বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন

  • ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
  • অথবা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব লিখ। 
  • অথবা, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব/তাৎপর্য কি?

উত্তর : ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ভাষণকে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৮৬৩ সালে প্রদত্ত বিখ্যাত গ্যাটিসবার্গ বক্তৃতার সাথে তুলনা করা হয় । লিংকনের ভাষণের মতোই বঙ্গবন্ধুর ভাষণও জনগণের তীব্র স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে এবং ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করে। এ ভাষণের মধ্যদিয়ে শেখ মুজিব বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের পথকে প্রশস্ত করেন এবং অসহযোগ আন্দোলনকে আরো বেগবান ও গতিশীল করে তোলেন। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরোক্ষবাণী জনগণের কাছে তুলে ধরেন। যার দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে স্বাধীনতাকামী জনগণ মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম

→ বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব : ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। 

এ ভাষণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি স্বাধীনতার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। নিচে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :

১. পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বঞ্চনা : ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতে বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রতি বৈষম্যের চিত্রটি তুলে ধরে বাঙালিকে নিজ অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করেন। 

পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তা পূর্ব বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল ।

২. অসহযোগ আন্দোলনের ডাক : বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। 

দেশবাসীকে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এ অসহযোগ আন্দোলনকে আস্তে আস্তে সংগ্রামে পরিণত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিতে চাই, আজ থেকেই এই বাংলাদেশের কোর্টকাচারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।” এভাবে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতার প্রতি উৎসাহিত করেন।

৩. মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ : প্রত্যেক বাঙালি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিরস্ত্র বাঙালির প্রস্তুতির বিপরীতে ছিল সুসজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী । 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ অবস্থা পূর্বেই অবলোকন করে ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। 

তিনি তার ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে বলেন, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। 

যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।”

৪. দেশরক্ষার আহ্বান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জনগণকে দেশ রক্ষার আহ্বান জানান। 

যার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণ দেশরক্ষার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশরক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মনে রাখবেন, বাঙালি-ননবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। 

আমাদের যেন বদনাম না হয়। কেননা শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। তাই এসব শত্রুবাহিনীর কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি।

৫. যুদ্ধের পরোক্ষ ঘোষণা : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে মক্তিযুদ্ধের পরোক্ষ ঘোষণা ছিল । এখানে দেশকে মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। 

তিনি এ ভাষণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘোষণা না দিলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ ঘোষণার নির্দেশ দেন। যা মুক্তিকামী জনগণের জন্য ছিল একধরনের গ্রিন সিগন্যাল । 

তিনি ভাষণে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি আরো বলেন, “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো।”

৬. অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা এ অর্জন করেছিল। সবাই ধরে নিয়েছিলো এবার হয়তো দেশবাসীর না অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি ঘটবে। 

কিন্তু এ মুক্তি অর্জিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়নি। তাই ৭ বি মার্চের ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন : নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। 

আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলী বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।” এভাবে শেখ মুজিব জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা ঘোষণা করেন ।

৭. সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশনা : পাকিস্তানে সে সময় অনেকগুলো ক্যান্টনমেন্ট ছিল এবং সেখানে অবস্থান করছিল অনেক সশস্ত্র সেনা। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে নিরীহ বাঙালির উপর আক্রমণ না করার আহ্বান জানান । 

সাথে সাথে এও জানানো হয় যে যদি হামলা চালানো হয়, তবে এর সমুচিত জবাবও দেওয়া হবে। তার ভাষায়, “তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। 

কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না, সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।”

৮. দেশপ্রেমের বাণী : বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ব্যক্তি বা দলের চেয়ে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন দেশের প্রাধান্যকে। তিনি ক্ষমতা চাননি। 

চেয়েছেন এদেশের মানুষের মুক্তি এবং প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন এদেশের মানুষের অধিকার। তিনি জনগণের মাঝে দেশপ্রেমের বাণী প্রচার করে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন। “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।”

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়। 

কেননা এ ভাষণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি দেশকে রক্ষার জন্য মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধের পর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। 

আর এ মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ ছিল এক অমিয় নির্দেশ। এ ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। মোটকথা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ও তাৎপর্যপূর্ণ ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বর্ণনা করুন । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ