায় অন্য একটি বস্তু বা প্রাণীর তুলনা বা সাদৃশ্যকে প্রচ্ছন্নভাবে বর্ণনা করা হয়, সেই বর্ণনাকেই ধাঁধা বলে। ধাঁধা একটি মাত্র বাক্যে সম্পন্ন হতে পারে, আবার একাধিক বাক্যেও হতে পারে, তবে তার আকৃতি বৃহৎ নয়। ধাঁধা মাত্রেই বর্ণনার পর প্রশ্ন থাকে। এভাবেই যে প্রশ্ন করে এবং যে উত্তর দেয় উভয়েই একটি রস উপভোগ করে। এখানেই ধাঁধার সাহিত্য মূল্য।