বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর ।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ বিশ্লেষণ কর।
  • অথবা, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা পর্যালোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশে নানামুখী অনিয়ম দুর্নীতি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আজও পরিপূর্ণ করতে দেয়নি। 

এ দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক নিম্ন শহরের চেয়ে গ্রামের মান আরও নিম্নমানের, গ্রামের মানুষ নানা রকম স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। 

একদিকে জনগণ স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে পাচ্ছে না অন্যদিকে চিকিৎসার অভাবে বহুলোক মারা যাচ্ছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

→ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ : দিনের পর দিন বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়ছে না । ফলে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

→ নিম্নে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. কার্যকরী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের অভাব : বাংলাদেশে এখনও স্বাস্থ্যনীতি রয়েছে। কিন্তু এ নীতি থাকলেও তা সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন ও কার্যকরণ করা হয় না। ব

র্তমানে দেশের অধিকাংশ লোক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। পরিবার পরিকল্পনা বৃদ্ধি ও সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হয় না। চিকিৎসা সেবা এখনও সহজলভ্য হয়নি। যার ফলে মানুষ স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

২. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি জনবহুল দরিদ্রতম দেশ। এ দেশের প্রধান সমস্যা হলো অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে প্রায় প্রতি কিলোমিটার ১০০০ লোক বাস করে। 

কিন্তু এসব জনগণকে সামাল দিতে হয়। সরকার সব সময় সামাল দিতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

৩. চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের অভাব : বাংলাদেশে দিনের পর দিন ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার তুলনায় চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে না। 

প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উপজেলা স্বাস্থ্য Compley থাকলেও ঐ সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ থাকে। 

সেখানে বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষ তা গ্রহণ করতে পারে না। তাই দিন দিন বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও তাদের চিকিৎসা সেবা প্রশ্নবিদ্ধ ।

৪. আধুনিক উন্নত চিকিৎসার স্বল্পতা : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কথা বাদ দিলে বলা যায় অন্যান্য শহরে আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা নেই বললেই চলে। 

দিনদিন বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না এবং সকল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সাধারণ জনগণের পক্ষে সম্ভব নয়।

৫. চিকিৎসকের অভাব : বাংলাদেশে ১৭টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে এবং প্রায় ২৫ ডজনের বেশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে কিন্তু এ কলেজগুলো থেকে পাস করা ছাত্রসংখ্যা প্রায় কয়েক হাজার। 

এদের মাঝে অনেকেই অধিক টাকার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায় ফলে দেশে পাস করা ডাক্তারের স্বল্পতা দেখা যায় এবং সরকারিভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ডাক্তার গ্রামে যেতে চায় না। কিন্তু হাসপাতালে রোগী অনেক থাকে ।

৬. দারিদ্র্যতা ও আর্থিক অনটন : বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র হওয়ায় এদেশের অন্যতম সমস্যা হলো দারিদ্র্যতা। দারিদ্র্যতার সমস্যা থেকে হাজার সমস্যার উদ্ভব হয়। 

দারিদ্র্যের কারণে এদেশের বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে তারা ঔষধ কিনতে ও ভালোমানের ডাক্তার দেখাতে পারে না। 

অর্থের * অভাবে তারা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর রোগ নির্ণয় পরীক্ষানিরীক্ষা ব করাতে সক্ষম হয় না। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিভিন্ন - স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে এবং অকালে মারা যায়।

৭. হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি ও ইউনানি : প্রাচীন চিকিৎসার মধ্যে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি ও ইউনানি চিকিৎসা অন্যতম। অতীতে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এসব চিকিৎসার সম্মুখীন হত। 

বর্তমানেও অনেক মানুষ এ ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকে বিশেষ করে হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা কিন্তু আমাদের দেশে এসব চিকিৎসা উন্নত না হওয়ায় এ চিকিৎসা থেকে জনগণ খুব বেশি উপকার পাচ্ছে না ।

৮. সামাজিক বৈষম্য সমস্যা : বাংলাদেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আর এ সমস্যার শিকার হয় দরিদ্র মানুষেরা। 

তারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে গিয়ে আরো দরিদ্র হয়ে যায়। ধনীদের অনেক টাকা থাকার কারণে তাদের অনেক ব্যক্তিগত চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা নেবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। 

মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক সময় তারা ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ফিরে যায় এবং পরের দিন আসতে বলে । 

অনেক ভোগান্তির পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দেখা যায় ডাক্তাররা ঠিকমতো তার সেবা নেয় না। সরকারি হাসপাতালে ঔষধ দেবার নিয়ম থাকলেও তা তারা পায় না । ঔষধ আগেই বিক্রি হয়ে যায় ।

৯. চিকিৎসকদের স্বার্থপরতা : আমাদের দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক স্বার্থপরতার চরম শীর্ষে অবস্থান করে। 

তারা মোটা অংকের ভিজিট পি নেবার পরও যেন তাদের স্বার্থ শেষ হয় না তারা চুক্তিবদ্ধ হয় বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে এবং সেখানের পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো জায়গার পরীক্ষা তারা গ্রহণ করে না মাঝে মাঝে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে শুধু ঐ কোম্পানির ঔষধ দেয় এবং কোম্পানি ডাক্তারকে মোটা অংকের টাকা দেয়। তাই ডাক্তারের স্বার্থ রোগীর স্বার্থকে উপেক্ষা করে ।

১০. চিকিৎসা সেবা বাণিজ্যিকীকরণ : প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসাসেবা একটি মানবিক সেবা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসলেও বর্তমানে অধিকাংশ চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এটা মানবিক সেবা হিসেবে দেখেন না। 

তার চিকিৎসাসেবাকে মানবিক সেবার পরিবর্তে এটাকে অর্থ লাভের একটি অন্যতম পণ্য হিসেবে বিবেচিত করে। 

দেখা যায় তার যদি কোনোভাবে ছলচাতুরি করে রুগ্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারে। চিকিৎসাসেবা বাণিজ্যিকীকীকরণ বন্ধ না করলে জনগণ তাদের সেবা সঠিকভাবে পাবে না ।

১১. লিঙ্গ বৈষম্যতা : বাংলাদেশে লিঙ্গবৈষম্যতা একটি চরম সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে দেখা যায় মহিলারা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। 

তাছাড়া গাইনি বিভাগে পর্যাপ্ত নারী ডাক্তার না থাকায় তারা নানারকম সমস্যায় পড়ে। অনেক সময় কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই কোনো ক্যান্সার ছাড়াই মহিলাদেরকে জরায়ু বা ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দিতে বলা হয়।

 যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ২২ শতাংশ মহিলা চিকিৎসক এবং সোভিয়েতে প্রতি ৪ জনে ৩ জনই মহিলা সেখানে বাংলাদেশে ৫ শতাংশ মহিলা ডাক্তার ।

১২. জনসাধারণের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার : বাংলাদেশে অধিকাংশ লোক নিরক্ষর। তারা চিকিৎসা সম্পর্কে অজ্ঞ। এ অশিক্ষা ও কুসংস্কারের কারণে তারা বিদ্যমান চিকিৎসাসেবা নিতে চায় না। 

তারা অশিক্ষার কারণে গ্রামের অর্ধশিক্ষিত ও হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করে। ফলে তারা অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয়। 

আবার মাঝে মাঝে তারা প্রতারিত হয় এবং চিকিৎসক তাদের নিম্নমানের ঔষধ দেয় ফলে সেগুলোর সেবনের ফলে তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং অকালে মারা যায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুস্বাস্থ্য মানব জীবনে শান্তির বাহন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে নানা রকম দুর্নীতি অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। নানা রকম ত্রুটি বিদ্যমান। চিকিৎসকের অভাব চিকিৎসকদের অসদাচরণ ও স্বার্থপরতা। 

জনসাধারণের অজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব, জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে এদেশের স্বাস্থ্য সেবায় যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে তা আরো দীর্ঘয়িত হচ্ছে এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও জনসাধারণের অধিক সচেতনতা খুবই জরুরি।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যাগুলো আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ