সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর অপরিহার্য গুণগুলো বর্ণনা কর।।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর

  • অথবা, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর অপরিহার্য গুণগুলো বর্ণনা কর ।
  • অথবা, একজন ভালো সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কী কী গুণ থাকা আবশ্যক? লেখ ।

উত্তর ভূমিকা : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী, সাক্ষাৎকার দানকারী, সাক্ষাতের বিষয়, সাক্ষাতের পরিস্থিতি ইত্যাদি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । 

সাক্ষাৎকারে তিনি পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। একটি সাক্ষাৎকারের সফলতা মূলত তার ভূমিকার ওপরই নির্ভরশীল। এজন্য একজন সাক্ষাৎ গ্রহণকারীর কতিপয় প্রয়োজনীয় গুণাবলি থাকা বাঞ্ছনীয় ।

 সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর গুণাবলি : এসব গুণ সাক্ষাৎকারকে সফল করে তোলে। নিম্নে একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর প্রয়োজনীয় গুণাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. প্রজ্ঞাবান হওয়া : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে কতিপয় বিষয়ে প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হয়। সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কতিপয় বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কতিপয় ক্ষেত্রে এরূপ সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় ।

২. মূল্যবোধ : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে আচারব্যবহারে মূল্যবোধসম্পন্ন হতে হয়। এমন আচরণ করা উচিত হবে না যা উত্তরদাতার মূল্যবোধ বা কোনো ধরনের বিশ্বাসকে আঘাত করে। 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী কোনো অবস্থাতেই উত্তরদাতার ওপর নিজের মূল্যবোধ বা বিশ্বাস চাপিয়ে দেবেন না বা অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করবেন না। এতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর প্রতি উত্তরদাতার আস্থা ও বিশ্বাস বিনষ্ট হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে না ।

৩. সততা : একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর অন্যতম প্রধান গুণ হচ্ছে সততা। একজন সৎ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীই কেবল গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রকৃত তথ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারেন। 

এজন্য তাকে প্রশ্ন করা ও উত্তর রেকর্ড করার ব্যাপারে সততার সাথে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। এ ব্যাপারে কোনোরকম অসদুপায় অবলম্বন সাক্ষাৎকারকে ব্যর্থ করে দিতে পারে ।

৪. আন্তরিকতা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আগ্রহ, সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা সাক্ষাৎকারকে সফল করে তোলে। সাক্ষাৎকারের কাজকে যদি তারা মূল্যহীন মনে করেন বা কাজে বিরক্তি বোধ করেন তাহলে তা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। 

বাস্তবে দেখা যায় যে, দীর্ঘদিন যাবৎ সাক্ষাৎকার কাজের সাথে নিয়োজিত থাকলে কাজের প্রতি অনীহা আসে। কিন্তু যেকোনো উপায়ে হোক কাজের প্রতি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আগ্রহ ধরে রাখা আবশ্যক।

৫. বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত হতে হয়। তবে এজন্য অতি বুদ্ধিমান ও অতি শিক্ষিত লোকের দরকার নেই। 

কেননা তারা এ ধরনের কাজে বিরক্তি বোধ করতে পারেন। এ ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত ব্যক্তি যারা নির্দেশনা ও পরিবেশ পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারেন।

৬. পোশাক-পরিচ্ছদ : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পোশাক-পরিচ্ছদ একদিকে যেমন তার ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে তেমনি তা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। তবে সাক্ষাৎকার দানকারীদের পছন্দ ও অবস্থানের সাথে সংগতিপূর্ণ পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। 

যেমন- কোনো দরিদ্র ব্যক্তির কাছে দামি পোশাক পরিহিত অবস্থায় গেলে উক্ত ব্যক্তি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে সহজভাবে নাও গ্রহণ করতে পারেন। তেমনিভাবে কোনো ধনী বা দামি পোশাকধারী ব্যক্তির কাছে কমমূল্য বা নিম্নমানের পোশাক পরা অবস্থায় গেলে উক্ত ব্যক্তি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে যথার্থ পুরুত্ব নাও দিতে পারেন।

৭. ভাষা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ভাষা অবশ্যই সহজসরল ও সর্বজনবোধগম্য হতে হবে। সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে ভাষাই হচ্ছে উত্তরদাতার সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। 

কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ব্যবহৃত ভাষা যদি উত্তরদাতার কাছে দুর্বোধ্য হয় তাহলে কার্যকর যোগাযোগ সম্ভব নয়। এজন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে ভাষা ব্যবহারে বেশ সতর্ক হতে হয়। 

৮. অভিজ্ঞতা : প্রকৃত তথ্যসংগ্রহ করার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে অবশ্যই এ কাজে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। 

নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে এ কাজে পর্যাপ্ত অনুশীলন ও দক্ষতা থাকতে হয় এবং সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন মাত্রা ও বিভিন্ন উপাদানের আন্তঃক্রিয়া অনুধাবন করতে হয়। অন্যথায় সাক্ষাৎকার গ্রহণের মতো জটিল কাজ সম্পন্ন করা কঠিন। 

৯. মনস্তত্ত্ব ও পারিপার্শ্বিকতা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর উত্তরদাতার মানসিকতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা উত্তরদাতার মানসিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতা তথ্যকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। 

একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এক সময়ে সাক্ষাৎকার নিলে যে তথ্য পাওয়া যায়, কিছুটা পরিবর্তিত মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সাক্ষাৎকার নিলে কিছুটা স্বতন্ত্র তথ্য পাওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু, সাক্ষাৎকারের স্থান ও সময় নির্ধারণেও | সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে সতর্ক হতে হবে। কারণ এ দুটি উপাদানও তথ্যকে বেশ প্রভাবিত করে।

১০. চটপটে স্বভাব : একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে চটপটে ও বিনম্র হতে হবে। একই সাথে তার শোনা, চিন্তা করা এবং কথা বলার যোগ্যতা থাকতে হবে। উত্তরদাতার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। উত্তরদাতা যদি মনে করেন যে, 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তার কথা মন দিয়ে শুনছেন না, তাহলে তিনি কথা বলার আগ্রহ হারাতে পারেন। এজন্য বলা হয়, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে একজন ভালো শ্রোতা হতে হয়। শুধু তাই নয় প্রয়োজনীয় সব কথাই গভীরভাবে পুরুত্বের সাথে শোনা প্রয়োজন।

১১. বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞান : বয়স, সেক্স, রক্ত, বর্ণ, জাতিসত্তা, সামাজিক শ্রেণি ইত্যাদি কতিপয় সাধারণ বিষয়ে সাক্ষাৎ গ্রহণকারীর যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা এসব উপাদান সাক্ষাৎকারকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। 

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, কোনো বাঙালি গবেষক চাকমা গবেষণা এলাকায় তথ্যসংগ্রহ করতে গেলে চাকমা জনগণ তাকে অধিকতর সহজভাবে গ্রহণ করবে। এখানে একটি বিশেষ জাতিসত্তার সদস্য হওয়া অনুসন্ধানকারীর বিশেষ গুণ হিসেবে গণ্য হয়। 

১২. সামঞ্জস্য বিধানের দক্ষতা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে অবশ্যই ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও মেজাজের অধিকারী হতে হয়। তিনি আগ্রাসীও হবেন না এবং অতি সামাজিকও হবেন না। অতি আগ্রাসী ব্যক্তি উত্তরদাতাদের সাথে সহজে আন্তরিক হতে পারেন না । 

অন্যদিকে, অতি সামাজিক ব্যক্তি আবেগতাড়িত হয়ে উত্তরদাতাদের সুখ-দুঃখ ও অনুভূতির সাথে একাত্ম হয়ে যান, যার ফলে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই অতি রাপোর্ট সাক্ষাৎকারের জন্য ক্ষতিকর।

১৩. সঠিকতা : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায় সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দক্ষতা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর একটি অন্যতম গুণ হিসেবে গণ্য হয় । 

এজন্য তাকে সঠিকভাবে প্রশ্ন উপস্থাপন করা এবং উত্তর ধারণ করার দক্ষতা ও ক্ষমতা থাকতে হবে । আর এজন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো ধরনের গবেষণায় মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে গবেষক। আর সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে গবেষণার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী। 

এজন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে একজন সঠিক ব্যক্তি হতে হবে, যিনি সাক্ষাৎ গ্রহণের মাধ্যমে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করতে পারবেন। তাই উত্তম সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে অবশ্যই আলোচ্য গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর আবশ্যকীয় গুণাবলি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম একজন ভালো সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কী কী গুণ থাকা আবশ্যক? লেখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ