সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদটি ব্যাখ্যা কর।

সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর
সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর

সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে সাংগঠনিক কাঠামো। সংগঠনের উপস্থিতি ও সহায়তা ছাড়া মানুষ কোনো প্রশাসনিক উদ্দেশ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে না। 

সংগঠনের মাধ্যমেই মানুষের সব ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যার ফলে মানবগোষ্ঠীর কল্যাণসাধনের জন্য প্রশংসাযোগ্য ভূমিকার প্রসার ঘটে। 

কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ বিকাশ লাভ করে। বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক উন্নয়নে নব্য সনাতন মতবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

প্রশাসনিক সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ : সংগঠনের সনাতন মতবাদের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিত মধ্য সনাতন মতবাদ জন্মলাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর ২০ ও ৩০ এর দশকে নব্য সনাতন মতবাদ একটি সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।

নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ : সমাজবিজ্ঞানী, সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এবং আচরণবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণা হতে উদ্ভূত। 

তারা যান্ত্রিক সাংগঠনিক পদ্ধতি হতে নিজেদের দূরে সরিয়ে না রেখে সংগঠনের ধারাণায় মধ্যপন্থা অনুসরণ করে থাকেন বলে তাদের মতবাদকে অভিহিত করা হয়। 

নব্য সনাতন মতবাদ অতীতে প্রশাসন ব্যবস্থায় মানবিক সম্পর্ক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। সনাতন মতবাদের সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধাসমূহ দূর করে সংগঠনকে আরও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে নব্য সনাতন মতবাদের প্রবর্তন করা হয়েছে। 

ব্যক্তি ও কর্মী দলের সদস্য হিসেবে একজন কর্মীর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা নব্য সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি। 

এতে সনাতন তত্ত্বের তুলনায় মানুষের অভিপ্রায় এবং অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠীর কার্যকলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। 

নব্য সনাতন মতবাদে সাংগঠনিক আবরণকে অত্যন্ত জটিল হিসেবে গণ্য করে সাংগঠনিক বিশ্লেষণ ও সমাধানের জন্য মানবিক আচরণের ওপর গুরত্ব আরোপ করে থাকে।

এ মতবাদের সমর্থক মানবতাবাদী ও আচরণবাদীদের ধারণা অনুসারে সংগঠন এমন এক প্রকার Team work' স্বৰূপ যেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকে সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত থাকে। 

এ মতবাদ অনুসারে সংগঠন যুক্তিভিত্তিক না হয়ে বরং আবেগভিত্তিক হয়ে থাকে। অনানুষ্ঠানিক মতবাদে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পদমর্যাদা বংশগত বা ভাষাগত পার্থক্য, শিক্ষাগত মান এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ প্রতিফলিত হয় এছাড়াও নব্য সনাতন মতবাদ প্রথা হতে উদ্ভূত আইনের দ্বারা বিধিবদ্ধ নয় ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

অধ্যাপক সি. আই. বার্নার্ড (Prof. C. I. Barnard) বলেন, " By informal organization | mean the aggregate of the personal contradicts and interactions and the associated grouping of peopled." 

ফিফনার ও শেরউড (Pfiffner and Sherwood) এর মতে, “সংগঠনে কতকগুলো জটিল সম্পর্ক ও উপাদান কাজ করে চলেছে এবং তারা ক্লাসিক্যাল তত্ত্বকে পরিবর্তন করে সংগঠনে মানবিক সম্পর্কের নতুন ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটাতে আগ্রহী।” 

উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় নব্য সনাতন মতবাদটি সনাতন মতবাদের মধ্যেই গড়ে ওঠে এবং এখানে যান্ত্রিক চিন্তাচেতনার চেয়ে মানবিক চিন্তাচেতনাই অধিক প্রাধান্য পায়।

নব্য সনাতন মতবাদের প্রধান সূত্রসমূহ : সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের প্রধান সূত্রসমূহ নিম্নরূপ : 

ক. সংগঠনের কর্মীরা যন্ত্রাংশ নন তারা মানুষের দেহ ও মন এ দুয়ের সমষ্টি, তাদের যোগ্যতা, বিশ্বাস ও চিন্তাধারার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। 

কাজেই তাদের মনোভাব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব অভিযোগ প্রভৃতির প্রতি নজর দিলে ব্যবস্থাপনার কাজ অধিকতর ফলপ্রসূ হবে।

খ. সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সামাজিক প্রয়োজনেই সংগঠনের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। 

স্বভাবতই একজন কর্মচারী অপরজনকে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এরূপ সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের চেয়ে কম শক্তিশালী নয় ।

গ. কাজের স্বীকৃতির প্রত্যাশা করা মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য আর অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনার মূলকথা হচ্ছে কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কর্মীগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। 

গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করা হলে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং এতে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। 

নবা সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো :

১. নবা সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের সমর্থকগণ সংগঠনতত্ত্বে আচরণবিজ্ঞান সামগ্রিকভাবে ব্যবহার করেছেন। 

২. নব্য সনাতন মতবাদ সংগঠনের চারটি মৌল স্তম্ভ যেমন- শ্রমবিভাগ, পদসোপান, কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণসীমার ওপর অবস্থিত।

৩. এ মতবাদটি শাসন সম্পর্কের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৪. বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী এবং যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় নৰা সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি, যা এর বিকাশ ও অগ্রগতির সহায়ক।

৫. নব্য সনাতন মতবাদ সংগঠনে কর্মরত মানুষের সামাজিক ও অর্থনেতিক দিকগুলো সূক্ষ্মভাবে বিচার করে।

৬. এ মতবাদটি আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, এটি প্রথা হতে উৎসারিত।

৭. নব্য সনাতন মতবাদটি অলিখিত লিখিত অবস্থায় বিরাজ করে না। এটি রেখাচিত্রের জন্য প্রযোজ্য নয়।

৮. এ মতবাদ আবেগভিত্তিক এবং ব্যক্তিনির্ভর।

৯. অনানুষ্ঠানিক মতবাদ কর্মচারীকেন্দ্রিক প্রভৃতি ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদটি একটি মানব সম্পর্কভিত্তিক প্রথা হিসেবে সনাতন মতবাদের দোষত্রুটি নির্ণয়ে সহায়ক। 

সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদের কতিপয় ত্রুটি বা অপূর্ণতা দূরীকরণের জন্যেই মূলত নব্য সনাতন বা আনুষ্ঠানিক তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে। 

সাংগঠনিক কাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে নব্য সনাতন মতবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংগঠনের নব্য সনাতন তত্ত্বটি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রশাসনিক সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ