মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুজিবনগর সরকার গঠন বর্ণনা ।

মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা
মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা

মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা

  • মুজিবনগর সরকার গঠন সম্বন্ধে কী জান? মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর ।
  • অথবা, মুজিবনগর সরকার গঠন লিখ। স্বাধীনতা যুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।

উত্তর : ভূমিকা : মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। 

বাঙালির মুক্তির বাসনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমর্থনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা ছিল মুজিবনগর সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্ব। 

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। 

এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও পরিচিত হয় মুজিবনগর সরকার নামে ।

→ মুজিবনগর সরকারের গঠন : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের পর এক আদেশ বলে বাংলাদেশের উপর অস্থায়ী সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় এবং শেষ হয় মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রথম পর্যায়। নিম্নে মুজিবনগর সরকারের গঠন প্রণালি আলোচনা করা হলো :

→ মুজিবনগর সরকারের গঠন : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের পর এক আদেশ বলে বাংলাদেশের উপর অস্থায়ী সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় এবং শেষ হয় মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রথম পর্যায়। নিম্নে মুজিবনগর সরকারের গঠন প্রণালি আলোচনা করা হলো :

→ মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। এসময় মুজিবনগর সরকারের কাঠামো ছিল নিম্নরূপ :

  • রাষ্ট্রপতি- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান কারাগারে বন্দি।
  • উপ-রাষ্ট্রপতি - সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। 
  • প্রধানমন্ত্রী - তাজউদ্দীন আহমেদ ।
  • অর্থমন্ত্রী - এম মনসুর আলী
  • স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী - এ, এইচ, এম, কামারুজ্জামান । ) 
  • আইন ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী - খন্দকার মোশতাক আহমেদ । 
  • প্রধান সেনাপতি - কর্নেল (অবঃ) এম.এ.জি ওসমানী 
  • চিফ অব স্টাফ- কর্ণেল (অবঃ) আব্দুর রব।
  • বিমানবাহিনী প্রধান - গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকার ।

মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ : ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন মুজিবনগরে বহু দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, গণপরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং মুক্তিসেনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার শপথগ্রহণ করেন।

উপদেষ্টা পরিষদ : প্রবাসী সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়। 

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অধ্যাপক মোজাফর আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মণি সিং, কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর এবং আওয়ামী লীগের ৫ জন প্রতিনিধি নিয়ে এ উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অতুলনীয় । 

যুদ্ধে গতিবেগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

১. প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন : এ সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন মুক্তাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকায় বহু প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ স্থাপন করে এবং ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ।

২. বেসামরিক প্রশাসন গঠন : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বেসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । আর এজন্যই সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তোলা হয় ।

৩. মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা : মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধে দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। 

মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ঠিক রাখা এবং বিভিন্ন সেক্টর ও গেরিলাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়সাধনের দায়িত্ব মুজিবনগর সরকার নিষ্ঠার সাথে পালন করে।

৪. সর্বস্তরের জনগণের আশার আলো উদয় : পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের মাত্রা যখন বেড়েই চলেছিল, তখন মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। 

ফলে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে আশার আলো উদিত হয় এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

৫. জনমত সৃষ্টি : স্বাধীনতাযুদ্ধের লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তা, পাকবাহিনীর বর্বরতা, মুক্তিবাহিনীর সাফল্য প্রভৃতি বিষয় বহির্বিশ্বে প্রচার করে জনমত সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকার প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল ।

৬. বিভিন্ন গণমাধ্যম পরিচালনা : মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ প্রদান করতে থাকে। 

মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে উদ্দীপ্ত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দেশাত্মবোধক গানগুলো এবং চরমপত্র অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূ ভূমিকা পালন করে ।

উপসংহার : ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ সরকার প্রবাসী বা অস্থায়ী সরকার হলেও মুক্তিযুদ্ধে এর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। 

এ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ছিল অত্যন্ত বিজ্ঞ ও কুশলী। তাদের দক্ষ পরিচালনা, সহযোগিতা ও উপদেশের ফলে বাংলার পূর্বাকাশে উদিত হয়েছে স্বাধীনতার লাল টুকটুকে সূর্য ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুজিবনগর সরকার গঠন ও কার্যাবলী

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যক্রম বর্ণনা । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ