১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায় ।

১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়

১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়

  • ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে যা জান লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে বিভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে বাঙালি জাতি স্বায়ত্তশাসন থেকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধ প্রথমে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। আর এ স্বাধীনতা আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। আর অসহযোগ আন্দোলন ছিল এ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক মঞ্চ। যেখানে চূড়ান্ত যুদ্ধের পূর্বে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধের সঞ্চায়ন করা হয়েছিল।

→ অসহযোগ আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব : পৃথিবীর কোনো যুদ্ধই হঠাৎ করে শুরু হয় না। তা দীর্ঘ প্রস্তুতির পর শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও অনুরূপ হঠাৎ হয়নি। এর জন্য প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল। আর অসহযোগ আন্দোলন ছিল সে কর্মরেরই প্রস্তুতি মঞ্চ। নিচে অসহযোগ আন্দোলন যে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব ছিল তা ব্যাখ্যা করা হলো :

১. প্রতিরোধ কমিটি গঠন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন জেলা উপজেলায় প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণায়, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, থানা মহাকুমা, শহর ও জেলায় স্বাধীনতা-সংগ্রাম কমিটি নামক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি এলাকায় এলাকায় মুক্তিবাহিনী গঠন করারও নির্দেশ দেন। এভাবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে উঠতে থাকে । ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন হতে থাকে ।

২. স্বাধীনতা ঘোষণা : মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিল স্বাধীনতা ঘোষণা করা। সেটা অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণে পরোক্ষভাবে প্রচার করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। অর্থাৎ ৭ মার্চের ঘোষণার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় ।

৩. সরকার বর্জন ও প্রতিরোধের সূচনা : অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে সামরিক সরকারকে প্রতিরোধ করা ও বর্জন করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই অসহযোগ আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। আর ৭ মার্চ শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরদিন থেকে দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। নেতার নির্দেশ অনুযায়ী দেশের স্কুল- কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুদ্ধ জনতা পাকবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ করতে থাকে। খাজনা আদায় বন্ধ হয়ে যায়। ১০ মার্চ সামরিক- সরকার এক সামরিক আদেশ জারি করে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও জনগণ সামরিক সরকারের নির্দেশ বর্জন করে। এভাবে সামরিক সরকারকে বর্জন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করে ।

৪. প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সূচনা : অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। ৭ মার্চ বিকালবেলা ছাত্র-ছাত্রীরা রাইফেল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ শুরু করে। ৮ মার্চ দেশে প্রশিক্ষণ শুরু হয় এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউ.ও.টি.সি-এর ক্যাডেটরা প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। একইভাবে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। ৭ মার্চের পর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন দলের সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, থানা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিরোধ প্রস্তুতি গড়ে উঠতে থাকে যা ২৬ মার্চের পর পরিপূর্ণতা পায়। এক কথায় অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ ব্যাপক প্রশিক্ষণ পর্ব চলতে থাকে যা ছিল চূড়ান্ত মুক্তিযুদ্ধের এক বিরাট মহড়া।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে গড়ে ওঠা অসহযোগ আন্দোলন ছিল চূড়ান্ত মুক্তিযুদ্ধের এক বিশাল প্রস্তুতি মঞ্চ। যে মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সামরিক সরকার বর্জন এবং দেশব্যাপী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। যার ওপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকবাহিনীর সামরিক হামলার বিপরীতে দেশব্যাপী স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। অসহযোগ আন্দোলন চলেছিল বলেই জনগণ পাক হামলা প্রতিরোধের সাহস পেয়েছিল। এককথায় অসহযোগ আন্দোলন ছিল সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায় । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ