গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর।

গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর
গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর

গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষণার উদ্দেশ্য সংগৃহীত তথ্যের সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবরণ। গবেষণা কাজের সর্বশেষ ধাপ হলো গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন। একটা গবেষণার পূর্ণতা প্রকাশ পায় প্রতিবেদন সম্পন্ন করার মাধ্যমে। 

পাঠকের নিকট গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত তথ্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তথা সামগ্রিকভাবে গবেষণার ফলাফল পৌঁছে দেওয়ার জন্যই গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। 

গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামো নেই। প্রতিবেদনটি এমন হওয়া উচিত যেন তাতে গবেষকের উদ্দেশ্য ও প্রাপ্ত ফলাফল সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

গবেষণা প্রতিবেদনের কাঠামো বা ধাপসমূহ: যেহেতু গবেষণা প্রতিবেদন কাঠামোর কোনো ধরাবাধা নিয়মকানুন নেই, সেহেতু গবেষণার ফলাফলভিত্তিক প্রতিবেদন প্রণয়ন বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। 

সাধারণত সমাজ গবেষকগণ বিভিন্নভাবে গবেষণা প্রতিবেদন কাঠামো প্রদান করেছেন। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সার্থক গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য গবেষণ প্রতিবেদনে নিম্নবর্ণিত ধাপগুলো থাকা অত্যাবশ্যক, 

ধাপগুলো হলো :

ক. প্রারম্ভিক অংশ : প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশ মূলত কভার ও ভিতরে দুই তিনটা পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। একটা গবেষণা প্রতিবেদন শুরুর অংশে সৌন্দর্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত অংশ থাকে, যা প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশের কাঠামোকে অধিক শক্তিশালী করে। এর কয়েকটি অংশ থাকে। যথা :

১. গবেষণার শিরোনাম : গবেষণা প্রতিবেদনের প্রাথমিক ধাপ হলো গবেষণা শিরোনাম। প্রতিবেদনের শিরোনামটি হতে হবে সুস্পষ্ট, যথাযথ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক ও সংক্ষিপ্ত। 

গবেষণায় উল্লিখিত বিষয়গুলোর শিরোনাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। গবেষণার শিরোনামের মধ্য দিয়ে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ও বিষয় প্রতিভাত হয়।

২. গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা: গবেষণা শিরোনামের নিচে গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পদমর্যাদা লিখতে হয়। জার্নালে প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট জার্নালের নিজস্ব রীতি অনুযায়ী লিখতে হয়। 

আবার, থিসিস হলে যে ডিগ্রির জন্য থিসিস লেখা হয়েছে তার নাম উল্লেখসহ জমাদানের তারিখ ও সাল উল্লেখ করতে হয় । যেমন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, গুলশান, ঢাকা ।

৩. মুখবন্ধ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার : গবেষণা প্রতিবেদনের মুখবন্ধ একটা অপরিহার্য বিষয়। প্রতিবেদনের আকার যদি ছোট হয় তাহলে মুখবন্ধ লিখতে হয় না শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয়। 

অবশ্য জার্নালে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য মুখবন্ধ না লিখলেও চলে। এ অংশে গবেষণার বিষয় নির্বাচন, সমস্যার ধরন ও প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে বিবরণ সংযুক্ত থাকে। 

এরপর গবেষণা পরিচালনা ও প্রতিবেদন লেখার ব্যাপারে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয় ।

৪. সূচিপত্র : গবেষণা প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশের শেষধাপ হলো সূচিপত্র। বড় আকারের গবেষণার জন্য কোনো অংশ বা বিষয় খুব সহজেই খুঁজে পেতে সূচিপত্র ব্যবহার করা হয়। 

গবেষণা প্রতিবেদনের সূচিপত্রে অধ্যায়গুলোর নাম, উপ অধ্যায় ও সেকশনগুলোর নাম দেওয়া হয় এবং পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করা হয়। কোন পৃষ্ঠায় কী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, 

কী নির্দেশনাবলি রয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো অধ্যায়ভিত্তিক সূচিপত্রে উল্লেখ করতে হয়। এতে গবেষণার সমস্যা, পদ্ধতি, উপাত্ত বিশ্লেষণ, ফলাফল, সুপারিশ ইত্যাদি বিষয় বিবৃত হয়।

খ. মূল অংশ : গবেষণার মূল বিষয়গুলো এ অংশে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন—

১. ভূমিকা : ভূমিকা থেকেই মূলত গবেষণা প্রতিবেদনের মূল অংশ শুরু হয়। গবেষকের গবেষণার সাথে পূর্বের কোনো গবেষণার মিল থাকলে তা ভূমিকায় উল্লেখ করতে হয়। 

সাধারণত প্রতিবেদনের ভূমিকায় গবেষণার সমস্যা ও বিষয়বস্তু পূর্বানুমান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া থাকে। ভূমিকাকে প্রতিবেদনের প্রথম অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিকটিও উপস্থাপন করা হয়।

২. গবেষণা পদ্ধতি : গবেষণা প্রতিবেদনের এ অংশে গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করতে হয়। গবেষণা পদ্ধতিতে যে বিষয়সমূহ উল্লেখ থাকে সেগুলো হলো : 

নমুনা নির্বাচন পদ্ধতি, নমুনার আকার ও বৈশিষ্ট্য, উপাত্ত সংগ্রহের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি, গবেষকের নকশা ও প্রক্রিয়া, ব্যবহৃত পরিসংখ্যানগত কৌশল উল্লেখ করতে হয়।

৩. ফলাফল : গবেষণা প্রতিবেদনে এ অংশে ফলাফল উপাত্ত সহকারে উপস্থাপন করতে হয়। গবেষণার ফলাফল, প্রতিবেদনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গবেষণার প্রতিবেদনের ফলাফলকে অবশ্যই সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। 

সেই সাথে প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা ও বৈধতা সম্পর্কিত তথ্য প্রমাণ প্রতিবেদনের এ অংশে উপস্থাপন করতে হবে। গবেষণার প্রতিবেদনের ফলাফল ছক বা সারণি, চিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

৪:আলোচনা ও সুপারিশ : প্রতিবেদনের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আলোচনা ও সুপারিশ। আলোচনা গবেষণার উদ্দেশ্য ও ফলাফল, পরবর্তীতে চলক ও নির্দেশক আকারে প্রণীত প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে ফলাফল বিস্তৃত আকারে উপস্থাপন করতে হয়। 

গবেষণার ভিত্তিতে গবেষণার বিষয়গুলোর দুর্বলতার জায়গাগুলো তুলে ধরে সেগুলো দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ উল্লেখ করবেন । কোনো প্রকার ভুলত্রুটি হলেও এখানে তাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৫. সারাংশ : গবেষণা প্রতিবেদনের মূল অংশের শেষ ধাপ হলো সারাংশ বা উপসংহার। সমগ্র প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার এ অংশে উপস্থাপন করা হয়। পাঠক সমস্ত প্রতিবেদনের মূলকথা সহজে বুঝতে পারে এমনভাবে এ অংশটি উপস্থাপন করতে হয়।

গ. নির্দেশিকা : গবেষণা প্রতিবেদনের শেষের পর্যায় হচ্ছে নির্দেশিকা। নির্দেশিকা অংশের কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যথা :

১. প্রাসঙ্গিক গ্রন্থপুঞ্জি : গবেষণা প্রতিবেদন সফল করতে হলে বিভিন্ন বই, সাময়িকী, পত্র পত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদির সাহায্য ও সহযোগিতা নেওয়া হয় । এসব তথ্যগুলো এ অংশে নির্দিষ্ট নিয়মে প্রতিবেদনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হয় । 

গ্রন্থপঞ্জি লেখার সময় লেখকের নাম, প্রবন্ধের নাম, প্রকাশকাল, প্রকাশনার নাম, পৃষ্ঠা সংখ্যা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।

২. পরিশিষ্ট : গবেষণা প্রতিবেদনের মূল অংশে স্থান পায়নি এমন অনেক তথ্য প্রমাণ এ অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভবিষ্যতে অন্য কোনো গবেষক প্রয়োজনে এসব তথ্য প্রমাণ কাজে লাগাতে পারে।

৩. অনুক্রমনী : অনুক্রমনী বই, থিসিস ইত্যাদি বড় আকারের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিবেদনের যে অংশে বিষয়বস্তুর নাম, স্থান, 

পৃষ্ঠা নাম্বারসহ উপস্থাপন করা হয় তাকে অনুক্রমনী বা সূচিপত্র বলে। অনুক্রমনী থেকে খুব সহজে কোনো প্রতিবেদনের বিষয় খুঁজে বের করা যায় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটা গবেষণা প্রতিবেদনের কাঠামো গবেষণার উদ্দেশ্য ও গবেষণায় বর্ণনাকৃত কৌশলগুলো প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

একটা প্রতিবেদন পাঠক গ্রহণ না বর্জন করবে তা নির্ভর করে এর কাঠামোর ওপর। গবেষণার প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যদি সফল হয় তাহলে তা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ