মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।


উত্তর: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগের একজন শ্রেষ্ঠ কবি। ষোল-সতেরো শতকের সভিলগ্নের কবি মুকুন্দরাম এ যুগের পাঠকেরও প্রিয়। তিনি শহর সোলায়মানাবাদ তথা সেলিমাবাদে গোপীনাথ নন্দী নিয়োগীর তালুকে তাঁর প্রজারূপে বর্ধমানে দমিন্যা গ্রামবাসী ছিলেন। 
মাহমুদ শরীফ ডিহিদারের উৎপীড়নের ফলে কবি বাস্তু ত্যাগ করেন। উড়িষ্যার অন্তর্গত ব্রাহ্মণভূমির শাসনকেন্দ্র আরড়ায় সামন্ত বাঁকুড়া রায় তাঁকে আশ্রয় দেন। সামন্তপুর রঘুনাথ রায়ের শিক্ষক নিযুক্ত হন।

মুকুন্দরাম আগে থেকেই কাব্যচর্চা করতেন। পণ্ডিত কবি বলেই রঘুনাথের রাজত্বকালে রঘুনাথের আগ্রহেই মুকুন্দরাম 'চণ্ডীমঙ্গল কাব্য' রচনা করেন। সম্ভবত রঘুনাথ রায়ই তাঁকে কঙ্কণভূষিত করে 'কবিকঙ্কণ' উপাধি দান করেন।

কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী পাঠকনন্দিত কবি। কবির অনন্যতা তাঁর বাস্তব জীবন ও প্রতিবেশ চেতনায়; ব্যক্তির ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরণের বাস্তবনিষ্ঠ বাকচিত্রাঙ্কণে; গৃহগত জীবনে নারীর সুখ-দুঃখ, ঈর্ষা-অসূয়া, কাম-প্রেম প্রভৃতির সূক্ষ্ম রূপায়ণে; নিম্নবর্ণের ও মধ্যবিত্তের মানুষের জীবিকার গরজে অবলম্বিত ছল-চাতুরীর ও ধূর্ততার বিচিত্র রূপ অঙ্কনে। 

সবাই তাকে সেকালের ঔপন্যাসিক ভাবেন। অর্থাৎ এ যুগে জন্মালে তিনি একজন ঔপন্যাসিক হতেন বলে অনেকের ধারণা। তাঁর 'কালকেতু'তে সে যুগের সমাজের নর- নারীর সুখ-দুঃখ, বেদনা, ব্যর্থতা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। 

তখনকার সামাজিক রীতি-নীতি, বৃত্তি-ব্যবসা, আচার-অনুষ্ঠান, ধর্ম-কর্ম অত্যন্ত বাস্তবতার সাথে তিনি তুলে ধরেছেন। ফুলুরীর দারিদ্র-দুঃখ বর্ণনা করে কালকেতুর অবয়ব, শক্তি ও সাহসের চিত্র তুলে ধরে, মুরারিশীলের কাপটা ও অসততা এবং ভাড়দত্তের খলতা ও ধূর্ততা দেখিয়ে, আর ফুরার সারলা ও বিধিঃ সপত্নীর পীড়নচিত্র নিয়ে পাঠককে মুগ্ধ করেছেন। 

মুকুন্দরামের 'কালকেতু উপাখ্যানে'র আখেটিক খণ্ডই শ্রেষ্ঠ। সমাজ-সংস্কৃতি, রাষ্ট্র-প্রশাসন, প্রজার দায়িত্ব, অধিকার ও অবস্থা, বুদ্ধিজীবীর কর, বেনেদের শুভ, চাষাবাদ ও খাজনা, নগর পত্তন ও বিন্যাস এবং কাছারি কর্মচারী, সৈন্য যুদ্ধ সবই ব্যাধ কালকেতুর রাজা হওয়ার অনুষঙ্গে রচিত এবং তা বাস্তবানুগ। 

এসবের মধ্য দিয়ে মুকুন্দরাম বাস্তবতার তথা সমকালীন সমাজের সমস্যার ও মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-যন্ত্রণা প্রভৃতির ভাষ্যকার কবি

বলে চিহ্নিত ও প্রশংসিত।

মুকুন্দরাম অঙ্কিত মুরারিশীল, ভাড়দত্ত, ফুল্লরা, লহনা, খুল্লনা এবং চণ্ডী চরিত্রই প্রমাণ করে যে, কবি তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লোকের কর্ম ও আচরণ প্রত্যক্ষ করতেন। এ অভিজ্ঞতা ছিল বলেই চরিত্রগুলো তাঁর স্বদুষ্ট ও সুসৃষ্ট হয়েই বিশিষ্ট ও জীবন্ত হয়েছে। 

তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রয়েছে সমাজ, ব্যক্তি, প্রকৃতি, ঘটনা, চরিত্র বর্ণনের প্রাঞ্জলতায় ও স্পষ্টতায়। স্বল্পকথায়, বাকপ্রতিমা নির্মাণ এবং উদ্দিষ্ট বক্তব্যের অভিব্যক্তিই তাঁর কবিশক্তির পরিচায়ক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ