অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ ।

অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ
অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ

অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ

  • বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার প্রক্রিয়া সংক্ষেপে আলোচনা কর।
  • অথবা, বঙ্গবন্ধু কেন গ্রেফতার হয়েছিলেন?
  • অথবা, অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ 
  • অথবা, বঙ্গবন্ধু কিভাবে গ্রেফতার হন?
  • অথবা, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারের ঘটনাটি আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের বাঙালিরা যে স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্তের ফলে সে স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এ আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্যে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার করা হয় ।

→ বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার প্রক্রিয়া : বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের জন্য যে অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল তার নাম ছিল ‘অপারেশন বিগ বার্ড'। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের ৪-৫ দিন আগেই তাকে কে কীভাবে, কখন, কার নেতৃত্বে গ্রেফতার করা হবে তা নির্ধারিত ন। হয়। নিম্নে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো :

১ম পদক্ষেপ : ২৫ মার্চের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ত গ্রেফতারের জন্য পদক্ষেপ গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের দায়িত্ব অর্পিত হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থার্ড কমান্ডো ব্যাটেলিয়ানের প্রধান ব্রিগেডিয়ার (অব.) জহির আলম খানের ওপর। ২৩ মার্চ জহির চিফ অব স্টাফ অফিসে এসে জানতে পারেন যে, ২৪ অথবা ২৫ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে। সে রাতেই তিনি কতিপয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়ি বেরিকেড করেন এবং পরের দিন সকালে আবার রাস্তাঘাট চেনার জন্য ধানমন্ডি যান ।

২য় পদক্ষেপ : ২৫ মার্চ সকালে ব্রিগেডিয়ার জহির মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাথে দেখা করে নিশ্চিত হলেন যে, ঐদিন রাতেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে হবে। রাও ফরমান আলীর নির্দেশ দেন, তিনি যেন বেসামরিক গাড়িতে শুধুমাত্র একজন অফিসার নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করতে আসেন। কিন্তু সেই সময় এটা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই জহির বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের জন্য কমপক্ষে এক প্লাটুন সৈন্য দাবি করেন। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর তিনটি ট্রাক ও বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা প্রদান করা হয় ।

৩য় পদক্ষেপ : ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কোম্পানিকে অভিযানের নির্দেশনা বুঝিয়ে দেন ব্রিগেডিয়ার জহির। কোম্পানিকে তিন ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নেতৃত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে ক্যাপ্টেন সাঈদ, ক্যাপ্টেন হুমায়ূন ও মেজর বিল্লালের ওপর এবং তাদের মিলিত হওয়ার স্থান নির্ধারিত হয় এসপি হোস্টেলের মুখ করে থাকা- তেজগাঁও বিমানবন্দরের গেটে। ২৫ মার্চ রাত ১১টায় ব্রিগেডিয়ার জহির তিনটি ট্রাকসহ জিপ নিয়ে ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

৪র্থ পদক্ষেপ : চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর প্রতিবেশী কারো বাড়িতেই তখন বিদ্যুৎ ছিল না। ক্যাপ্টেন হুমায়ূনের দল প্রথমে দেয়াল টপকে বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে এবং পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ সদস্য যারা বঙ্গবন্ধুর প্রহরায় নিযুক্ত ছিল তাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এসময় গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়। এরপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সার্চ পার্টি এবং বাড়ির প্রত্যেকটি কক্ষে তল্লাশি চালায়। একটি কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পেয়ে তারা ব্রাশ ফায়ারের সাথে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। গ্রেনেডের প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির আওয়াজ ছাপিয়ে শেখ মুজিব চিৎকার করে বলেন, তাকে না,মারার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন। নিশ্চয়তা পেয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। তিনি জহিরকে বলেন যে, তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারবেন কি না। জহির তাকে তাড়াতাড়ি করতে বলেন এবং গাড়ির নিকট এসে সদরে রেডিও বার্তা পাঠিয়ে বলেন যে, তারা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করেছেন।

চূড়ান্ত পদক্ষেপ : তিনটি ট্রাকের মাঝেরটায় বঙ্গবন্ধুকে বসিয়ে তারা প্রথমে তাকে সংসদ ভবনে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে আটকে রেখে ক্যান্টনমেন্টের দিকে রওনা দেন। সেখানে লে. জেনারেল টিক্কা খানের নিকট রিপোর্ট করেন ব্রিগেডিয়ার. জহির। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যে কক্ষটিতে ছিলেন, সেখানেই রাখা হবে শেখ মুজিবকে। এরপর তাঁকে ১৪ ডিভিশন অফিসার্স মেসে স্থান্তরিত করা হয়। পরদিন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা অনুধাবন করতে পারেন যে, ঐ অফিসার্স মেস থেকে যেকোনো সময় তাকে উদ্ধারের চেষ্টা হতে পারে। তাই তাকে সেদিনই আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের চারতলায় একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকেই কয়েক দিন পর তাকে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত হুট করে বা আকস্মিকভাবে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এর জন্য উন্নত কৌশল এবং সূক্ষ্ম সামরিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল যা ‘অপারেশন বিগ বার্ড' নামে অভিহিত । পাক সামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনী ২৫ মার্চের পূর্ব থেকেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতারের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখে। এরপর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে গ্রফতার করে কিছুদিন বাংলাদেশে রাখার পর চূড়ান্তভাবে পাকিস্তানের করাচিতে প্রেরণ করা হয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অপারেশন বিগ বার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা লেখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ