bangla data

আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর ।

আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর
আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর

আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় আন্দোলন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ আন্দোলনের জন্যই উমাইয়া বংশের পতন এবং আব্বাসীয় বংশের উত্থান ঘটে। যে সময় উমাইয়া শাসকদের অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা ও চারিত্রিক অধঃপতনের কারণেই আব্বাসীয় বংশের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে।

মুসলিম জাহানের খিলাফতের প্রশ্নে আব্বাসীয় শাসকদের আন্দোলন অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। এ আন্দোলনের ফলে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। আর এ উমাইয়া বংশের ধ্বংস্তূপের ওপর আবুল আব্বাস আস সাফফাহ আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। 

সেজন্য তাঁকে আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তিনি খিলাফত গ্রহণের পর আব্বাসীয় শাসননীতির মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আব্বাসীয় আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

→ আব্বাসীয়দের পরিচয় : হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর চাচা ছিলেন আল আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম। তাঁর চাচার নাম অনুসারেই এ বংশের নামকরণ করা হয়। আল আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিমের ৪ জন পুত্র ছিল। 

আব্দুল্লাহ, ফজল, উবায়দুল্লাহ এবং কায়সান। তারা প্রত্যেকেই সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তারা হযরত আলীর সমর্থকও ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠপুত্র আব্দুল্লাহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এবং ইতিহাসের পাতায় ইবনে আব্বাস নামে পরিচিত। ইবনে আব্বাসের পুত্র ছিলেন আলী। 

ইবনে আব্বাসের মৃত্যুর পর পুত্র আলীই যাবতীয় কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আলী ৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মদ পিতার স্থান দখল করে। মুহাম্মদই আব্বাসীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। অতএব ইবনে আব্বাসের পরবর্তী বংশধরের সকলেই আব্বাসীয় নামে পরিচিত।

→ আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি : আব্বাসীয় আন্দোলন আকস্মিকভাবে শুরু হয়নি। যায়েদের হত্যা, আরব ও অনারব মুসলমানদের মধ্যে বৈষম্যমূলক নীতি, হিমারীয় ও মুদারীয় দ্বন্দ্ব প্রভৃতি কারণে আব্বাসীয় আন্দোলন শুরু করেন। 

উমাইয়া শাসনের শেষ দিকে আবু মুসলিম তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলেন। আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. সর্বজনীন আন্দোলন : আব্বাসীয়গণ ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রের লোক। এদিক থেকে তারা উমাইয়াগণ অপেক্ষা মহানবির স্বগোত্রীয় এবং নিকটবর্তী হওয়ায় জনসাধারণ পরিবারের স্বার্থরক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন ভেবে জনগণ বিশেষ করে মাওয়ালী, খারিজী, শিয়াগণ এ আন্দোলনকে সমর্থন করেন। 

এতদিন উমাইয়া শাসনের অত্যাচারে জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে আহলে বায়াত নামে আব্বাসীয় আন্দোলন শুরু হলে সকল সম্প্রদায়ের লোক উমাইয়াদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য তাদের সমর্থন করে। এতে করে আব্বাসীয় আন্দোলন উমাইয়াদের বিরুদ্ধে সর্বজনীন আন্দোলনের রূপ লাভ করে ।

২. উমাইয়াদের দুর্বলতার সুযোগ : উমাইয়া শাসনের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে মধ্য এশিয়ার তুর্কি ও খারিজি বিদ্রোহ আর্মেনিয়া ও এশিয়া মাইনরে গ্রিক তৎপরতা স্পেন ও ফ্রান্সের খ্রিস্টান গোলযোগ এবং এ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ শাসকদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় উমাইয়া শাসনের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. মুহাম্মাদ-বিন-আলী কর্তৃক প্রচারাভিযান : মুহাম্মদ-বিন- আলী উমাইয়াদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারকার্য চালাতে থাকেন। তিনি বজ্রকণ্ঠে প্রচার করতে থাকেন যে, একমাত্র আলীর বংশধররাই খিলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। এভাবে আব্বাসীয়দের সমর্থন বহুগুণে বেড়ে যায় যা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।

৪. আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ : ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ মৃত্যুবরণ করলে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইব্রাহিম পিতার মনোনয়ক্রমে খিলাফতের দয়িত্ব ভার গ্রহণ করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে দল মত নির্বিশেষে বহু সুযোগ্য নেতা আন্দোলনের পতাকাতলে সমবেত হয়। এভাবে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ।

৫. ইব্রাহিম ও আবু মুসলিমের অবদান : মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইব্রাহিম উমাইয়া বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং সৌভাগ্যক্রমে তিনি আবু মুসলিম খোরাসানের সহযোগিতা লাভ করেন। তিনি অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাই তার নেতৃত্বে খোরাসান ও অন্যান্য এলাকায় আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি কৌশলে সমপ্ত বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করেন।

৬. আবুল আব্বাসকে খলিফা ঘোষণা : ইমাম ইব্রাহিমের পূর্ব মনোনয়নক্রমে কুফার মসজিদে সমবেত জনতার সম্মুখে আবু মুসলিম আবুল আব্বাসকে মুসলিম জাহানের খলিফা বলে ঘোষণা করেন। আনুগত্য লাভ করে আবুল আব্বাস উমাইয়াদের নৃশংসতার প্রতিশোধ গ্রহণের বজ্র কঠিন শপথ গ্রহণ করেন ।

৭. জাবের যুদ্ধ এবং উমাইয়াদের পতন : খোরাসান, পারস্য ও ইরাকের পতনে উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারাওয়ান ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। আবু আয়ুনের হাতে তার পুত্র আব্দুল্লাহর পরাজয় তার বুকে শেলের মতো বিধল। 

খলিফা স্বয়ং পুত্রের পরাজয়ের গানি মোচনের জন্য ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ১,২০,০০০ সৈন্য নিয়ে টাইগ্রিস নদী অতিক্রম করে জাব নদীর দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে আবু আয়ুনের সাহায্যর্থে আবুল আব্বাস একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন এবং সম্মলিত বাহিনীর নেতৃত্বে তার পিতৃব্য আব্দুল্লাহর উপর অর্পণ করেন। 

মারওয়ান জাব নদীর পশ্চিম তীরে এবং আব্দুল্লাহ পূর্ব তীরে শিবির স্থাপন করে। বহুদিন উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকলে জয়-পরাজয় প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। উমাইয়াগণ প্রথম দিকে বীরত্ব প্রদর্শন করে কিছু সুবিধা করতে পারলেও আব্বাসীয়গণ প্রচণ্ড আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে থাকে। 

ইব্রাহিমের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আব্দুল্লাহ সৈন্য বাহিনীকে ক্ষিপ্ত করতে থাকেন। অবশেষে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ান শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে রণক্ষেত্র থেকে প্রাণভয়ে পলায়ন করেন ।

৮. আব্বাসীয় খিলাফত লাভ : ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। আবুল আব্বাস পরিকল্পিতভাবে উমাইয়াদের নিধন যজ্ঞের আয়োজন করেন। জাবেরের যুদ্ধে সর্বশেষ উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানকে পরাজিত ও নিহত করে আব্বাসীয় খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন। 

অতঃপর তিনি আবু ফুটস নামক একস্থানে উমাইয়া বংশীয় ৮০ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি আস-সাফফাহ বা রক্ত পিপাসু নামে আখ্যায়িত হন। আবুল আব্বাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আব্বাসীয় রাজবংশ ইসলামের ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠার পেছনে আব্বাসীয় আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । উমাইয়া খলিফাগণের অত্যাচারে ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ করার সুযোগে আব্বাসীয়গণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। এভাবে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ