১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর ।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর

  • ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর ।
  • ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ সংক্ষেপে লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান পাকিস্তানের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালিরা ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তারা আবার আবদ্ধ হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের রাজনৈতিক শৃঙ্খলে । এরই ফলশ্রুতিতে পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থান ঘটে ।

→ রাজনৈতিক কারণ : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে রাজনৈতিক কারণও নিহিত ছিল। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

(ক) লাহোর প্রস্তাবের সংশোধনী: ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে এ প্রস্তাব সংশোধন করে একটি মাত্র রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। কালক্রমে এ সংশোধনী শুভ ফল বয়ে আনেনি।

(খ) স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনেক পূর্ব থেকেই করে আসছিল। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যদিও তারা উক্ত আন্দোলনে স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আবার তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে । পাকিস্তানিদের তেইশ বছরের শাসনামল ছিল, কলঙ্কময়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ চেয়েছিল শোষণের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। আর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হয় '৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ।

(গ) সরকারি দমননীতি : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল সরকারি দমননীতি। সমগ্র পাকিস্তানের গণতন্ত্রমনা জনগণ যখন আইয়ুব শাসনের একনায়কসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে, সরকার তখন অসহিষ্ণু হয়ে নির্যাতন ও নিপীড়নের পন্থা অবলম্বন করে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং গণ-অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।

(ঘ) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র : ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্ষমতায় থেকে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করলে তা স্বায়ত্তশাসনের আশায় '৬৬ সালে প্রণীত ছয় দফা রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং '৬৮ - '৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থানের পথ সুপ্রশস্ত হয়।

(ঙ) জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম হয়। পরবর্তীতে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে এ চেতনার পূর্ণতা লাভ করে। সামরিক শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছয় দফা কর্মসূচির দাবি বাংলাদেশের জনমনে জাতীয়তাবাদী চেতনার গতি সঞ্চার করে।

(চ) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা : পাকিস্তান সৃষ্টির মূল কারণই ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তারা শাসনভার হাতে নিয়েই পূর্ব পাকিস্তানিদের বিভিন্ন দিক থেকে শোষণ শুরু করে। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট অভাবনীয় সাফল্য লাভ করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলা হয়। ১৯৬২ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের নামে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার অপচেষ্টা চালায়। মৌলিক গণতন্ত্র ছিল এক অভিনব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এরূপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণ ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান শুরু করে ।

(ছ) আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা : ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে আইয়ুব মোনায়েম চক্র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করলে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটায়।

(জ) ছয় দফা কর্মসূচি : ছয় দফা কর্মসূচি ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার আন্দোলনের এ কর্মসূচির উপর ভিত্তি করেই বাঙালিরা উনসত্তরের গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।

(ঝ) ছাত্রদের এগার দফা কর্মসূচি : ছয় দফা কর্মসূচি রচিত হয়েছিল পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থকে সংরক্ষণ করার জন্য। কিন্তু এগার দফা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পূর্ব বাংলার কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে শোষণ ও শাসন করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে পূর্বে পাকিস্তানে যেসব লড়াই সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ছিল বাঙালির সবচেয়ে বড় আন্দোলন ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ