ইউসুফ জোলেখা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর
‘ইউসুফ জোলেখা' সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
![]() |
ইউসুফ জোলেখা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর |
উত্তর: মধ্যযুগের বাংলা কাব্যের যে ধারায় মুসলমান কবি কর্তৃক প্রেম-সৌন্দর্য, মানব- হৃদয়বৃত্তি, চিত্তবিলাস ও মানস সম্ভোগের লীলা প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনন্য ধারা রোমান্টিক উপাখ্যান। ইউসুফ জোলেখা' রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
পবিত্র কুরআন ও বাইবেলে বর্ণিত ইউসুফ ও জোলেখার প্রণয় কথাকে ভিত্তি করে নানা শাখা-প্রশাখার সমন্বয়ে এ কাব্য রচিত।বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে (১৩৯৩-১৪০৯) 'ইউসুফ জোলেখা' রচনা করেন।
এ কারো সুপ্রাচীন প্রণয় কাহিনী উপজীব্য করা হয়েছে। ফেরদৌসী এ নামে রোমান্স রচনা করেছিলেন। বাংলায় "ইউসুফ জোলেখা' ফেরদৌসীর রোমান্স অনুসরণেই রচিত।
শাহ মুহম্মদ সগীর ছাড়াও আব্দুল হাকিম, গরীবুল্লাহ, গোলাম সফাত উল্লাহ্, সাদেক আলী ও ফকির মোহম্মদ ইউসুফ জোলেখা' রচনা করেছেন, তবে এঁদের মধ্যে সগীরের কারাই শ্রেষ্ঠ। কবি দেশি ভাষায় ধর্মীয় উপাখ্যান বর্ণনা করতে চাইলেও তা মানবীয় প্রেমকাহিনী হিসেবেই রূপলাভ করেছে।
তবে ফেরদৌসীর মত সগীরের কাব্যেও ইউসুফ জোলেখা ভাবুক-ভাবিনী অর্থাৎ আত্মা ও পরমাত্মা। তবে সগীরের কৃতিত্ব যে, অবলীলাক্রমে তিনি গল্প লিখেছেন। কাব্যে কবিপ্রতিভার মৌলিক নিদর্শন রয়েছে। এ কাব্যের কাহিনীর জনপ্রিয়তা তিন হাজার সাতশ বছরের। এই সুবিশাল কাব্যটি সত্তরটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।
ধর্ম প্রচারই নবীর প্রধান দায়িত্ব জ্ঞান করে কবি স্বধর্মপ্রচারার্থে ইউসুফের দিগ্বিজয় কাহিনী। যোজনা করেছেন। ইউসুফের অনন্য সততা, সংযম, তিতিক্ষা ও ক্ষমা এবং রূপ বহির কারণে জোলেখার যে কামস্পৃহা জেগেছে, তা শেষ পর্যন্ত জোলেখার নিজেকে পুড়িয়ে ঘাঁটিত্বে উত্তীর্ণ করে পবিত্রতায় উপনীত হওয়ায় কাব্যে ধর্মীয় মাহাত্ম্য লাভ করেছে।
চির দুঃখিনী, বিরহিণী জোলেখার বিরহবোধ এ কাব্যকে প্রেমকাব্যের মর্যাদা দিয়েছে। তদুপরি রূপ ও প্রকৃতির বর্ণনাকৌশল এ কাব্যের একটি অন্যতম দিক। প্রকৃতি বর্ণনায় কবির কবিত্ব প্রশংসনীয়। তাঁর ভাষা প্রাচীন কিন্তু মার্জিত। বর্ণনার মধ্যে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য গতি এনেছেন।
তাঁর সত্তর অধ্যায়ের কাব্যের কোথাও কষ্টকল্পনা বা জড়তার আভাস নেই। কাব্যটির কাহিনী বিদেশি হলেও কাব্যটিতে বিদেশি আবহ নেই বললেই চলে। বাংলার আবহই এ কাব্যের প্রাণ।
কবি স্বীকার করেছেন যে, 'প্রেমরসে ধর্মবাণী কহিমু ভরিয়া'। ইউসুফ জোলেখাকে ভাবুক- ভাবিনী করে তুললেও কবির প্রতিশ্রুত প্রেমরসে ধর্মবাণীর স্থলে বাস্তবত হয়েছে প্রেমরসে মানববাণী। এখানেই এ কাব্যের মৌলিকত্ব।