আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন।

আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন
আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন

আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন

উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাসবিদগণ মন্তব্য করেন, আবু মুসলিমের জন্ম না হলে আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাই হতো না। আব্বাসীয় | আন্দোলনের নেতৃত্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন আবু মুসলিম। আব্বাসীয় আন্দোলন এবং উমাইয়া খেলাফতের পতনে তার অসামান্য অবদান ইতিহাসের সোনালি পাতায় লেখা রয়েছে। তিনি ছিলেন একসাথে একজন অসাধারণ আব্বাসীয় সংগঠক। আবু মুসলিমের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকিয়াভেলির তুলনা করা হয়ে থাকে। যার জন্য তিনি ইতিহাসে খ্যাত।

→ আবু মুসলিমের পরিচয় : নিয়ে আবু মুসলিমের পরিচয় তুলে ধরা হলো :

১. আবু মুসলিমের প্রাথমিক পরিচয় : আবু মুসলিম ছিলেন, একজন আরব বংশোদ্ভূত পারসিক মাওয়ালি বা নওমুসলিম। ৭৪৪ সালে আব্বাসীয় আন্দোলনের ইমাম মুহাম্মদ বিন আলীর মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র ইব্রাহীম আব্বাসীয়দের কর্তৃত্বে ছিলেন। আবু মুসলিমের রাজনৈতিক দ্রষ্টা ছিলেন ইব্রাহীম। তবে মুহম্মদ | তার জীবদ্দশায় পুত্র ইব্রাহীমের প্রচার কার্যে সাহায্য করার জন্য মক্কা হতে ক্রীতদাস আবু মুসলিমকে ক্রয় করে মুক্তি দেন এবং ইব্রাহীমের সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত করেন। ইব্রাহীম আবু মুসলিমের সাংগঠনিক ক্ষমতা, শিষ্টাচার, বাগ্মিতা ও সৌজন্যবোধ প্রীত হয়ে তাকে পারস্যের খোরাসান প্রদেশে আব্বাসীয় প্রচারণা ও জনমত গঠনের জন্য পাঠান। তার নেতৃত্বে খোরাসান উমাইয়া শাসন বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় ।

২. আব্বাসীয় বংশে আবু মুসলিম : আবু মুসলিম ছিলেন। সামান্য একজন্য ক্রীতদাস। পরবর্তীতে তিনি আজাদি লাভ করে ইব্রাহীমের সহচর হিসেবে পদ লাভ করেন। কিন্তু তিনি তার অসামান্য কর্মদক্ষতা, শিষ্টাচার, বিচার বুদ্ধি ও যোগ্যতায় তার রাজনৈতিক প্রভু ইব্রাহীমের মন কেড়ে নেন এবং পরবর্তীতে তিনিই আব্বাসীয় আন্দোলনে অসামান্য অবদান রেখে ইতিহাসে খ্যাতি লাভ করেন। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন আবু মুসলিমের জন্ম না হলে আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাই হতো না।

৩. খোরাসনে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন : আবু মুসলিম ইব্রাহীমের একজন সামান্য সহচর হলেও তিনি তার যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মতৎপরতা, শিষ্টাচার দ্বারা ইব্রাহীমের নিকট নিজের একটি স্থান তৈরি করেন। পরবর্তীতে তিনি আব্বাসীয় আন্দোলনের একজন সফল সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতা, শিষ্টাচার, বাগ্মিতা, সৌজন্যবোধে সন্তুষ্ট হয়ে আব্বাসীয় আন্দোলনের কর্ণধার মুহম্মদ-বিন-আলীর পুত্র ইব্রাহীম তাকে আব্বাসীয় প্রচারণা ও জনমত গঠনের জন্য খোরাসানে প্রেরণ করেন। যেখানে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেন এবং একসময় খোরাসান উমাইয়া বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিণত হয় ।

৪. খোরাসান দখল : তিনি শুধু খোরাসানে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন করেই থেমে থাকেননি বরং একসময় তিনি তার অসামান্য কর্মদক্ষতা ও চতুরতায় খোরাসান দখল করতে সক্ষম হন । খোরাসানের শাসক নসর ইবনে সাইয়ার যখন খারেজি বিদ্রোহ দমনে মহাব্যস্ত ঠিক তখনই আবু মুসলিম কালো পতাকা উত্তোলন করে প্রকাশ্যে আব্বাসীয়দের পক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি খোরাসান থেকে উমাইয়া শাসন দূর করেন।

৫. ইরাক দখলে আবু মুসলিম : খোরাসান হাতছাড়া হয়ে গেছে শুনে উমাইয়া খলিফা ইব্রাহীমকে বন্দি করে এবং তার মৃত্যুদণ্ড দেন। এ মৃত্যুতে আৰু মুসলিম অনেক কষ্ট পান। পরবর্তীতে তিনি এর প্রতিশোধস্বরূপ তার স্বীয় সেনাপতি কাহতাব ও খালিদ বার্মাকির দ্বারা ইরাকের রাজধানী কুফা দখল করেন। কুফা দখলের পর আবুল আব্বাস ও আবু মুসলিম এখানে আগমন করেন। অতঃপর ৭৪৯ সালে আবুল আব্বাস কৃষ্ণবঙ্গে আচ্ছাদিত হয়ে কুফা মসজিদে প্রবেশ করলে ইরানের আব্বাসীয় প্রচারক আবু সালমা খাপ্পাল তাকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন।

৬. আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান : আবু মুসলিমের সেনাপতি আবু আয়ুন উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় দ্বিতীয় মারওয়ানের পুত্র আব্দুলাকে পরাজিত করেন। পুত্রের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের জন্য তিনি ৭৫০ সালের ২৫ জানুয়ারি আব্বাসীয় সেনাপতি আব্দুল্লাহ বিন আলীর ও আবু হারুনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যেটি ইতিহাসে জাবের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে উমাইয়া খলিফা শোচনীয় পরাজয়বরণ করেন আর এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে উমাইয়াদের রাজত্বের সমাপ্তি ঘটে এবং আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।

৭. আবু মুসলিমের জনপ্রিয়তা : খোরাসানের আবু মুসলিমের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অনেকের মতে তার জনপ্রিয়তা আব্বাসীয় খলিফার চাইতেও অনেক ঊর্ধ্বে ছিল। যার জন্য শেষ পর্যন্ত তাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয় ।

৮. আবু মুসলিমের মৃত্যু : আবু মুসলিমের জনপ্রিয়তায় আব্বাসীয় খলিফা শঙ্কায় পড়েন। এতে তিনি বিপদবোধ করেন। কিন্তু সরাসরি তার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি ভয় পান। পরবর্তীতে তাকে অনেক প্রলুব্ধের দ্বারা রাজদরবারে নিয়ে আসেন এবং যেখানে গুপ্তঘাতক দ্বারা তাকে হত্যা করা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আবু মুসলিমের সহজ পরিচয় হলো তিনি ছিলেন অতি সাধারণ একজন গোলাম । তাকে মুহাম্মদ ইবনে আলী তার পুত্র ইব্রাহীমের জন্য ক্রয় করে আযাদ করেন। তিনি ছিলেন একজন নওমুসলিম কিন্তু তিনি তার কর্মতৎপরতা, ন্যায়পরায়ণতা, যোগ্যতা, শিষ্টাচার, ভদ্রতা, বাগ্মিতা, সৌজন্যবোধ দ্বারা সকলের হৃদয়ে স্থান পান। তিনি উমাইয়াদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে উমাইয়াদের শাসন নিরসন করেন এবং আব্বাসীয় 'বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তাইতো ইতিহাসবিদগণ তাকে আব্বাসীয় বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে করে থাকেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আবু মুসলিম খোরাসানী কে ছিলেন। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ