স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা hsc | পদ্মা সেতু রচনা pdf download

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি পদ্মা সেতু রচনা pdf download টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পদ্মা সেতু রচনা hsc  টি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা
স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা 

ভূমিকা: পদ্মা সেতু বাঙালির গৌরব, দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয় ও মর্যাদার প্রতীক। বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড়ো অর্জনগুলোর মধ্যে একটি। মাত্র দুই যুগ আগেও যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব। কল্পনার ক্যানভাসের মতো দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের সেতু আজ স্বমহিমায় পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। এই সেতু বদলে দিবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত হবে জীবনযাত্রার মান। সেই সাথে উন্মোচন করবে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প: পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু। সেতুটি দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলাকে রাজধানীর সাথে যুক্ত করেছে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ সেতু। সেতুটি বাংলাদেশের লৌহজং মুন্সিগঞ্জ থেকে শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরকে সংযুক্ত করেছে । ইংরেজি ‘ঝ’ আকৃতির সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএমের (AECOM) নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল । আদতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মনে হলেও প্রকৃত অর্থে পদ্মা সেতু পুরো দেশের অর্থনীতির জন্যই এক টেকসই ভিত্তি স্বরূপ কাজ করবে ।

“দেয়াল নয়, সেতু গড়ি”

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা: ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সাথে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার, জাইকার সাথে ৪১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং এডিবির সাথে ৬১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। ২০১১ সালের ১০ই অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা। ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা জানান। ২০১৪ সালে কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এভাবেই শত বাধা-বিপত্তি, প্রতিকূলতা পেরিয়ে ধীরে ধীরে বাস্তব রূপ লাভ করে পদ্মা সেতু ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিন বাংলাদেশ নিজস্ব সক্ষমতার চূড়ান্ত প্রকাশ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন ২০২২-এ সেতুর উদ্বোধন করেন এবং পরেরদিন এটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এক নজরে পদ্মা সেতুর অবকাঠামোগত ও নির্মাণ ব্যয়ের তথ্য:

স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা hsc | পদ্মা সেতু রচনা pdf download

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী । দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার সাথে রাজধানীর সরাসরি সংযোগ ঘটাবে এবং পুরো দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করবে। নিচে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর। পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণবঙ্গের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে । যার ফলে যাতায়াতের সময় ও ব্যয় হ্রাস পাবে। পণ্য আনা নেওয়ায় গতি বাড়বে । উপকৃত হবেন বিক্রেতা-ভোক্তা উভয়ই । শিল্পক্ষেত্রে অবদান: পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে। ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এসব এলাকার উৎপাদিত পণ্য বিশেষত কৃষি ও দ্রুত পচনশীল পণ্য সহজেই রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে। পায়রা সমুদ্র বন্দর, মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে রাজধানী ও চট্টগ্রামের সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে পুরো দেশের অর্থনীতিতে আসবে নতুন গতি প্রসার ঘটবে খুলনার হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্পের পণ্য সামগ্রীর। এ অঞ্চল হবে শিল্পায়নের নতুন কেন্দ্রবিন্দু।

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ব্যাবসা-বাণিজ্য ও নতুন নতুন শিল্পের বিকাশ হবে। পরিবহণ সুফলতা নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

দারিদ্র্য হ্রাস: অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের জীবনযাত্রার মান্নোয়নের সাথে সাথে জাতীয় পর্যায়ে ১.৯% এবং স্থানীয় পর্যায়ে ২% দারিদ্র্য কমবে।

পর্যটন সম্ভাবনা সৃষ্টি: পদ্মা সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা। দক্ষিণাঞ্চলে অনেক পর্যটন স্থান রয়েছে যা ভ্রমণপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে, কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেগুলো আশানুরূপ বিকাশ লাভ করতে পারেনি । কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, মাওয়া ও জাজিরার পুরোনো-নতুন রিসোর্টসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।

আঞ্চলিক যোগাযোগ: পদ্মা সেতু দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগের দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। সেতুর মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্তি ঘটবে এবং ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে এই সেতু আর্থিক প্রবৃদ্ধি আনবে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন: পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখবে তা নয়; বরং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইনসহ ফাইবার অপটিক্যাল কেবল দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে যা ঐ অঞ্চলের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সহায়ক হবে।

সরকারি ব্যয় হ্রাস: ৫০% ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা ফেরি সার্ভিস বন্ধ হবে। ফেরি সার্ভিস বন্ধ হলে বছরে সাশ্রয় হবে ৩৬০০ কোটি টাকা ।

কৃষি উন্নয়ন: পদ্মার ওপারের মানুষেরা এত দিন কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকলেও তা ছিল অনাধুনিক । তাছাড়া তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণেও ছিল নানারকম প্রতিবন্ধকতা। ঐ অঞ্চলে কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতো এবং আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে উৎপাদিত অনেক ফসলই নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু ঐ অঞ্চলের কৃষি খাতে বিদ্যমান এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন: বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ নির্ভরতা চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। পদ্মা সেতুর ফলে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সচল ও গতিশীল হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মোংলা বন্দর ও পায়রা সমুদ্র বন্দরও দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পদ্মা সেতুর ভূমিকা: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পদ্মা সেতুর ভূমিকা: পদ্মা সেতু প্রকল্পকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর পাড় বাঁধা হচ্ছে। ফলে ঐ এলাকায় নদীভাঙন রোধ হবে। এছাড়া নদীর দুই পাশে এবং সংযোগ সড়কের রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। এতে এসব এলাকার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবুজায়নের ফলে ওই এলাকা মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে বলে অবাধে বৃক্ষনিধন হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া সহজ হবে । এতে মানুষের জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে। ফলে বৃক্ষনিধন কমে যাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষিত হবে।

উপসংহার: স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে গৃহীত সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন- জীবিকা, দারিদ্র্যের কশাঘাতমুক্ত উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন দৃঢ় সত্যের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে যা বাংলাদেশকে উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই আজ বলতেই হয়—

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয় । —সুকান্ত ভট্টাচার্য

আর্টিকেলের শেষকথাঃ স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা hsc | পদ্মা সেতু রচনা pdf download

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা hsc | পদ্মা সেতু রচনা pdf download  টি। যদি তোমাদের আজকের এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা hsc | পদ্মা সেতু রচনা pdf download  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ