ট্র্যাজেডি হিসেবে সিকান্দার আবু জাফরের 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের সার্থকতা বিচার কর
ট্র্যাজেডি হিসেবে সিকান্দার আবু জাফরের 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের সার্থকতা বিচার কর।
![]() |
ট্র্যাজেডি হিসেবে সিকান্দার আবু জাফরের 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের সার্থকতা বিচার কর। |
উত্তর: ট্র্যাজেডিকে বাংলায় বিয়োগান্ত বা বিষাদান্ত নাটক বলে। ট্র্যাজেডি নাটকের কাহিনীর পরিণতিতে বিয়োগ, বিচ্ছেদ বা বিষাদের সৃষ্টি হয়। ট্র্যাজেডি নাটকের বিষয় সামান্য ঘটনা নয়। শক্তিমান এবং প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের সংগ্রাম ও তার করুণ পরিণতি ট্র্যাজেডির বিষয়। প্রবলের পরাজয় ও লাঞ্ছনা, দুর্দশা ও ক্ষতবিক্ষত পরিণতি দর্শকের মনে করুণা ও ভয়ের সঞ্চার করে। তার বেদনায় দর্শক বিহ্বল হয়। আবার গভীর শান্তি পায় এই ভেবে যে, এরূপ পরিণামের শিকার সে নিজে নয়।
ট্র্যাজেডির নায়ক-নায়িকা শেষে পরাজিত হয়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নায়কের অনমনীয় শক্তি ও তার জীবন । তবু তার জীবনযুদ্ধের মহত্ত্ব দেখে আমরা বিমুগ্ধ হই। মানব-মানবীর এই মহৎ পরাভব দেখে আর্দ্র হয় দর্শকের হৃদয়। নায়কের পতনের আর্ত হাহাকারে কেঁপে ওঠে দর্শকের হৃদয়। ট্র্যাজেডির শোচনীয় পরিণতির জন্যে আমরা যুগপৎ ভীত হই, আবার আনন্দিত হই। ভীত হই একজন বীরের মৃত্যুর জন্য, আনন্দিত হই একজন বীরের মহৎ সংগ্রাম অবলোকন করে।
নাটকের পরিণতিতে পাত্র-পাত্রীর Suffering যখন শিল্পের আঙিনা ছেড়ে পাঠক ও দর্শকদের সিক্ত করে অথবা নাটকের ভূমিকায় কোন চরিত্র নিয়তির করাল গ্রাসে বা নিজ কর্মে অন্তর্দ্বন্দ্বে পতিত হয়ে ক্ষতাক্ত ও বেদনায় সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ট্র্যাজেডি বলে। তবে নিছক মৃত্যু ট্র্যাজেডি নয়।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের পটভূমি সিরাজ ও ইংরেজের মধ্যে অনুষ্ঠিত পলাশীর যুদ্ধ। সিরাজ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই স্বার্থান্বেষী ইংরেজ ও সিরাজের কিছু অমাত্য সিরাজের বিরুদ্ধে অনবরত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে তাকে অস্থির করে তোলে।
এ ষড়যন্ত্রে মদদ যোগায় সিরাজের আপন বড় খালা ঘসেটি বেগম। ক্ষমতা গ্রহণের সময় থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিরাজ কখনও বিশ্রাম পান নি। ভেতরে-বাইরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জনগণের ওপর ইংরেজের অত্যাচার মূলত সিরাজকে টান টান ব্যস্ত রাখে। নাটকের শুরুতেই স্বয়ং সিরাজ ইংরেজের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করতে বাধ্য হয়।
মতিঝিল প্রাসাদ থেকে বড় খালা ঘসেটিকে সিরাজ নিজ হাতেই বন্দী করে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। ষড়যন্ত্রকারী মীর জাফরদের তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে নিজের পক্ষে কাজ করানোর প্রয়াস পেয়েছেন ।
সিরাজ দেশপ্রেমিক ও প্রজাহিতৈষী নবাব। সিরাজ নবাবি নেওয়ার পর থেকেই ইংরেজরা অবৈধ অধিকার ও বাড়তি সুযোগের চেষ্টা করেছে এবং চারদিকে লোভ ও উৎকোচ ছড়িয়ে রাজ অমাত্যদের বিশ্বাসঘাতকে পরিণত করেছে।
এ দেশেরই বিবেকহীন দেশপ্রেমহীন বেনিয়া মুৎসুদ্দিরা ইংরেজদের সহায়তায় বিস্তর অবৈধ পুঁজি সংগ্রহ করেছে। এই নব্য পুঁজিপতিরা নিজ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।
সিংহাসন লাভের পরেই তরুণ সিরাজ এই ষড়যন্ত্রকে যেমন উৎখাত করতে চাইলেন তেমনি বিদেশি বণিকদের অন্যায় ঔদ্ধত্য বিনাশে অগ্রসর হন। তাই তার বিরুদ্ধে তারই অমাত্যবর্গ, সেনাপতিবৃন্দ এবং বণিক সম্প্রদায় চারদিক থেকে তাকে পর্যুদস্ত করতে
সংকল্পবদ্ধ।
.png)