পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ একি সন্ন্যাসী বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে চরণ দুটি কোন কবিতার অংশ এবং এর মাধ্যমে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন?
পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ একি সন্ন্যাসী,
বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে।
চরণ দুটি কোন কবিতার অংশ এবং এর মাধ্যমে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন?
![]() |
পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ একি সন্ন্যাসী, বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে। চরণ দুটি কোন কবিতার অংশ এবং এর মাধ্যমে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন? |
উত্তর:চরণ দুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কল্পনা' কাব্যের ‘মদন ভস্মের পর' কবিতার প্রথম দু'টি চরণ। মহাদেব মদনকে রোষে ভস্মীভূত করায় মদন অতনু বা অনঙ্গ হয়ে দেহ ও ইন্দ্রিয়ের গণ্ডি চূর্ণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মদনের যখন অঙ্গ ছিল তখন তাকে বাধা দেওয়া সহজ ছিল, কিন্তু অনঙ্গ হয়ে সে দুর্নিবার হয়ে উঠেছে।
আগে মদনের পীড়া বিরহী বিরহিণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, মদন পীড়ায় কাতর অথচ সেই কামনা পূরণ করার উপায়হীন নরনারীকে কবিরা বিরহী-বিরহিণী নাম দিয়েছে। কিন্তু মদন অনঙ্গ হওয়াতে সে এখন বিশ্বব্যাপ্ত হয়ে পড়েছে, যা আগে ছিল ব্যক্তির, তা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের ও সবার।
আগে মদনের আকাঙ্ক্ষা নির্দিষ্ট ছিল—তা চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদিতে প্রকাশ পেত, কিন্তু সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে এখন তার আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে অনির্বচনীয়।
মদনের ভাবব্যঞ্জনা ইঙ্গিত সংকেত এখন সমস্ত বিশ্বে ছাড়িয়ে গিয়েছে— লতা তরুকে জড়িয়ে ধরছে, ভ্রমর ফুলের বুকে মধু পান করছে, ঘুড়িতে ঘুড়িতে প্যাচ লেগেছে দেখে নর-নারীর মনে এখন মিলনের ইঙ্গিত জেগে ওঠে। অঙ্গ যখন ছিল তখন মদন ছিল অকপট সরল খোলাখুলি, এখন তার সমস্তই গোপন, সবই ইঙ্গিতময় সংকেতমাত্র ।
মদন ইন্দ্রিয়রাজ্য হতে মনোরাজ্যে প্রবেশ করেছে— রূপ হতে অরূপ লোকে, ভাবলোকে উত্তীর্ণ হয়েছে। আকাশে বাতাসে আজ প্রণয় সংকেত। প্রেমলিপ্সা পূরণে অসমর্থ প্রণয়ী- প্রণয়িনীদের বেদনা আজ সূক্ষ্ম বিরহ-বেদনায় রূপান্তরিত হয়ে সারা বিশ্বকে উৎকণ্ঠিত করছে।
পৃথিবীর তরুলতা, পশুপক্ষী প্রিয় মিলনের ঔৎসুক্য ইঙ্গিতে ব্যক্ত হচ্ছে ও অতৃপ্তির ক্ষীণ বেদনায় সারা বিশ্ব ব্যথিত হয়ে উঠছে।
.png)