শ্রমের মর্যাদা রচনা | শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য আমরা আজকেও এক্টা রচনা নিয়ে আসছি। শ্রমের মর্যাদা রচনা টি এত এত গুরুত্ব পূর্ণ যা বলাই বাহুল্য। শ্রমের মর্যাদা রচনা টি সব ক্লাসের জন্যই দেওয়া হয়েছে। তোমরা শ্রমের মর্যাদা রচনা টি ভালো ভাবে পড়ে নিবে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা  শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10
শ্রমের মর্যাদা রচনা  শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

শ্রমের মর্যাদা রচনা টি পড়লে বুঝতে পারবে যে কত সহজ একটা রচনা। শ্রমের মর্যাদা রচনা ক্লাস ৫ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত সব ক্লাসের জন্য। তোমরা ভালো ভাবে পড়ে নিবে এবং কোথাও সমস্যা হলে আমাদের জানিয়ে দিবে। তো শ্রমের মর্যাদা রচনা টি পড়ার আগে রচনা লেখার নিয়ম দেখে নাও ও সুচিপত্রটি দেখে নিবে কি কি থাকতেছে।

সুচিপত্রঃ শ্রমের মর্যাদা রচনা | শ্রমের মর্যাদা রচনা Class 5, 6, 7, 8, 9, 10

  • সূচনা
  • শ্রম কী
  • শ্রমের শ্রেণিবিভাগ
  • শ্রমের প্রয়জনীয়তা
  • শ্রমের মর্যাদা
  • পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি
  • উপসংহার

শ্রমের মর্যাদা রচনা

সূচনা: কর্মই জীবন। সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। ছোট্ট পিপড়ে থেকে বিশাল হাতি পর্যন্ত সবাইকেই পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম দ্বারাই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা করেছে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে। এবং বহু বছরের শ্রম ও সাধনা দ্বারা পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বলা যায়, মানুষ ও সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতির মূলে রয়েছে। পরিশ্রমের অবদান। শ্রমের মর্যাদা রচনা

শ্রম কী: শ্রমের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মেহনত, দৈহিক খাটুনি। সাধারণত যেকোনাে কাজই হলো । পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার। পরিশ্রমের দ্বারাই গড়ে উঠেছে বলে মানব সভ্যতার বিজয় স্তম্ভ।

শ্রমের শ্রেণিবিভাগ: শ্রম দুই প্রকার : মানসিক শ্রম ও শারীরিক শম। শিক্ষক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিক, অফিসের কর্মচারী শ্রেণির মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকেন সেটিকে বলে মানসিক শম। অবার শ্রমিক , তাতি, জেলে, মজুর শ্রেণির মানুষের শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম। পেশা বা কাজের ধরন অনুসারে এক শ্রেনীর মানুষের পরিশ্রম এক এক ধরনের হয়। তবে শ্রম শারীরিক বা মানসিক যা-ই হােক না কেন এক শ্রেণির মানুষের পরিশ্রম এক এক ধরনের হয়। তবে শ্রম শারীরিক বা উভয়ের মিলিত পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে মানব-সভ্যতা। 

শ্রমের প্রয়ােজনীয়তা: মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা। তার এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় কঠোর " ওহ মানবজীবনে পরিশ্রমের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম । কর্মবিমুখ অলস মানুষ কোনােদিন উন্নতি করতে পারেনা। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি কল্পনামাত্র । জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে নিরলস পিরশ্রম দরকার। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মানুষকে পরিশ্রমী হতে হবে। একমাত্র পরিশ্রমই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে।

শ্রমের মর্যাদা: মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জীবন-ধারণের তাগিদে মানুষ নানা কর্মে নিয়ােজিত হয়। কৃষক ফসল ফলায়, তাতি কাপড় বােনে, জেলে মাছ ধরে, শিক্ষক ছাত্র পড়ান, ডাক্তার চিকিৎসা করেন, বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। এঁরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে কোনাে কাজই ছােট নয়। আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদায় হয়তাে সবাই সমান নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা, মনন, ঘাম ও শ্রমে সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তাই সকলের শ্রমের প্রতিই আমাদের সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বে কোনাে কাজকেই তুচ্ছ করা হয় না। সমাজের প্রতিটি লােক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতির মতাে দেশ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছে। আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে বিশেষ। মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। তার ফলে আজো সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করি। শ্রমের মর্যাদা রচনা

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি: সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবনসংগ্রামে তারই হয়েছে জয়। করে প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বােঝাসরপ। অন্যদিকে শমশীলতাই মানবজীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।।

উপসংহার: পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়, সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক। আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের। তাই কোনাে প্রকার শ্রম থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না। শ্রমের বিজয়-রথে চড়ে আমাদের উন্নত সভ্যতার সিংহদ্বারে পৌছাতে হবে। 

শ্রমের মর্যাদা রচনা 

ভূমিকা: মানবসভ্যতার সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে শ্রম। আজকের সভ্যতা যগ-যুগান্তরের অগণিত মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল। জীবনধারণের তাগিদেহ মানুষ কমব্যস্ত। গুহাবাসী মানুষ একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই বর্তমানের এ উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। কৃষকের ফসল উৎপাদন, শিল্পীর শিল্পকম, জ্ঞানার জ্ঞানার্জন, বিজ্ঞানীর নব নব আবিষ্কার সবই শ্রমলব্ধ ফসল। মানবজীবনের সবক্ষেত্রেই যা কিছু দৃশ্যমান তা সবই পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। 

শ্রমের কার্যকারিতা: জন্মগতভাবেই মানুষ কিছু না কিছু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। আর এ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব। মানুষ নিজেই তার ভাগ্যনির্মাতা। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য গড়ে তােলে। ইতিহাসলব্ধ জ্ঞান থেকে আমরা দেখতে পাই, যে সকল মানুষ। পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় তাঁদের সাধনাই ছিল পরিশ্রম। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাফল্যেই মানবসভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। উন্নত দেশগুলাের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের উন্নতি পরিশ্রমেরই অবদান। যে জাতি শ্রমকে মূল্য দিতে পেরেছে, সে জাতিই জগতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। কঠোর পরিশ্রমই তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মহিমা দিয়েছে। 

শ্রমের গুরুত্ব: মানবজীবন, ও মানবসভ্যতার উন্নতির জন্যে শ্রম অপরিহার্য উপাদান। মানুষের জন্ম তার নিজের অধীন নয়, কিন্তু কর্ম নিজের অধীন। কারণ কর্মই পারে মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌছে দিতে। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারে। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মােকাবিলা করে মানুষকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এসব ক্ষেত্রে পরিশ্রমই তার একমাত্র হাতিয়ার। তাই ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শ্রমের যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে হবে। সামাজিক প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী প্রতিটি স্তরের শ্রমই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক, মজুর, শিক্ষক, ডাক্তার, শিল্পী, বিজ্ঞানী রাষ্ট্রনায়ক প্রত্যেকের যথাযথ পরিশ্রমই সমাজ ও দেশের অগ্রগতি সাধন করে। শ্রমই মানুষকে সৃজনশীল করে। নব নব সৃজনের মাধ্যমে। মানষ নতন অগ্রগতি সাধন করে। আজকের দিনের মানুষের শ্রমসাধিত কম আগামী দিনের মানুষকে নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে। এককথায়। মানষকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং কাল-থেকে কালান্তরে অমর করে রাখার একমাত্র উপায় শ্রম । শ্রমবিমুখ ব্যক্তি মৃত্যর সাথে সাথেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়। অন্যথায় শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকে চিরদিন।

মানসিক ও শারীরিক শ্রম: সকল কাজের সাফল্য প্রাপ্তির জন্যে মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানসিক পরিশ্রম মানসিক উন্নতি দান করে এবং নবসৃষ্টির নবচিন্তার জন্ম দেয়। আর মানসিক শ্রম যে কাজের চিন্তা করে শারীরিক শ্ৰম তা সম্পাদন করে। কিন্তু কার্যত আমরা দেখি, মানসিক পরিশ্রমের মর্যাদা মানুষ স্বীকার করলেও শারীরিক পরিশ্রমকে অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে। ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ প্রমুখ পেশাজীবী মানুষের অবস্থান সমাজের উপরতলায়। অন্যদিকে কুলি-মজুর-কৃষকশ্রমিক এদের অবস্থান সমাজের নীচুতলায় । অন্নহীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন মানবেতর জীবনই তাদের নিত্যসঙ্গী। যদিও শারীরিক শ্রম সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায়, আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়। প্রতিটি মানুষই দেশ ও জাতির কল্যাণ করার উদ্দেশ্যে নিজ যােগ্যতা অনুসারে মানসিক কিংবা শারীরিক শ্রমকে অবলম্বন করছে। এদের অবদান স্বীকার করে কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন –

‘গাহি তাহাদের গান - 

ধরণীর হাতে দিল যারা আনি’ ফসলের ফরমান। 

শ্রম কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে 

এস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফুলে।

ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব: সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই শারীরিক ও মানসিক শ্রমকে সমান মূল্য দেওয়া উচিত। অন্যথায় জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। সমষ্টিগত জীবনকে সুন্দর ও মহিমাময় করতে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব আরও গভীর ও ব্যাপক। কেননা শ্রমবিমুখ ব্যক্তি সাফল্যের ছোঁয়া থেকে চিরকালই বঞ্চিত। ইতিহাসবিখ্যাত ব্যক্তি জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিঙ্কন, আলবার্ট আইনস্টাইন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাক্সিম গাের্কি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তির জীবন থেকেও আমরা একই শিক্ষা গ্রহণ করি। শ্রমবিমুখতা ব্যক্তিকে ব্যর্থতার গ্লানিতে পর্যবসিত করে, তার অগ্রগতির পথকে করে রুদ্ধ। তাই ব্যক্তিজীবনের সাফল্য শ্রমেরই সাফল্য। 

সভ্যতা বিকাশে শ্রম: মানবসভ্যতার বুনিয়াদ তৈরি করেছে শ্রম। মানুষ যদি নিষ্কর্মা হয়ে ভাগ্যের হাতে আত্মসম্পৰ্ণ করে বসে থাকত তাহলে আমাদের সামনে এ সমুন্নত সভ্যতার বিকাশ হতাে না। শ্রমের শক্তিতেই মানুষ নতুন নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন করেছে, করেছে সভ্যতার ক্রমবিস্তার। শ্রম ব্যক্তিজীবনকে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যশালী করে তারই প্রভাব পড়ে সমাজজীবনের ওপর। তাই শুধু ব্যক্তিজীবনের বিকাশ নয়, সভ্যতার বিকাশেও শ্রমই হাতিয়ার। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। রাশিয়া, চীন, আমেরিকা, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি দেশ শ্রমের প্রক্রিয়াতেই এত বেশি উন্নত। যুগ যুগ ধরে মানুষের কঠোর শ্রমই পৃথিবীকে বাসযােগ্য করেছে, সভ্যতাকে করেছে সমৃদ্ধ। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও প্রগতিশীল সভ্যতাও মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল । " 

উপসংহার: পৃথিবী সৃষ্টি থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমের অবদান অপরিসীম। ব্যক্তিজীবন থেকে জাতীয় জীবনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য একমাত্র শ্রমশক্তির মাধ্যমেই সম্ভব। তাই দেশের জন্যে, সমাজের জন্যে অবস্থান ও দক্ষতা অনুযায়ী যে পরিশ্রমই করা হােক না কেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব শ্রেণীর শ্রমকে যদি সমান মর্যাদা দেওয়া হয় তবেই দেশ ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলােতে শ্রমের এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত। আমাদের দেশের উন্নতিও এ মূল্যবােধের মাধ্যমে সম্ভব।

শ্রমের মর্যাদা রচনা

ভূমিকা: পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। তাই যেকোনো জাতির সার্বিক উন্নয়নে শ্রমের ভূমিকা অপরিসীম। মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুধু শ্রমেরই জয়জয়কার। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রম করে, সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমরা দৃষ্টিভঙ্গি একটু পরিবর্তন করলেই দেখব জীব-জগতের সমস্ত প্রাণীই পরিশ্রমী। পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক ছোট ছোট জাতি উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে গেছে।

কর্মের সুফল: সংসার নামক কর্মক্ষেত্রে নানা পেশার মানুষ নানা কাজে ব্যস্ত । উদয়াস্ত শ্রম বিলিয়ে মানুষ ঘরে ফেরে ঘর্মাক্ত হয়ে। এ অপমানের নয়, গৌরবের। এ দুঃখবোধের নয়, পরম প্রাপ্তির । কবির ভাষায়— 

“চাষি খেতে চালাইছে হাল,

তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল,

 বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার।'

কর্মই কর্মীর জীবনের শ্রেষ্ঠ সাধনা। কর্মের মধ্যেই তার ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। উদ্যোগী পুরুষ সিংহই নির্মাণ করে সুখ-সভ্যতা। পরিশ্রমই খুলে দেয় জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির সিংহদ্বার।

শ্রমবিমুখতার পরিণাম: যারা অদৃষ্টবাদী, অলস, শ্রমবিমুখ তারা জীবনের প্রতি পদক্ষেপে হয় ব্যর্থ। ঈশ্বর কারো হাতে সম্পদ তুলে দেয় না। কাপুরুষেরাই দৈবের দোহাই দিয়ে অলস জীবনাচারে ব্যাপৃত থাকে। ফলে দৈন্য, ব্যর্থতা ও পরাজয় হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। সম্পদ কিংবা সাফল্য এমনি এমনিই হস্তগত হয় না, নিরলস শ্রম আর সংগ্রাম করে তা অর্জন করতে হয়। যে জাতি অলস, কর্মবিমুখ তারা শিক্ষা ও সভ্যতায় অগ্রসর নয়। উন্নয়নের সোনার হরিণ তাদের হাতে ধরা দেয় না কস্মিনকালেও। বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় যে দেশ ও জাতি উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান রচনা করেছে তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিরন্তর শ্রমসাধনার ইতিহাস । আলস্যে কালক্ষেপণ করলে তাদের ইতিহাসও রচিত হতো উন্নয়ন-সমৃদ্ধির বদলে দারিদ্র্য ও ব্যর্থতার গ্লানিতে পূর্ণ হয়ে। চলমান বিশ্বে দ্রুতপদে এগিয়ে চলাই ধর্ম । শ্রমের কাতারে যতই পা চলবে, প্রতি পদক্ষেপে ততই ফুটবে ফুল— তার সৌন্দর্য ও সৌরভে জীবন হবে সুন্দর ।

শ্রমের রকমারি রূপ: গায়ে-গতরে খাটা শ্রম, আর মানসিক শ্রম— দুটোরই গুরুত্ব রয়েছে। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী মানুষ তার শ্রমের ক্ষেত্র ও মূল্যায়ন লাভ করে। শিক্ষিত লোকরা সাধারণত মানসিক শ্রম করে থাকে। অন্যদিকে অশিক্ষিতদের শ্রম হলো প্রধানত কায়িক শ্রম। কায়িক শ্রম যারা করে তারা সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের শিকার। তারা নিচুশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়। কিন্তু যারা মানসিক শ্রম করে তারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকে এবং সমাজের বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। কায়িক শ্রমকারী মানুষকে শ্রমিক বলা হয়। শ্রমিকশ্রেণির মানুষের শ্রমকে সমাজে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ উভয় প্রকার শ্রমেরই গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো শ্রমকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই শ্রমজীবী মানুষ উপেক্ষিত, এটা কাম্য হতে পারে না। শ্রমজীবী মানুষ অনেক বেশি কষ্ট করে। তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তাদের কাজ করে। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের বিনিময়েই সমাজ-সভ্যতার ভিত্তি রচিত হয় এবং তার বিকাশ ঘটে।

জীবনের আরাম-আয়েশসহ ভোগবিলাসের পণ্যসামগ্রী শ্রমজীবী মানুষ উৎপন্ন করলেও তারা ভোগ করতে পারে না। তারা সচ্ছল জীবনের যাবতীয় উপাদানের উৎপাদনের নিয়ামক হয়েও নিজেরা অসচ্ছল থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে কায়িক শ্রম আর মানসিক শ্রম দুটোর কোনোটাই উপেক্ষার বিষয় নয় বরং দুটোরই সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা দরকার।

শ্রম ও লিঙ্গবৈষম্য: জগতে পুরুষ ও নারী উভয়েই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে জগৎকে সুন্দর করে গড়ে তুলছে। পুরুষের শারীরিক কাঠামো আর নারীর শারীরিক কাঠামোর মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই বেশকিছু পার্থক্য বিদ্যমান। পুরুষ ও নারী তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। নারীর কাজ বা শ্রম কোনো অংশেই পুরুষের শ্রমের চেয়ে গুরুত্বহীন নয়। নারী তার শ্রমের দিগন্তে আপন মহিমায় উজ্জ্বল। কিন্তু অনগ্রসর দেশগুলোতে নারীর শ্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে নারী ও পুরুষের শ্রমের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য বিরাজ করে বা শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। নারী ও পুরুষের শ্রমের সমান মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। আমাদের দেশে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান ব্যাপক। সে তুলনায় নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা হয় না। এটা অনভিপ্রেত।

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দক্ষ কর্মীর হাতে পরিণত করতে পারলে তারা সমস্যা না হয়ে বরং শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। শতকোটি লোকের দেশ চীন তার বিপুল জনসংখ্যাকে পরিণত করেছে উন্নতির হাতিয়ারে। আমাদেরও হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। উৎপাদন ও বণ্টনে মনোদৈহিক শ্রম নিবিড়ভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে ভোগের অধিকার আপনা থেকেই জন্মাবে। জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্বকে অস্বীকার করে আধুনিক সভ্য দুনিয়া গড়ে তোলা সম্ভব নয় ।

শ্রমই উন্নতির মূল: ব্যক্তিগত ও জাতীয় সকল উন্নয়নের মূলই হচ্ছে শ্রম ও কঠোর সাধনা। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বে ক্রমেই শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক এ বিশ্ব-ভাবনা থেকে আমরাও পিছিয়ে থাকতে পারি না। শ্রম বিনিয়োগের সাথে সাথে আমাদেরও রচিত করতে হবে উন্নয়নও অগ্রগতির বিজয়রথ

উপসংহার: বৃক্ষ যেমন নীরব সাধনায় ফুল ফোটায়, ফল ফলায়, মানুষকেও তেমনি নিষ্ঠাবান হয়ে কর্মের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ব্রতী হতে হবে। শ্রমের ফসলের সম্ভার নিয়েই ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ এগিয়ে যায় উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির সোনালি দিগন্তে। তাই নিশ্চিত করে এ কথা বলা যায়, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির নেপথ্যে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য ।

শেষকথাঃ শ্রমের মর্যাদা রচনা

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম শ্রমের মর্যাদা রচনা । যদি আজকের এই শ্রমের মর্যাদা রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
3 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 25 August

    You are doing a great work. Keep it up.

  • Anonymous
    Anonymous 13 September

    good job

  • Anonymous
    Anonymous 01 October

    Onek sundor hoice roconagula😊
    beSt of lucK🍁

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ