পিতার উদ্বন্ধনে মৃত্যু হইয়াছে কেন উদ্বন্ধন আলোচনা কর
পিতার উদ্বন্ধনে মৃত্যু হইয়াছে কেন উদ্বন্ধন আলোচনা কর
![]() |
| পিতার উদ্বন্ধনে মৃত্যু হইয়াছে কেন উদ্বন্ধন আলোচনা কর |
উত্তর: স্বরপুর গ্রামের সম্পন্ন কৃষক গোলকবসু। স্ত্রী, পুত্র-পুত্রবধূসহ তার সংসার যেন চাঁদের হাট। গোলকবসু পরোপকারী নিরীহ লোক, সে সাতে পাঁচে নেই। সে চির ঘরকুনো মানুষ, গ্রামের বাইরে নিমন্ত্রণ রক্ষার্থেও সে যায় না।
নিজের ঘরে ছাড়া তার ঘুমই হয় না, আতপ চালের ভাত খায়, বড় বউমা তার মায়ের মত, তার হাতেই খাওয়া চলে। এমন লোককে নীলকরেরা ফৌজদারিতে জড়িয়েছে। তার ছেলে নবীন মাধব নীলকরদের অত্যাচারে কৃষকদের পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ করে।
পুত্র নবীন মাধবকে জব্দ করতে নীলকরেরা গোলকবসুকে ফৌজদারিতে জড়িয়েছে। নীলকরেরা গত বছর তার ৫০ বিঘা জমির নীলের টাকা পরিশোধ করে নি, তবুও সে নীলকরদের সাথে বিবাদে না গিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে নির্বিবাদে নীল চাষে সম্মত হয়েছে।
ছেলে নবীন মাধবকে বুঝিয়েছে যে তাদের অন্য আয়ে সংসার চলে যাবে, ফলে বিনা পয়সায় নীল চাষ করলেও যেহেতু অন্নাভাব হবে না, তাই নীলকরের সাথে ঝামেলায় যেতে চায় নি। তবুও তার শেষ রক্ষা হলো না।
তার ছেলে বিন্দু মাধব শিক্ষিত, কলকাতায় থেকে বাবার জামিনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে নবীন মাধব প্রচুর পয়সা জোগাড় করে এনেছে বাবার মুক্তির জন্য, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীলকরদের দাসানুদাস আইনরক্ষকেরা গোলকবসুর জামিন দিতে দেয় নি।
গোলকবসু কারও সাথে কোন বিবাদ বিসম্বাদ করে না, নীলকরদের বাঘের মত ভয় পায় সে ইজ্জতওয়ালা কৃষক। ফলে জামিন না পাওয়ায় তার মাথা হেট হয়েছে। জামিন না হওয়ার কথা শোনার পর থেকে তার চোখ দিয়ে জল ঝরতে শুরু করেছে, তা আর বন্ধ হয় নি।
কারাগারে সে নীরব, নিথর-নিস্তব্ধ । দুশ্চিন্তায় তার কলেবর শীর্ণ হয়েছে। মৃতপ্রায় পিঞ্জরাবদ্ধ কপোতের মত গোলকবসু কারাগারে নিথর হয়ে পড়ে আছে। বাবার এ অবস্থা দেখে পুত্র বিন্দু মাধব বিমর্ষ ও বিষণ্ন। চারদিন হয় বাবা উপবাসী।
পুত্র বিন্দু মাধবকে জামিনের চেষ্টার সুযোগ না দিয়ে শেষে লজ্জায় আহত গোলকবসু গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার মধ্য দিয়ে তার সমস্ত লজ্জা নিবারণ করেছে এবং সাথে সাথে চির নিরীহ মানুষটি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নীলকরদের দুঃশাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে চির বিদায় নিয়েছে।
