উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব  টি।

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব

উত্তর : ভূমিকা : উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা ৬৮০ খ্রি. পরলোক গমন করেন। হজরত আলী (রা.)-এর প্রতি প্রবঞ্চনা, খিলাফতকে রাজতন্ত্রীকরণ ও মদিনা হতে দামেস্কে বিস্তার প্রেরণের চেষ্টা ইত্যাদি করলেও তিনি সাম্রাজ্যকে সুসংহত ও সুদূরপ্রসারি অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এসব কারণে তাঁর রাজত্বকালকে ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌবোজ্জল অধ্যায় সংযোজন করেছে।

— উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়া কৃতিত্ব : নিম্নে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়া কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :

১. খলিফা হিসেবে : মুয়াবিয়া খলিফা মুয়াবিয়া সর্বপ্রথম খিলাফতকে সালতানাতে রূপান্তরিত করেন। তিনি মুসলিম রাষ্ট্রকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তিনিই প্রথম শাসক যিনি নিজেকে রাজমর্যাদায় ভূষিত করেন। যেমন রাজকীয় সিংহাসন, নৃপুংসকদের দ্বারা গঠিত দেহরক্ষী দল। প্রাসাদদ্বারে রক্ষী বাহিনী জামাতে নামাযের সময় সাধারণ মানুষ হতে দূরে পৃথক তাবু এবং রেশম ও মুক্তার মূল্যাবান পোশাক পরিচ্ছেদ ব্যবহার করেন।

২. রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা : খলিফা মুয়াবিয়া ৬৭৬ খ্রি. তার পুত্র ইয়াজিদকে খিলাফতের পরবর্তী উত্তরাধিকারি মনোনীত করে নির্বাচনভিত্তিক খিলাফতকে উত্তরাধিকার ভিত্তিক সালতানাতে রূপান্তরিত করেন। তার প্রবর্তিত খলিফা মনোনয়নের পদ্ধতি পরবর্তী উমাইয়া খলিফাগণ অনুসরণ করেন এবং পরবর্তী রাজবংশ আমীরদের আমলেও তা অনুসৃত হয়।

৩. শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : খলিফা মুয়াবিয়া একজন সুদক্ষ ও প্রতিভাবান শাসক ছিলেন। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে প্রবর্তিত মজলিসে শূরা বাতিল করে প্রচলিত ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কতগুলো শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন এনেছিলেন। বস্তুত তিনিই প্রথম ও শেষ খলিফা যিনি অনুসৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও সাম্রাজ্যের দূরবর্তী প্রদেশসমূহের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে সরকার পরিচালনার পদ্ধতি অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন।

৪. বিজেতা হিসেবে : বিজেতা হিসেবে তিনি কম কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন না। তিনি নৌবহরের সাহায্যে সাইপ্রাস, রোডস, লেড ও এশিয়া মাইনরের উপকূলবর্তী অন্যান্য গ্রিক দ্বীপ জয় করেন। প্রাচ্যেও তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন। প্রাচ্যে কাবুল, গঞ্জনি, বলব, কান্দাহার, বুনারা, সমরখন্দ, তিরমিজ প্রভৃতি জয় করেন। উত্তর আফ্রিকা বিজয় ছিল তার রাজত্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

৫. যোগ্য শাসনকর্তা নিয়োগ : মুয়াবিয়া একজন প্রতিভাবান শাসক ছিলেন। তিনি বিশৃঙ্খলার মধ্য হতে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন করেছিলেন। এর মূল রহস্য ছিল যোগ্য শাসনকর্তা নিয়োগ। রাজ্য সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য যোগ্য মুসলিম শাসকদের পাশাপাশি তিনি অমুসলিম ব্যক্তিদেরও রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করতেন। খ্রিস্টান ইবনে উসাল তার চিকিৎসক ছিলেন ও হিমসের অর্থ বিভাগীয় শাসনকর্তা ছিলেন। খ্রিস্টান তাগলিক গোত্রের আল সাখতার মুয়াবিয়ার সভাকবি ছিলেন।

৬. সামরিক বাহিনী গঠন : সামরিক সংগঠক হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বি। একটি বিশাল শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গড়ে বিদ্রোহ দমনে প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ়করণে এবং সাম্রাজ্যের ভিত্তি শক্তিশালীকরণে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

৭. নৌবাহিনী গঠন : ইসলামের ইতিহাসে তিনি সর্বপ্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। উসমান (রা.)-এর শাসন আমলে সিরিয়ার শাসনকর্তা থাকাকালে নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। শুধু তাই নয় নৌবাহিনীর উন্নতির জন্য ভূমধ্যসাগরে একটি শক্তিশালী নৌঘাঁটি স্থাপন করেন। এই বাহিনীর সহায়তায় ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সিসিলি, রোর্ডস, সিজিকাস দখল করেন।

৮. সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাজধানীতে একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রদেশ সমূহ হতে প্রতিনিধিগণ সচিবালয়ের পরামর্শ সভায় যোগ দিয়ে খলিফাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। আরবি ভাষা দ্বারা সচিবালয়ের কার্য নির্বাহ করা হতো কিন্তু প্রদেশগুলোতে গ্রীক, ফারসী ভাষা প্রচলিত ছিল।

৯. উমাইয়া রাংশের প্রতিষ্ঠাতা : হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামি খিলাফতকে রাজতন্ত্রে পরিণত করলে তিনি সাম্রাজ্যকে সুসংহত এবং সুদৃঢ় করে শাসক হিসেবে যে অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার ২০ বছরের শাসনকালে তিনি দেশকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সাধন করেন। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, “এইরূপে মুয়াবিয়া কেবল নতুন এক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, হজরত ওমরের পরে খিলাফতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন।”

১০. শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা : রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া শিল্প ও সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ঐতিহাসিক শিবলী নোমানের মতে, তিনি বিখ্যাত খ্রিস্টান চিকিৎসক ইবনে আসানকে দরবারে আমন্ত্রণ করেন এবং হিমস প্রদেশের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে লিখিত কয়েকটি পুস্তক আরবি ভাষায় অনুবাদে করেন। অপর একজন খ্রিস্টান আল আখতাল মুয়াবিয়ার সভাকবি ছিলেন, উদারতা, সহিষ্ণুতা, সৌজন্যমূলক ব্যবহার এবং ধর্মীয়- নিরপেক্ষতায় তিনি তার সমসাময়িক রোমান সম্রাট কনস্টানস এবং গোলেটাস অপেক্ষা নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।

১১ উদারতা ও সহিষ্ণুতা : খলিফা মুয়াবিয়া ছিলেন অত্যন্ত উদার ও ন্যায়নিষ্ঠ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের নিকট তিনি অত্যন্ত কঠোর, দরিদ্র ও দুর্বলদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও সুবিবেচক ছিলেন। ঐতিহাসিক ভনক্রেমার বলেন, “সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়া ছিলেন উদার হৃদয় শাসক।” তিনি ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে গুণীর সমাদর করতেন এবং অমুসলমানদেরকে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দান করে রাজকার্যে নিয়োগ করতেন ।

১৬. ধর্ম নিরপেক্ষতা : মুয়াবিয়া ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। ইসলামের প্রাথমিক যুগের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের একজন ধর্মীয় শাসক হলেও তিনি বাইজান্টাইন ও পারসিক সম্রাটদের মতো একজন বাস্তববাদী শাসক ছিলেন। শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক ওয়েল হার্ডসেনের মতে, মুয়াবিয়া তাঁর পূর্ববর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৩. দৈনন্দিন জীবনযাত্রা : ফজরের নামাজের পর তিনি নগরাধ্যক্ষের বর্ণনা শ্রবণ করতেন। তারপর মন্ত্রী ও সভাসদগণ দৈনন্দিন ডাক নিয়ে আসতেন প্রাতঃরাশের সময় একজন সম্পাদক প্রদেশসমূহ হতে প্রেরিত চিঠি পত্রাদি পড়ে শোনাতেন। এর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পূর্বে দুপুরের খাবার খেতেন। আসরের নামাজের পর কার্য নির্বাহ কল্পে পুনরায় দর্শন দিতেন। রাতের আহার গ্রহণ করে আরেকবার কিছুক্ষণের জন্য অধিবেশন করে দিনে কার্য সমাধা করতেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়া ইসলামের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি তার দক্ষতা, সুনিপুণ কূটনৈতিক কৌশল এবং চাতুরতার দ্বারা ইমাম হাসানকে পরাজিত করে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করলেও তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, “তিনি তার উমাইয়া উত্তরাধিকারীদের জন্য নম্রতা, উদ্যম, বিচক্ষণতা ও রাজনীতি জ্ঞানের একটি অনবদ্য নজির রেখে গেছেন, অনেকে ইহার সমকক্ষ হতে চেষ্টা করেন, কিন্তু খুব কমই সফল হন। তিনি আরব নৃপতিদের মধ্যে কেবল প্রথমই ছিলেন না, তিনি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠও ছিলেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুয়াবিয়ার কৃতিত্ব  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ