মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি কি কী | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

মোবাইল প্রজন্ম কী, মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি, মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ, মোবাইল কোন প্রজন্ম হতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়, মোবাইলের প্রজন্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় এসব প্রশ্নের সকল উত্তর জানবো আজকে।
মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি কি কী  মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ
মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি কি কী  মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

হ্যালো বন্ধুরা আমি আরকে রায়হান। আজেক আমি আপনাদের মোবাইল প্রজন্ম কী, মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি, মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ, মোবাইল কোন প্রজন্ম হতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়, মোবাইলের প্রজন্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় এসব জানাবো।
অনেক লোকজন আছে যারা বহুদিন ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তারা জানেন না যে কোন ফোনটি কোন প্রজন্মের। কেউ হয়তো আগের ১২ শ মডেলের নকেয়া ফোন ব্যবহার করে থাকে, আবার স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে। আমার মনে হয় অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহার কারীরা তাদের মোবাইল ফোনটি কোন প্রজন্মের তা তারা জানেন না। তাই আমি আরকে রায়হান আপনাদের আজকে  মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি কি কী বা মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ সহ আরো সকল প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দিবো। তো নিচে থেকে আমরা জেনে নিই চল।

মোবাইল প্রজন্ম কী | মোবাইল প্রজন্ম কি (Mobile Phone Generation) 

মােবাইল ফোনের উন্নয়ন ও বিকাশ লাভের জন্য অনেকগুলাে ধাপ বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়েছে। অতিক্রমের একেকটি ধাপ বা পর্যায় হলাে মােবাইল ফোন প্রজন্ম বা জেনারেশন। একেকটি প্রজন্ম পরিবর্তনের সময় কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য সংযােজিত হয় এবং পুরনাে বৈশিষ্ট্যগুলাের বিলুপ্তি ঘটে। মােবাইল ফোনের প্রজন্মকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা

মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি | মোবাইলের প্রজন্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়

  • প্রথম প্রজন্ম (1 Generation-1G)
  • দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation-2G) 
  • তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation-3G) 
  • চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation-4G) 

প্রথম প্রজন্ম (1 Generation-1G) :

সেলুলার নেটওয়ার্ক (১৯৭৯-১৯৯০) আশির দশকে প্রথম প্রজন্মের মােবাইল ফোন ছিল সেলুলার নেটওয়ার্কনির্ভর এবং এগুলাে এ্যানালগ সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ১৯৭৯ সালে জাপানের এনটিটি প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অটোমেটেড সেলুলার নেটওয়ার্ক চালু করার মাধ্যমে 1G এর সূচনা করে। নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত এ প্রজন্মের সিস্টেম চলতে থাকে। উদাহরণ : AMPS (Advanced Mobile Phone System), প্রথম প্রজন্মের মােবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য

প্রথম প্রজন্মের মােবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • অ্যানালগ পদ্ধতিতে রেডিও সিগন্যাল ব্যবহৃত হতাে। 
  • সেলুলার নেটওয়ার্কের প্রবর্তন। 
  • বেজ স্টেশন ও মােবাইল ফোন দুটি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। 
  • অর্ধপরিবাহী মেমােরি এবং মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার। 
  • প্রথম দিকে মােবাইল ফোনগুলাের ওজন বেশি হলেও ধীরে ধীরে হালকা মােবাইল ফোন তৈরি হতে থাকে। 
  • চ্যানেল একসেস পদ্ধতি হল FDMA।
  • আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং ওজন বেশি।
  • কথােপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে সংযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation-2G) : ডিজিটাল নেটওয়ার্ক (১৯৯১-২০০০) | মোবাইল ফোনের প্রজন্ম

১৯৯০ সালে GSM স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে দ্বিতীয় প্রজন্মের (26) মােবাইল সিস্টেমের যাত্রা শুরু হয়। এতে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ব্যবহার চালু হয় এবং ভয়েস ও ডেটা প্রেরণ সম্ভব হয়। এ প্রজন্মের মােবাইলে এসএমএস টেক্সট মেসেজিং করা যায়। উদাহরণ : Digital AMPS, GSM 850/900/1800/1900|

দ্বিতীয় প্রজন্মের মােবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • এ প্রজন্মের ট্রান্সমিশন সিস্টেম ডিজিটাল পদ্ধতি এবং Noise মুক্ত। 
  • ডেটা আদান-প্রদানে ক্রটি নির্ণয় ও ত্রুটি সংশােধন হতে থাকে। 
  • ভয়েস প্রেরণের সুবিধা চালু হয়। 
  • চ্যানেল একসেস পদ্ধতি হলাে— FDMA, TDMA ও CDMA। 
  • মােবাইল ফোনেই পেমেন্ট সিস্টেমের প্রবর্তন। 
  • MMS (Multimedia Message Service), SMS CTS 
  • সীমিতভাবে আন্তর্জাতিক রােমিং সুবিধা এবং মােবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা।
  • ডেটার নিরাপত্তার জন্য এনক্রিপশন ব্যবস্থা।

NOTE

  • FDMA - frequency division multiple access 
  • TDMA-time division multiple access 
  • CDMA - Code Division Multiple Access

তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation-3G) মোবাইল কোন প্রজন্ম হতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয় (২০০১-২০০৮) মোবাইল ফোনের প্রজন্ম

মূলত ডেটা সার্ভিসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলস্বরূপ সূচনা ঘটে মােবাইলের তৃতীয় প্রজন্ম বা 3G এর। ২০০১ সালে জাপানে এনটিটি ডােকোমাে WCDMA প্রযুক্তি ব্যবহার করে 3G নেটওয়ার্ক চালু করে। এ দশকে থ্রিজি প্রযুক্তির মােবাইল টেলিফোনি কমিউনিকেশন্স প্রটোকল High-Speed Downlink Packet Access (HSDPA) চালু হয়। ফলে তৃতীয় প্রজন্মটি ভাগ হয়ে 3.5G, 3G+ বা turbo 3G নামে পরিচিতি পায়। WCDMA পদ্ধতি পরবর্তীতে UMTS (Universal Mobile Telecommunication System) নামে পরিচিত। 3G তে উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সফার ও মাল্টিমিডিয়া ডেটা ব্যবহারসহ CDMA ও GPRS (General Packet Radio Service)। স্ট্যান্ডার্ডের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। উদাহরণ : EDGE, HSPA.

তৃতীয় প্রজন্মের মােবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য সার্কিট সুইচিংয়ের বদলে প্যাকেট সুইচিংয়ের প্রবর্তন। 
  • ভয়েস ও ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার। 
  • সেল সিগন্যাল এনকোডিং বা চ্যানেল একসেস পদ্ধতি হল TD-CDMA 
  • উচ্চগতির ডেটা স্থানান্তর (2 Mbps বা অধিক) এবং আন্তর্জাতিক রােমিং সুবিধা। 
  • WCDMA,CDMA2000 1xEV-D0, HSPA, HSDPA, UMTS প্রযুক্তির ব্যবহার বিকাশ লাভ করেছে। 
  • খুব দ্রুত ছবি ও ভয়েস আদান-প্রদান করা যায় এবং ভিডিও কলের প্রচলন শুরু।

তৃতীয় প্রজন্ম প্রযুক্তির সুবিধা (Advantages of 3G) 

  • ব্যান্ডউইথ, নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততা বেশি। 
  • সর্বদা অনলাইনে থাকে তাই যে কোনাে সময় ব্রাউজ করা যায়, ই-মেইল করা এবং তথ্য ডাউনলােড করা যায়। 
  • ভিডিও কনফারেন্সিং করা যায়। 
  • সবসময় ইন্টারনেট সংযােগ থাকে, আলাদা করে সংযােগ প্রয়ােজন হয় না। 
  • সমৃদ্ধ মাল্টিমিডিয়া সার্ভিস পাওয়া যায়। 
  • সার্ভিস প্রােভাইডারের মাধ্যমে ইন্টারঅপারেবিলিটি সেবা দেয়। 
  • নির্দিষ্ট (fixed) বা বিভিন্ন রেটে পাওয়া যায়।

৩য় প্রজন্মের মােবাইল ফোনের সাহায্যে ইন্টারনেট ব্রাউজিং। ৩য় প্রজন্মের মােবাইল ফোনে ডেটা ট্রান্সফারের জন্য "সার্কিট সইচিং" পদ্ধতির বদলে "প্যাকেট সুইচিং" পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যার ফলে ইন্টারনেটে দ্রুত সংযােগ স্থাপন করা যায় এবং ডেটা ট্রান্সফার স্পিড বা ইন্টারনেট স্পিড বেশি হয়। থ্রিজি প্রযুক্তিকে "মােবাইল ব্রডব্যান্ড'ও বলা হয়। এ প্রযুক্তি হতে হলে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) দ্বারা স্বীকৃত ইন্টারন্যাশনাল মােবাইল টেলিকমিউনিকেশন-২০০০ (IMT2000) এর নিয়মাবলি মেনে চলতে হয়। ৩য় প্রজন্মের মােবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সাহায্যে ভিডিও কল এবং মােবাইল টিভি উপভােগ করা যায়।

মােবাইল টিভি তৃতীয় প্রজন্ম প্রযুক্তির অসুবিধা (Disadvantages of 3G) 

  • ভিন্ন হ্যান্ডসেট প্রয়ােজন হয়। 
  • সেলুলার অবকাঠামাে, বেজ স্টেশন আপগ্রেডিং উচ্চমূল্যে এবং বিদ্যুৎ খরচ বেশি। 
  • রােমিং এবং ডেটা/ভয়েস একত্রে কাজ করা এখনাে বাস্তবায়ন হয় নি। 
  • স্পেকট্রাম লাইসেন্স খরচ, নেটওয়ার্ক ডিপ্লয়মেন্ট খরচ অনেক বেশি।

চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation-4G) : উদীয়মান (২০০৯-বর্তমান)

ভালােমানের থ্রিজি কভারেজের অভাব থেকেই শুরু হয় চতুর্থ প্রজন্মের মােবাইল প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা। ইন্টারনেটনির্ভর মােবাইল ফোন সিস্টেমে আস্ট্রা-ব্রডব্যান্ড গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। দ্রুত চলনশীল ডিভাইসে ডেটা স্থানান্তর গতি ১০০ Mbps এবং স্থির ডিভাইসে ১ Gbps। 4G এর প্রযুক্তি LTE (Long Term Evolution) স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহারকারীগণ খুব সহজেই যে কোনাে জায়গায় যে কোনাে সময় পূর্বের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুতগতিতে ডেটা, ভয়েস এবং মাল্টিমিডিয়া আদান-প্রদান করতে পারবে। উদাহরণ : WiMAX2.. 

চতুর্থ প্রজন্মের মােবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • এ প্রজন্মে সার্কিট সুইচিং বা প্যাকেট সুইচিং-এর পরিবর্তে ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) নির্ভর নেটওয়ার্ক ব্যবহার। 
  • ডেটা ট্রান্সফার রেট হবে সবচেয়ে বেশি। 
  • 4G এর গতি 3G এর চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি। 
  • উচ্চগতির ফ্রিকোয়েন্সি এবং ত্রি-মাত্রিক ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা। 
  • বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে পরিবর্তনের সময় নিরবচ্ছিন্ন যােগাযােগ থাকবে। 
  • উন্নতমানের মােবাইল টেলিভিশন দেখার উপযােগী হবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি কি কী | মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ

বন্ধুরা আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মোবাইল প্রজন্ম কী, মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি, মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ, মোবাইল কোন প্রজন্ম হতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়, মোবাইলের প্রজন্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় । যদি তোমাদের আজকের এই মোবাইল প্রজন্ম কী, মোবাইলের প্রজন্ম কয়টি, মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ, মোবাইল কোন প্রজন্ম হতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়, মোবাইলের প্রজন্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় লেখাটি ভালো লাগে তাহলে নিচে কমেন্ট ও বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এই রকম নিত্য নতুন লেখা পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়বেসাইট টি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ