শাহ ফকির গরীবুল্লাহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর

 শাহ/ফকির গরীবুল্লাহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

শাহ/ফকির গরীবুল্লাহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
শাহ/ফকির গরীবুল্লাহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর: মধ্যযুগের শেষ থেকে আধুনিক যুগের প্রথম দিকে (১৭৬০-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বাংলা, হিন্দি, তুর্কি, আরবি, ফারসি শব্দ মিশ্রিত এক ধরনের বিশেষ কাব্য রচিত হয়েছে, এ কাব্যগুলো পুঁথিসাহিত্য নামে পরিচিত। এ সকল কাব্য অলৌকিকতাপূর্ণ বীরত্ব বা প্রেমকাহিনী নিয়ে রচিত। দোভাষী পুঁথিসাহিত্যের আদি ও জনপ্রিয় লেখক ফকির গরীবুল্লাহ। সৈয়দ হামজা বলেন-

পীর শাহা গরীবুল্লা কবিতার শুরু।

আলমে উজালা যার কবিতার শুরু।

শাহ গরীবুল্লাহ হুগলী জেলার হাওড়ার বালিয়া পরগণার অন্তর্গত হাফিজপুর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর জীবনকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও তিনি যে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত থেকে তাঁর কাব্যগুলো রচনা করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

তাঁর পিতার নাম শাহ দুন্দীর। তাঁর রচিত দোভাষী পুঁথিগুলো হচ্ছে— ১. হোসেনমঙ্গল (জঙ্গনামার প্রথমাংশ), ২. আমীর হামজা (প্রথমাংশ), ৩. ইউসুফ-জোলেখা, ৪. সোনাভান, ৫. জঙ্গনামা, ৬. সত্যপীরের পুঁথি (মদনকামদেব পালা)।

গরীবুল্লাহ বড় খাঁ গাজীর ভক্ত ছিলেন। বড় খাঁ গাজী কবিকে বাতেনে দর্শন দান করে সম্ভবত কাব্য রচনায় অনুপ্রাণিত করেছেন। গরীবুল্লাহ 'আমীর হামজা', 'ইউসুফ- জোলেখা', 'হোসেনমঙ্গল' (জঙ্গনামা) এবং মদনকামদেব কাহিনীর বক্তা পীর বদর আর শ্রোতা বড় খাঁ গাজী।

'ইউসুফ-জোলেখা' ফকির গরীবুল্লাহর শ্রেষ্ঠ রচনা। পবিত্র কুরআন ও বাইবেলে ইউসুফের সাথে জুলেখার যে প্রণয়ের কথার উল্লেখ আছে তাকে ভিত্তি করেই ফারসি কাব্য 'ইউসুফ- জোলেখা" রচিত।

ফারসি কাব্যের ভাবানুবাদ হিসেবে গরীবুল্লাহর 'ইউসুফ-জোলেখা' রচিত। তাঁর 'আমীর হামজা' কাব্যে হযরত মুহম্মদ (স)-এর চাচা আমীর হামজার সাথে ইরানের শাহ নওশেরওয়ানের যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে।

গরীবুল্লাহর সত্যপীরের কাহিনী (মদনকামদেব পালা) এখন ওয়াজেদ আলীর নামে চলে যদিও ভণিতায় সর্বত্র গরীবুল্লাহর নাম রক্ষিত। 

গরীবুল্লাহর সোনাভান ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে সৈয়দ হামজা ও ফকির মোহাম্মদের নামেও চলে। তাঁর ইউসুফ-জোলেখায়ও ফকির মোহাম্মদের ভণিতা যুক্ত হয়ে চলে।

তবে শাহ গরীবুল্লাহর কাব্যের ভাষা আবেগময় এবং প্রাঞ্জল। সহজ সরল প্রাঞ্জলতার কারণেই শাহ গরীবুল্লাহর পুঁথিগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ