শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য অবলম্বনে তৎকালীন সমাজচিত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য অবলম্বনে তৎকালীন সমাজচিত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
অথবা, বংশী ও বিরহ খণ্ড অবলম্বনে তৎকালীন সমাজজীবনের সারসংক্ষেপ লেখ।
অথবা, তুমি কী মনে কর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' যুগের সমাজব্যবস্থা আর বর্তমান যুগের সমাজব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান? সংক্ষেপে লেখ
![]() |
| শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য অবলম্বনে তৎকালীন সমাজচিত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও |
উত্তর : সাহিত্য সমাজের দর্পণ। 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য রাধাকৃষ্ণের প্রেমের উপাখ্যান হলেও এ কাব্যে তৎকালীন সমাজজীবনের খানিকটা আভাস মেলে। এ কাব্যে সমকালীন জীবনধারা এবং পল্লি জীবনের ছবি একেবারেই দুর্লক্ষ নয়। আমরা প্রাচীন বাংলার অশিক্ষিত গোপ পল্লির তথা অনভিজাত শ্রেণির জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র পাই এ কাব্যে।
এ কাব্যে তৎকালীন সমাজের শিথিল যৌন জীবনের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। রাধা বিবাহিতা। তার স্বামীর নাম আইহন। সম্পর্কে রাধা কৃষ্ণের মাতুলানী। রাধার রূপে মুগ্ধ ভাগিনেয় কৃষ্ণ তার কারে প্রেম নিবেদন করেছে। এখানে মাতুলানী ভাগিনেয়ের অসামাজিক সম্পর্ক বর্ণিত হয়েছে।
বাল্যবিবাহ তৎকালীন সমাজে যে প্রচলিত ছিল রাধার বাল্যবিবাহে তা প্রমাণিত। তৎকালীন সমাজের লোকেরা পারিবারিক পরিমণ্ডলে বসবাস করতো। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, বৃদ্ধ বড়ায়ি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করেই এরূপ পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছিল। তখনকার স্ত্রীলোকেরা ঘরের বাইরে বের হতো না। তবে গোপবংশের মেয়েরা দধি দুধের পসরা নিয়ে হাটে যেত।
রাধা ছিল গোপ বালিকা বধূ। খেয়াঘাটে নদী পারাপারের জন্য কড়ির প্রয়োজন হতো। নৌকা তৈরির জন্য মিস্ত্রি, করাতি প্রভৃতি পেশার মানুষ ছিল। গ্রাম্য মেয়েরা দল বেঁধে নদী থেকে পানীয় জল আনত। তৎকালীন সমাজে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। বিপদমুক্ত হতে দেবতার পূজা করতো।
রোগ সারাতে ঝাড় ফুঁক, তুকতাক করতো এবং অশিক্ষিত লোকেরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। সমাজে চোর ডাকাতের বসতি ছিল। বিবাহের সময় ঘটকের মাধ্যমে ফুল-ফল-সন্দেশ পাঠানো হতো। এভাবে আমরা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে তৎকালীন সমাজব্যবস্থার যে পরিচয় পাই তা যেন বর্তমান সমাজব্যবস্থার অনুরূপ।
