ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর
ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর

ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর 

উত্তর : ভূমিকা : নিজের যোগ্যতা ও চেষ্টা দ্বারা যে সকল মানুষ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে সাফারী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াকুব ইবনে আল লায়েস। তিনি ছিলেন একজন দস্যুদলের নেতা। 

পরবর্তীতে নিজের যোগ্যতা গুণাবলি, ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী সিজিস্তানের এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে ।

ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব : নিম্নে ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সাফফারি বংশের প্রতিষ্ঠাতা : ইয়াকুব ইবনে লায়েস সাফফারি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি বীরত্বপূর্ণ ও কুশলী আচরণের জন্য সিজিস্থানে খলিফার গভর্ণরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ফলে গভর্ণর তাকে তার সেনাদলের নেতৃত্বে বসিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিজ শক্তি ও দক্ষতার বলে তিনি সাফফারি বংশের প্রতিষ্ঠা করেন ।

২. সিস্তান, আররুখখাজ ও যামীনদাওয়ার জয় : তিনি ক্ষমতায় এসেই প্রথমে সিস্তান তার নিয়ন্ত্রণে আনেন। সিস্তান দখলের পর তিনি আফগানিস্তানের আররুখখাজ ও যামীনদাওয়ার দিকে অগ্রসর হন এবং তা বিজয় করেন।

৩. গায়না গারদীয় যাবুলিস্তান দখল : আররুখখাজ ও যামীনদাওয়ায় নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে তিনি সময় জুনবিল বংশীয় রাজাদের পরাজিত ও নিহত করে গায়না গারদীয় যাবুলিস্তান দখল করেন।

৪. কাবুল ও বামিয়ান অঞ্চল জয় : যাবুলিস্তান দখল করার পর তিনি আফগানিস্তানের কাবুল ও বামিয়ান অঞ্চল জয় করার জন্য অগ্রসর হন এবং এই অঞ্চল জয় করেন। সেই সাথে তখন থেকে ধন-সম্পদ সহ দাসদাসী সংগ্রহ করেন ।

৫. হীরাতে তাহিরী শাসনের অবসান : তিনি তাহিরী রাজবংশের পতন ঘটিয়ে সেখানে নিজ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।

৬. খারিজীদের দমন : ৮৭০-৮৭১ সালে তাহিরী রাজবংশের পতনের পর ইয়াকুব টায়গ্রিস অঞ্চলে অভিযান প্রেরণ করেন। ফলে বহু সংখ্যক খারিজী তাঁর বশ্যতা স্বীকার এবং তার অধীনে চাকরি গ্রহণ করে। এই খারিজিগণ তার সেনাবাহিনীতে একটি বিশেষ শাখা গড়ে তোলে ।

৭. খোরাসান, কিরমান, ফারস ও খুজিস্তান খলিফাদের বিরুদ্ধে অভিযান : তিনি সিস্তানের পশ্চিমে অবস্থিত অধিকতর উর্বর ও আকর্ষণীয় ভূখন্ডের দিকে নজর দেন। যার জন্য খুরাসান, কিরমান, ফারস ও খুজিস্তান ইত্যাদির বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করে। কিরমান জয়ের জন্য খলিফা তাকে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

৮. ফারস ও মাকরান দখল : বেলুচিস্তানের দক্ষিণাংশ সব থেকে বেশি কর আদায় অঞ্চল ছিল এই দুটি প্রদেশ ইয়াকুব ইবনে আল লায়েস দখল করেন।

৯. খলিফার সাথে যুদ্ধ : আব্বাসীয় খলিফাদের করের প্রধান অঞ্চল সহ তাহিরী রাজবংশের পতন ঘটানো আব্বাসীয় খলিফা তা মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি আব্বাসীয় খলিফার বিরুদ্ধে টাইগ্রিস নদীর তীরে 'দায়রুল আবুল' নামক স্থানে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে পলায়ন করেন ।

১০. ইসলাম প্রচারে কৃতিত্ব : ইয়াকুব কর্তৃক যে সকল অঞ্চল যেমন— গায়না, গারদিশ, কাবুল, যাবুলিস্তান তার অধীনে আসে সে সকল অঞ্চলে তিনি ইসলাম প্রসার ও প্রচার করে।

১১. নেতৃত্ব গুণ : ইয়াকুব ইবনে আল লায়েসের নেতৃত্ব গুণ ছিল অপরিসীম। তিনি প্রথমে একজন তাম্রকার ছিলেন। এর পর দস্যুদলের নেতা। তখন থেকে খলিফা তাকে খোরাসানের সেনাবাহিনীর প্রধান করেন। তিনি তার নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

১২. রাজ্য বিস্তার : ইয়াকুব ইবনে আল লায়েসের রাজ্য গারস্য, গজনবী, ফারস, বেলুচিস্তান এমন কি ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

১৩. খলিফার সাথে সম্পর্ক : ইয়াকুব ইবনে আল লায়েসের সাথে আব্বাসীয় খলিফার দুই ধরনের সম্পর্কের কথা জানা যায়। যেমন- 

(ক) প্রথম দিকে সুসম্পর্ক ছিল;

(খ) পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

তিনি মুদ্রায় খলিফার নামের সাথে নিজ নাম চালু করেন। এবং তিনি ২-৩ অংশ রাজস্ব প্রদান করার কথা থাকলেও তা করেননি। যার জন্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

১৪. শিক্ষাসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা : ইয়াকুব ইবনে লায়েস | শিক্ষা-সংস্কৃতির উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল-কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ৷

১৫. যোগাযোগ ব্যবসথার উন্নয়ন : অবহেলিত ও অনুন্নত সিজিস্থান অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার সাম্রাজ্যের সর্বত্র রাস্তাঘাট, পুল ও সরাইখানা নির্মাণ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইয়াকুব ইবনে আল লায়েস নিজের যোগ্যতা বলে একবারে নীচু পর্যায় থেকে সমাজের উঁচু পর্যায়ে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। 

তিনি আব্বাসীয় খলিফাদের নামে মাত্র অনুগত ছিলেন। তিনি তার রাজ্য নিজের ইচ্ছামত শাসন করতেন। তাই ইতিহাসের ক্ষুদ্র রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার গুরুত্ব অপরিসীম।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইয়াকুব ইবনে লায়েসের কৃতিত্ব আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ