নিরঞ্জনের রুম্মা উম্মা কী
নিরঞ্জনের রুম্মা/উম্মা কী?
![]() |
| নিরঞ্জনের রুম্মা/উম্মা কী? |
প্রথমাংশে পূজার বিষয় এবং দ্বিতীয়াংশে ধর্মের অর্চনা, ব্রত নিয়ম, উপাচার প্রভৃতি সবিস্তারে বর্ণিত। এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আমরা ধর্মাচারের সাথে সাথে এগুলো থেকে প্রসারমান প্রবল ব্রাহ্মণ্য সমাজের প্রতি বিলুপ্ত প্রায় বৌদ্ধ সমাজের ঘৃণা, ক্ষোভ ও বিদ্বেষের তীব্রতা অনুভব করি।
ব্রাহ্মণ্য সমাজের ঘৃণা এবং পীড়নপুষ্ট বিলুপ্ত প্রায় বৌদ্ধ সমাজ প্রতিবাদ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের সামর্থ্য হারিয়েছে তখন। তাই তারা শত্রুর শত্রুকে বন্ধু মনে করে। তাই বৌদ্ধেরা তুর্কী বিজয়কে আশীর্বাদরূপে জেনে হিন্দুর পরাজয়ে ও দুর্দশীয় উল্লাস বোধ করে এবং পরোক্ষে প্রতিশোধ বাঞ্ছা চিরতার্থ করে।
(ব্রিটিশ যখন মুসলমানের কাছ থেকে এ দেশের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তখন হিন্দুরাও উৎসিত হয়েছে।) নির্জিত ব্যক্তির বা জাতির মনোভাব এমনই হয়। তের-চৌদ্দ শতকেও নির্জিত বৌদ্ধদের সেই একই মনোভাব কাজ করেছে তুর্কী বিজয়কালে। পরকে ডেকে ঘরের শত্রুকে জব্দ করার নীতি দুর্বল মানুষের নতুন নয়।
নিরঞ্জনের রুমার বৌদ্ধরা হিন্দুদেরকে নিজেরা জব্দ করতে না পারায়, তুর্কীরা যখন হিন্দুদেরকে জব্দ করেছে- তখনই তারা আনন্দিত হয়েছে। নিরঞ্জনের রুমায় নির্জিত মানুষের এই মনোভাবের বিষয়টি চিত্রিত হয়েছে-
অন্যত্র-
দক্ষিণা মাগিতে যা এ যার ধরে নাহি পা এ
শাপ দিয়া পোড়া এ ভুবন।
মালদহে লাগে কর ন চিনে আপন পর জালের নহিক দিশপাশ
বলিষ্ঠ হই৷ বুড় দশবিশ হৈয়া জড় সন্ধমীরে কর এ বিনাশ।
ব্রাহ্মণের জাতি ধ্বংস হেতু নিরঞ্জন সাহাইলে জাজপুরে হইয়া যবন। দেউল দেহারা ভাঙ্গে গো হাড়ের ঘা-এ
হাতে পুথি করা কত দেয়াসি পালা এ
এখানে লক্ষণীয় যে, তুর্কী যোদ্ধারা অর্থাৎ মুসলমানেরা ব্রাহ্মণের জাতি নাশ করছে। গরুর হাড় দিয়ে তাদের মন্দির ভেঙ্গে ফেলছে। ব্রাহ্মণেরা পুঁথি পত্র নিয়ে পালাচ্ছে। এখানে আরও আছে যে, ব্রাহ্মণের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে তা নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দূরে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে। রুমার এক অংশে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং মুসলিম সমাজের সাথে আপোষের মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে।
নিরঞ্জনের কথায় এদেশে বারে বারে পরাজিত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিজয়ী সম্প্রদায়ের উপরকার মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে।
.png)