১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল


১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল

উত্তর ভূমিকা : প্রায় দুশো বছর ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ যুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে প্রথম গণপরিষদে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। 

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ সুদীর্ঘ সাত বছরেও শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সফল হয়নি। সুদীর্ঘ নয় বছর পর দ্বিতীয় গণপরিষদ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে। 

অবশ্য এ শাসনতন্ত্র প্রণয়নে প্রথম গণপরিষদ ও দ্বিতীয় গণপরিষদ বিভিন্নমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে দীর্ঘ সময় লেগেছিল । 

● পাকিস্তানের সংবিধানের বিকাশ : পাকিস্তানের সংবিধানের বিকাশ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো : 

অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান : বস্তুত দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে প্রায় অপ্রস্তুত অবস্থায়। একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার মতো প্রস্তুতি পাকিস্তানিদের ছিল না। 

ফলে দেশটি একটি দশক ধরে পূর্ববর্তী ব্রিটিশ সরকার প্রণীত আইন (ভারত শাসন আইন-১৯৪৭ এবং ভারত শাসন আইন-১৯৩৫) এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। নতুন সংবিধান প্রণীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্যবহৃত সংবিধানকে অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান বলে অভিহিত করা হয় । 

পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য এ সংবিধানের অধীন একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতেই হোক পাকিস্তানকে অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান দিয়ে এক দশক পার করতে হয়েছে।

১৯৫৬ সালের সংবিধান : পাকিস্তানের ইতিহাসে দীর্ঘ নয় বছর পর ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো একটি শাসনতন্ত্র প্রণীত হয়। এতে ২৩৪টি অনুচ্ছেদ, ১৩টি ভাগ এবং ৬টি তফসিল ছিল। 

এছাড়া এতে ছিল একটি দীর্ঘ প্রস্তাবনা, যা দ্বারা পাকিস্তানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রজাতন্ত্রের এসব কর্মকাণ্ড সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। 

সংবিধানটিতে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য কয়েকটি মূলনীতি গ্রহণ করা হয়। এ সংবিধান অনুসারে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এছাড়া সংবিধানটিতে বিচার বিভাগের প্রাধান্য ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয় । 

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে উর্দু ও বাংলা উভয় ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপধান ছিলেন 'প্রেসিডেন্ট', জাতীয় পরিষদ ছিল পাকিস্তানের আইনসভা। 

আর আইনসভা ছিল এককক্ষবিশিষ্ট। আইনসভা ৩০০ সদস্য নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে ১৫০ জন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এবং ১৫০ জন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত হতেন পাঁচ বছরের জন্য। এছাড়া মহিলাদের জন্য ১০ বছর মেয়াদের ১০টি অতিরিক্ত আসন সংরক্ষিত ছিল। 

এ ১০ জন সদস্যও নির্বাচিত হবেন ৫ জন পূর্ব পাকিস্তান ও ৫ জন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। সংবিধানে সমগ্র পাকিস্তানে একটি সুপ্রিম কোর্ট এবং দুই প্রদেশে দুটি হাইকোর্টের বিধান রাখা হয়েছিল। 

সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও বিচার বিভাগের প্রাধান্য নিশ্চিত করা হয়। কোর্টগুলোর ওপর নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এ সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

তাই জাতীয় পরিষদ থেকে প্রণীত সংবিধানের পরিপন্থি যেকোনো আইনকে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারত। সংবিধানে সরকারের প্রকৃতি সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়— প্রাদেশিক সরকারের প্রকৃতি হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যায়। 

একজন গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে একটি মন্ত্রিসভা প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করতো। প্রাদেশিক আইন পরিষদেও কেন্দ্রের মতো ৩০০ জন সদস্য ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। এছাড়া প্রদেশেও মহিলাদের জন্য ১০ বছর মেয়াদে অতিরিক্ত ১০টি আসন সংরক্ষিত ছিল।

সামরিক শাসন (১৯৫৮-১৯৬২) : রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ও অস্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানের কেন্দ্র ও প্রদেশসমূহে ১৯৫৬ সালের সংবিধান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ঘন ঘন মন্ত্রিসভার উত্থানপতন ঘটতে থাকে। এসময়ের মধ্যে ৭টি মন্ত্রিসভা ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাচ্যুত হয়। 

এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি করে ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল করেন। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাসহ মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়। 

সামরিক ফরমান দ্বারা সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জেনারেল আইয়ুব খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে নিজেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। 

একই সঙ্গে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও বহাল থাকেন। ১৯৬০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি একটি সংবিধান কমিশন গঠন করেন। এ কমিশনের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তানের জন্য নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য ।

১৯৬২ সালের সংবিধান : ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সামরিক আইনের মাধ্যমে পাকিস্তানের সরকার পরিচালিত হয়। সামরিক আইনের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকলে ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের জন্য আইয়ুব খান সংবিধান কমিশন গঠন করেন। 

এ কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ১৯৬২ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হয়। এ সংবিধান ছিল মূলত আইয়ুব খান কর্তৃক আইয়ুব খানের জন্য সংবিধান। 

সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার উপায় হিসেবে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। 

এ পদ্ধতিতে জনগণের ভোটে আশি হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তী পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান আস্থা ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মৌলিক গণতন্ত্রীদের সমর্থন আদায় করেন এবং ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

১৯৬২ সালের পাকিস্তান সংবিধান ছিল একটি দীর্ঘ ও বিস্তারিত দলিল। সংবিধানটিতে ১২টি ভাগ, ২৫০টি অনুচ্ছেদ ও ৩টি তফসিল সন্নিবেশিত ছিল। এ সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তানের সরকার পদ্ধতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রজাতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রপতি শাসিত। 

মৌলিক গণতন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন। রাষ্ট্রপতিই রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। মন্ত্রিসভার উত্থানপতন ঘটত রাষ্ট্রপতির মর্জিতে। মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য ছিলেন রাষ্ট্রপতির আস্থাভাজন এবং তার প্রতি দায়বদ্ধ। 

১৯৬২ সালের সংবিধানের ২১টি মূলনীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইসলামি জীবনব্যবস্থা, জাতীয় ঐকা, সংখ্যালঘুদের প্রতি সদ্ব্যবহার, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক নিরাপত্তা, জনগণের মৌলিক চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ ইত্যাদি। 

এ সংবিধানে সরকারের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক—এ দুটি কাঠামো ছিল। সংবিধান অনুসারে পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ নামে একটি এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকবে এবং জাতীয় পরিষদের মেয়াদ হবে ৫ বছর। 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বাধীনতার সুদীর্ঘ নয় বছর পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। 

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারি করে আইয়ুব খান এ সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। 

পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের ১ মার্চ আইয়ুব খান পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর বাতিল করা হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান কিরূপ ছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ