সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর।

সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর
সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর

সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর

  • অথবা, প্রশাসনিক সংগঠনের নীতিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, সংগঠনের মূলনীতিসমূহ উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : কোনো রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য সংগঠন একটি যুক্তিসংগত সুপরিকল্পিত কর্তৃত্ব কাঠামো যার কতিপয় সাধারণ নীতি রয়েছে। 

কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অবশ্যম্ভাবীরূপে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হতে হয়। 

অন্যথায় উক্ত কর্ম ও লক্ষ বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তিপূর্ণ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে। প্রশাসনিক সংগঠনের মূলনীতিসমূহের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ওপরই কোনো সংগঠনের সফলতা নির্ভর করে ।

সংগঠনের মৌলিক নীতিমালাসমূহ : সংগঠনের প্রকৃতি ও ধরন সম্পর্কে প্রায় সব লোকপ্রশাসনবিদ নিম্নলিখিত নীতিসমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন—

১. শ্রমবণ্টন নীতি : সংগঠনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে শ্রমবণ্টন নীতি সংগঠনের ভিত্তিস্বরূপ। কোনো বৃহদায়তন এবং জটিল প্রশাসনিক সংগঠনের যাবতীয় কার্যাবলি যখন বিভিন্ন এককে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধানুযায়ী তাদের ওপর অর্পণ করা হয় তখনই তাকে কর্ম বিভাজন বা শ্রমবন্টন বলে। 

প্রশাসনিক সংগঠনের যাবতী কার্যাবলি স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করার জন্য কর্ম বিভাজনের নীতি অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন ।

২. পদসোপান নীতি : প্রতিটি প্রশাসনিক সংগঠনে পদসোপান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পদসোপ বলতে কতকগুলো পর্যায়ক্রমিক স্তরবিশিষ্ট কোনো সংগঠনকে বুঝায় যেখানে প্রতিটি নিম্নস্তরে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচার তাদের নিকটতম কর্তৃপক্ষের অধীনে থেকে তার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। 

পদসোপান সাধারণত দায়িত্ব, কর্তব্য ও কর্তৃত্বে ...ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় এবং এ কর্তৃত্ব সাধারণত আইন, সাংগঠনিক পদমর্যাদা, নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা এবং সর্বোপরি উত্কৃষ্ট জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা হতে উৎসারিত হয়।

৩. পরিকল্পনা : সংগঠনের মাধ্যমে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন। 

কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে ঐ কাজটি কীভাবে করা যায় বা কাজটি সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ ও অর্থের সরবরাহ আছে কি না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করার পর সংগঠনের উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে কার্যপ্রণালি নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনা বলে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে যেকোনো প্রকল্প বাতিল হয়ে যেতে পারে।

৪. আদেশগত ঐক্য : আদেশগত নীতির মূলকথা হলো সংগঠনের একজন কর্মী কেবলমাত্র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতার নিকট হতে আদেশ গ্রহণ করবেন। কোনো অধস্তন কর্মচারী একাধিক নিকটস্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশের অধীন নন। 

অধ্যাপক ফিফনার এবং প্রেসথাসের মতে, আদেশগত ঐক্যের ধারণা বিধান করে যে, সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যই একজন। এবং কেবল একজন নেতার নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন ।

৫. নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্র : সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ পরিধি নীতিটি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একই সময়ে কতজন কর্মচারীকে • যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও সীমা নির্ধারণ করে। 

উক্ত কর্মকর্তার অধীন কর্মচারী অধিক হবে। তার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, আবার কর্মচারী স্বল্পসংখ্যক হলে তিনি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

৬. কর্তৃত্ব হস্তান্তর : সাধারণত কর্তৃত্ব হস্তান্তর নীতি বলতে এক নির্বাহী ইউনিট বা সাংগঠনিক ইউনিট হতে অপর নির্বাহী বা সাংগঠনিক ইউনিটের নিকট কর্তৃত্ব ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করাকে বুঝায়। 

এ ক্ষমতা অর্পণ বলতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক অধস্তন কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দিয়ে তা যথাসময়ে আদায় করে নেওয়াকে বুঝায়।

৭. লাইন অ্যান্ড স্টাফ নীতি : যেকোনো দেশের শাসক তথা সরকার প্রধানকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাই লাইন এন্ড স্টাফ নীতি নামে পরিচিত। 

কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অধীন দুধরনের কর্মচারী কাজ করে। যেমন— একদল কর্মচারীকে বলা হয় লাইন এজেন্সি (Line Agency) এবং অপর দলকে বলা হয় স্টাফ এজেন্সি (Staff Agency)। 

লাইন এজেন্সি সাধারণত কর্তৃত্ব প্রয়োগ বা আদেশ প্রদানে নিয়োজিত থাকে, আর স্টাফ এজেন্সি প্রশাসনিক সমস্যাদি অধ্যয়ন করা, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা, প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করা ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত থাকে।

৮. সমন্বয়সাধন : সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিট বা অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি। কোনো সংগঠনের সব অংশ যাতে দ্বৈততা, শূন্যতা কিংবা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসময়ে পরস্পরের সাথে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করার নামই সমন্বয়সাধন। 

সমন্বয়সাধনের লক্ষ্য হলো কর্মচারীদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করে তাদের মধ্যে একতা, সহযোগিতা ও যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা।

৯. যোগাযোগ : যোগাযোগ নীতি প্রশাসনিক প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিউম্যান ও সামার যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ঘটনা, ধারণা, মতামত ও আবেগ-অনুভূতির আদানপ্রদান বলে অভিহিত করেছেন। 

সুষ্ঠু যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রশাসনিক আচরণ সংশোধিত, পরিবর্তিত ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জিত হয়। 

১০. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ: কোনো প্রশাসনিক ইউনিটের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব যখন এককভাবে প্রশাসনিক সংস্থার কেন্দ্রে সংরক্ষিত হয় তখন তাকে প্রশাসনিক কেন্দ্রীকরণ বলে। 

অপরদিকে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে জনস্বার্থে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্ব স্থানীয় বা নিম্নপর্যায়ে স্থানান্তরকে বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। 

১১. প্রেষণা : প্রশাসনিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মানবপ্রকৃতি ও মানুষের আচার আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

সংগঠনের কার্যক্রমে কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও কর্মপ্রেরণার সৃষ্টি করানোই হচ্ছে প্রেষণা। কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি ও তা অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রেষণা চাবিকাঠি স্বরূপ।

১২. সমতা বিধান : সমতার নীতির মাধ্যমে সংগঠনের সব বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে কার্য ও ক্ষমতার সমন্বয় করার ক্ষমতা হচ্ছে কর্তৃত্ব এবং এ কার্যসম্পাদন করার বাধ্যবাধকতা হচ্ছে দায়িত্ববোধ। কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণের সাথে সমপরিমাণ ক্ষমতাও দিতে হবে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো প্রশাসনিক সংগঠন পরিচালনার জন্য তার মৌলিক নীতিসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আধুনিক রাষ্ট্রের কাজের বিস্তৃতির সাথে ব্যাপক ও বিচিত্রধর্মী সংগঠনের উদ্ভব ঘটছে যাতে করে সংগঠনের কাজ অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। 

এসব জটিল কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য উপর্যুক্ত নীতিসমূহের কার্যকর ও সুষ্ঠু প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংগঠনের মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ