সরহপা-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধর
সরহপা-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধর।
.png)
সরহপা-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধর।
উত্তর: প্রাচীন যুগের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদ গ্রন্থটিতে মোট তেইশ ন কবির সাড়ে ৪৬টি পদ রয়েছে। এদের মধ্যে সর্বৈব বিচারে সরহপাই প্রধান পদকর্তা চর্যাপদের সম্পাদক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সরহপার অনেকগুলো নাম দিয়েছেন সরোহবন্ধ, সরোজবন্ধ, পদ্মাবত্ত, রাহুলভদ্র।
কারো কারো মতে সরহ'র জন্ম হয়েছিল পূর্ব ভারতের রাগণী নামের এক গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্মণ, আর মাতা ছিলেন জনৈকা ডাকিনী । একটি তিব্বতী অনুসৃতি তাঁর জন্ম উড়িষ্যায় বলে বলা হয়েছে।
তিনি শৈশবেই বেদ বেদান্ত অধ্যয়ন করেছিলেন এবং মধ্য প্রদেশে গিয়ে ত্রিপিটকও অধ্যয়ন করেছিলেন। ব্রাহ্মণ ধর্মে দীক্ষা গ্রহণের পর ইনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের পদ অধিকার করেন। সে সময় প্রাচ্যদেশে রাজা ছিলেন চন্দন পাল। কথিত আছে, রাজা তার অসংখ্য প্রজা নিয়ে সরহকে দেখতে এসেছিলেন।
সরহ তখন বলেছিলেন, “আমি যদিও ব্রাহ্মণ তবু আমি নিম্নবর্ণের কন্যার সঙ্গে বাস করি। জাতি বা অজাতি, পুণ্য বা পাপ আমার জন্য সবই সমান।” তাঁর উক্তিতে সবাই বিভ্রান্ত হলেন কিন্তু সরহ পা যখন দোহা গাইতে লাগলেন রাজা তখন পাঁচ লক্ষ প্রজা নিয়ে বজ্রযান মন্ত্রে দীক্ষিত হলেন।
সরহ পা বিরচিত চারটি চর্যা ২২, ৩২, ৩৮ ও ৩৯ চর্যাপদে স্থান পেয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে— সরহ, সরোজবস্ত্র, পদ্ম, পদ্মবস্তু ও রাহুলভদ্র নামে পরিচিত। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- সরহপা রাহুলভদ্র সরহ হতে পৃথক ব্যক্তি। প্রাচীন রাহুল ভদ্র সরহ নাগার্জুনের গুরু।
কিন্তু চর্যাপদের সরহ কার্দিয়ের মতে মহাব্রাহ্মণ সরহ, মৈত্রীর গুরু। এই মৈত্রীর মৃত্যু ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে। সুতরাং আমাদের সরহ একাদশ শতকের লোক। রাহুল সাংকৃত্যায়নের সিদ্ধান্তে ৭৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে গোপাল ধর্মপালের রাজত্বকালে
(৭৫০-৭০-৮০৬ ) বিদ্যমান ছিলেন। তাঁর দেশ ছিল মগধ এবং কুল ব্রাহ্মণ। তিনি মহাপণ্ডিত ছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সরহের দোহাকোষ ও তাঁর তিব্বতী অনুবাদ ফারসি ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, সরহ কামরূপের অধিবাসী। সরহ অলৌকিকতা দেখিয়ে কামরূপরাজ রত্নপাল (১০০০-১০৩০ খ্রিঃ)-কে দীক্ষিত করেন।
১১০১ খ্রিস্টাব্দে দিবাকর চন্দু সরহের লোপোনাথ কিছু সংখ্যক দোহা সংকলন করেন। অতএব, সরহ যে তার পূর্ববর্তী এতে কোন সন্দেহ নেই। সম্ভবত সরহপা একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জীবিত ছিলেন। তারানাথের বর্ণনানুসারে—এক আচার্য সরহ রাজপুরোহিত ছিলেন। তিনি হাড়িনী জাতীয় স্ত্রীলোকের সঙ্গ করায় রাজা তাকে বিতাড়ন করেন।
এ সরহের গুরু ছিলেন অনঙ্গবন্ধ। বোধ হয় ইনি ও দোহাকোষ রচয়িতা সরহ অভিন্ন। পণ্ডিত সরহের রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- কায়কোষ অমৃত বজ্রগীতি, দোহাকোষ, তত্ত্বোপদেশ, শিখর দোহাকোষ, চিত্তকোষ, অজ বস্ত্রগীতি, ডার্কিনী গুহ্য বজ্রগীতি, দোহাকোষ উপদেশ গীতি, ভাবনাফল দৃষ্টিচর্যা দোহাকোষ, বসন্ততিলক দোহাকোষ, চর্যাগীতি দোহাকোষ, মহাসমুদ্রোপদেশ দোহাকোষ, সরহপাদ গীতিকা প্রভৃতি।