সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ আলোচনা কর।

সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর
সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

  • অথবা, প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ আলোচনা কর। 
  • অথবা, সংগঠনের সনাতন মতবাদটি আলোচনা কর।

উত্তর ভূমিকা : সময়ের বিবর্তনে সংগঠনের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে বিভিন্ন মতবাদ গড়ে উঠেছে। এসব মতবাদ বিভিন্ন সময়ে যেমন পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনি আবার নতুন নতুন মতবাদ জন্মলাভ করেছে। 

বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন বিজ্ঞানীগণ সংগঠনের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসব মতবাদ প্রণয়নের প্রয়াস পেয়েছেন। 

প্রবহমান যুগের চাহিদা ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সংগঠনের তত্ত্বসমূহ পরিবর্তিত ও সংশোধিত হয়েছে। সংগঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ পরিলক্ষিত হলেও তিনটি প্রধান মতবাদের মধ্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত ।

প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ : সংগঠন সম্পর্কিত মতবাদসমূহের মধ্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক হতবাদ একটি গ্রহণযোগ্য মতবাদ হিসেবে বিবেচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এ তত্ত্বের প্রবর্তন হয়। 

সনাতন মতবাদের প্রবন্ধ হিসেবে লুথার গুলিক, ম্যাক্স ওয়েবার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। আনুষ্ঠানিক মতবাদ হলো, সংগঠনের এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে ওঠে। 

এ জাতীয় সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আইনের মাধ্যমে বা পূর্ব ঘোষণায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

এ মতবাদ অনুসারে সংগঠনের পদসোপান নীতি অনুযায়ী যাবতীয় ক্ষমতা ঊর্ধ্বতনের দিক হতে নিম্নতনের ভিত্তিতেই সনাতন সংগঠন পরিচালিত হয় এবং সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি হলো ব্যক্তি ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে সংগঠনের মূল উদ্দেশ বাস্তবায়ন করা।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা

অধস্তন কর্মচারীবৃন্দ

এডউইন ও স্টেইন (Edwin & Stain) সনাতন প্রশাসন সম্পর্কে বলেন, "Formal Origination is a number of persons who systematically and consciously combine their individual efforts for the accomplishment of a common task." 

অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক সংগঠন হচ্ছে এমন কতকগুলো ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যারা সুসংগঠিত এবং সচেতনভাবে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টাকে একটি সাধারণ কর্ম সম্পাদনে। সংঘবদ্ধ করে। পাশে রেখাচিত্রের সাহায্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে ব্যাখ্যা করা। হলো

পরিশেষে বলা যায় সনাতন বা আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন এক প্রশাসনকে বুঝায় যেখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সরাসরি উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ এখানে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন ধারা বজায় থাকে।

সনাতন মতবাদের ভিত্তিসমূহ : সংগঠন সম্পর্কিত রীতি প্রবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধারা গড়ে উঠেছে বিধায় সনাতন মতবাদ আদিম মতবাদ বলে বিবেচিত। সনাতন মতবাদ চারটি প্রধান নীতির ওপর প্রতিষ্ঠত। নিম্নে এসব নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. শ্রমবিভাগ : শ্রমবিভাগ হলো সনাতন মতবাদের অন্যতম মূলভিত্তি। এ বিভাগকে কেন্দ্র করে সংগঠনের অন্যান্য উপাদানের সৃষ্টি সনাতন মতবাদে শ্রমবিভাগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। 

এখানে কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কার্যক্ষমতা লাভ করে এবং তারা সেবা ও মননকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক সংগঠনকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে। পদসোপান এবং কার্যগত পদ্ধতি বিকাশের জন্যই শ্রমবিভাজন আবশ্যক।

২. পদসোপান : সনাতন সংগঠন পদসোপান নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এ নীতির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের অধস্তন কর্মচারীর মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত একটি আদেশ জারি করেন যা বিভিন্ন পদক্রম অনুসারে কর্মরত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর মাধ্যমে ক্রমে সিঁড়ি বেয়ে অতিক্রম করে নিম্নতম কর্মচারী পর্যন্ত পৌঁছায়। 

পদসোপান নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারী যার যার কাজের জন্য ঊর্ধ্বতনের নিকট জবাবদিহি করে থাকেন এবং ঊর্ধ্বতনের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালায়। পদসোপান ভিত্তিক সংগঠন পাশের চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো :

৩. কাঠামো : সনাতন সংগঠনে অন্যতম ভিত্তি হলো কাঠামো যা বলতে ব্যবস্থা ও পদ্ধতিকে বুঝায়। সংগঠনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য এ কাঠামো গড়ে তোলা হয়। 

এখানে কর্মরত প্রতিটি কর্মচারীর মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কাঠামোতে বর্ণিত ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভিত্তিতে এ সংগঠন পরিচালিত হয় যেখানে প্রতিটি কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থেকে তার ওপর দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের প্রচেষ্টা চালায় ।

৪. নিয়ন্ত্রণ : সংগঠনের সনাতন মতবাদে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার মধ্য দিয়ে প্রশাসন পরিচালনার চেষ্টা করা হয়। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কতজন অধস্তন কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা নিয়ন্ত্রণের পরিধি নির্দেশ করে। 

প্রখ্যাত প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ডি এ প্যাবকিউনাস এ সংখ্যা ৫ থেকে ৭ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্মচারীর সংখ্যা কম না বেশি হবে তা চারটি উপাদানের ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো কাজের প্রকৃতি, ব্যক্তিত্ব, সময় এবং স্থান।

সনাতন মতবাদের ধারা : সনাতন মতবাদের তিনটি ধারা বিদ্যমান। এ তিনটি ধারার বাস্তব কার্যকারিতা প্রায় অভিন্ন উদ্দেশ্যের দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ধারা তিনটি হলো : 

১. আমলাতন্ত্র, 

২. প্রশাসনিক তত্ত্ব ও 

৩. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা । 

নিম্নে ধারাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. আমলাতন্ত্র : আমলাতন্ত্র একটি সর্বজনীন ধারণা যার প্রথম ও প্রধানতম প্রবক্তা হলেন ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber)। সাধারণভাবে সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত স্থায়ী বেতনভুক্ত ও দক্ষ কর্মচারীগণ আমলা নামে পরিচিত। 

ম্যাক্স ওয়েবারের মতে উচ্চস্তরের কর্মকর্তাগণ যারা সরকারের সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণ করেন এবং নিম্নস্তরের কর্মকর্তা যারা এ সিদ্ধান্ত মেনে চলেন, আমলাতন্ত্র তাদের মধ্যবর্তী হিসেবে কাজ করে।

২. প্রশাসনিক তত্ত্ব : সনাতন মতবাদের দ্বিতীয় প্রধান ধারা হলো প্রশাসনিক তত্ত্ব। বিখ্যাত ব্যবস্থাপনাবিদ হেনরি ফেয়ল ১৯১৬ সালে এ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। 

সংগঠন বিষয়ক আলোচনা অধ্যয়ন ও গবেষণায় এ তত্ত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তত্ত্বের প্রবক্তা কতিপয় মূলনীতি প্রদান করেছেন। যেমন- শ্রমবিভাজন কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব কেন্দ্রীয়করণ পদবিন্যাস ইত্যাদি। 

৩. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা : সনাতন সংগঠন তত্ত্বের তৃতীয় ও শেষ ধারাটি হলো বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা। এ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা হলেন টেইলর। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় স্বল্প ব্যয় ও অধিক মুনাফাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

টেইলর বলেন, সংগঠন ব্যবস্থাপনা সমস্যার সর্বোত্তম সমাধানের জন্য কারিগরদের মধ্যে শৃঙ্খলা আদর্শ ও মুক্তিবাদিতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।

সনাতন মতবাদের সমালোচনা : সংগঠন সম্পর্কিত সনাতন মতবাদ অনেক পুরানো হলেও তা সমালোচনামুক্ত নর এবং কতিপয় সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ মতবাদকে সমালোচকবৃন্দ যান্ত্রিক এবং মানবেতর গুরুত্ববিহীন বলে মতামত প্রদান করেছেন যেখানে মানুষ বা কর্মচারীদেরকে যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে তাদেরকে কাজ করানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

সনাতন মতবাদের অন্যতম ভিত্তি হলো কাঠামো। এখানে সংগঠনের কর্মচারীদের কর্মসম্পাদনের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় কিন্তু তাদের সুযোগ সুবিধা, কর্মপরিবেশ বা প্রেরণার বিষয়টি এতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না। 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ক্লাসিক্যাল বা সনাতন মতবাদের ওপর ভিত্তি করে সংগঠনের অন্যান্য মতবাদ বিকাশ লাভ করেছে। 

সনাতন মতবাদে কর্মীদের আবেগ অনুভূতি বৃচি ও মূল্যবোধ এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদাগুলোকে যথাসম্ভব পূরণের মাধ্যমে কর্মীদের স্পৃহা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। 

প্রশাসনিক সাফল্য ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সনাতন মতবাদ তথা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের ভিত্তি ও ধারাসমূহ অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংগঠনের সনাতন মতবাদটি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ