১২টি আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর | Amar Poth Onudhabon

আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর | Amar Poth Onudhabon
আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর | Amar Poth Onudhabon

১৩টি আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর | Amar Poth Onudhabon

প্রশ্ন-১. ‘আমার কর্ণধার আমি'- উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘আমার কর্ণধার আমি' — উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর-কর্তৃত্বের গুরুত্ব কে বুঝিয়েছেন।

সমাজের প্রত্যেকেই একে-অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা স্বাধীন মত প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করে। একে-অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে, কিন্তু নিজের ওপর কর্তৃত্ব থাকলে অনেক কাজ সহজেই করা যায় । 

‘আমার কর্ণধার আমি — উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর- নিজের কর্তৃত্বের এ গুরুত্বকেই বুঝিয়েছেন ।

প্রশ্ন-২. রাজ ভয়, লোক ভয় কেন প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না? 

উত্তর: প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে চেনেন বলে রাজভয়-লোকভয় তাঁকে বিপথে নিয়ে যাবে না।

প্রাবন্ধিক মনে করেন, মানুষ যদি সত্যি করে তার আপন সত্যকে চিনে থাকে, তার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই তার কিছু করতে পারবে না। 

সত্য মানুষকে পথ দেখাবে আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করবে। নিজেকে চিনলে তার মনোবলই তাকে নতুনের পথে যুদ্ধ করার শক্তি জোগাবে। এখানে রাজ্যের ভয়, রাজ্যের ভেতরের বা বাইরের কোনো শক্তিই তাকে বিপথে নিয়ে যাবে না।

প্রশ্ন-৩. কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?

উত্তর: সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন । কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। 

কিন্তু সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন-৪. স্পষ্ট কথা বলার সময় বিনয়ভাব থাকে না কেন?

উত্তর: স্পষ্ট কথা বলায় এক ধরনের অহংকার কাজ করে বলে বিনয়ভাব তেমন থাকে না।

স্পষ্ট কথা বলার সময় কোনো ফাঁক-ফোকর থাকে না বলে মনে আপনাআপনি একটা জোর এসে থাকে। এটাকে স্পর্ধা বা অহংকার বলে ভুল হলেও আসলে তা নয়। মূলত'স্পষ্ট কথা বলার সময় একটা দৃঢ়তা কাজ করে বলে মানুষের মাঝে বিনয়ভাব থাকে না ।

প্রশ্ন-৫. ‘এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।' লেখক কেন এ কথা বলেছেন?

উত্তর: পরাবলম্বন মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে ফেলে বলে লেখক একথা বলেছেন।

নিজের সত্তাকে বিকিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। মানুষের নিজের ভেতরে যে একটা দুর্ভেদ্য শক্তি আছে, তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন মানুষ অন্যের দানে, দয়ায় ও দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে। এভাবে পরাবলম্বন আমাদের দাসত্বের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।

প্রশ্ন-৬. ‘সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 

উত্তর: ‘আমার পথ' প্রবন্ধে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলতে পরাবলম্বনকে বোঝানো হয়েছে।

আত্মনির্ভরতা থেকেই স্বাধীনতা আসে। লেখকের বিশ্বাস, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে করলে আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। এমন স্বাবলম্বনের কথা শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু জনগণ মহাত্মা গান্ধীর সেই স্বাবলম্বনের কথা না বুঝে তাঁর ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। 

এটিই হলো পরাবলম্বন। পরাবলম্বন আত্মশক্তিকে নষ্ট করে দেয় বলে তৈরি হয় মানসিক দাসত্ব। তাই ‘আমার পথ' প্রবন্ধে পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-৭. ‘আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে'— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আত্ম তথা নিজের ভেতরের সত্যকে জানতে বলেছেন ।

‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের মতে, নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনিই একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না। 

অর্থাৎ কেউই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। মানুষের উচিত তার ভেতরের শক্তিকে উপলব্ধি করা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। তবেই তার নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস জন্মাবে । প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-৮. ‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক দাম্ভিক হতে চান কেন? 

উত্তর: ‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের কাছে মানুষের মিথ্যা আত্মবিশ্বাস গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান ।

আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক কাজী নজরুল ইসলাম সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে দেখেছেন, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। 

নজরুলের কাছে মানুষের মিথ্যা ও সংশয়পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মিথ্যা আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তে নিজ সত্যে অটল থেকে দাম্ভিক হতে চান ।

প্রশ্ন-৯. ‘আগুনের সম্মার্জনা' বলতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘আগুনের সম্মার্জনা' বলতে 'আমার পথ' প্রবন্ধে সমাজের সকল অশুদ্ধি ও ক্লেদ দূর করার হাতিয়ারকে বোঝানো হয়েছে ।

'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক যে সমাজের ভিত্তি পচে গেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করার পক্ষপাতী। তিনি পক্ষপাতী যা কিছু অশুভ, মিথ্যা, মেকি তা দূর করার। 

এজন্যে তাঁর মতে, প্রয়োজন আগুনের। কেননা আগুন সব রকম অশুদ্ধিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আগুনের সম্মার্জনা বলতে লেখক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন ।

প্রশ্ন-১০. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক কেন ভুল করতে রাজি আছেন? 

উত্তর: ভুল স্বীকারের মাধ্যমে আত্মকে জানা যায় বলে 'আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন।

সত্যকে জানতে, আত্মকে জানার জন্য ভুল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । ভুলের মাধ্যমেই কোনো ব্যক্তি নিজেকে জানতে পারে এবং নিজেকে সংশোধনও করতে পারে। কিন্তু ভুল করে যদি তা স্বীকার করা না হয়, তবে তা হয় ভণ্ডামির শামিল। প্রাবন্ধিক এরূপ ভণ্ডামি করতে রাজি নন। তাই বলা যায়, আত্মকে জানার জন্যই প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন ।

প্রশ্ন-১১, ‘একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নেভাতে পারবে'— কথাটি বুঝিয়ে দাও ৷

উত্তর: মিথ্যা বা ভণ্ডামির সংস্পর্শে প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে ।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আমিত্বকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এজন্য প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি থাকা জরুরি। এই উপলব্ধিকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে যদি কখনো ভুল হয়ে যায়, তখন নিঃসংকোচে তা স্বীকার করে নিতে হবে। কোনোরূপ মিথ্যা বা ভণ্ডামির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। মিথ্যার আশ্রয় নিলে নিজের মধ্যকার প্রকৃত সত্যের বিনাশ ঘটবে। আর এটি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটির অবতারণা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-১২. মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয় কেন?

উত্তর: মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।

মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে । তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ