আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান
আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান

আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান

  • অথবা, সুলতান আলাউদ্দিনের অবাস্তব ও অলীক চিন্তাধারা কি?

উত্তর : ভূমিকা : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। সুলতান জালালউদ্দিন খলজিকে হত্যা করে ১২৯৬ সালে দিল্লির মসনদে আরোহণ করেন। 

সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা অলীক ও অবাস্তব বলে বিবেচিত হয় । সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তার রাজত্বের প্রথম পর্যায়ে উত্থিত বিদ্রোহসমূহের মূলোৎপাটন করেন। মোঙ্গল আক্রমণ করবে, এসব অবাস্তব ও অলীক চিন্তাধারা কল্পনা করেন ।

— আলাউদ্দিন খলজির মহাপরিকল্পনা : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পর কিছু সময়ের জন্য কল্পনা বিলাসী হয়ে পড়েন। 

নিজেকে শক্তিধর নৃপতি হিসেবে মনে করে প্রধানত দুটি অলীক অবাস্তব মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার মধ্যে প্রথমটি হল নতুন ধর্মমত, প্রবর্তন অপরটি হল আলেকজান্ডারের মতো দিগ্বিজয়ী হওয়া। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. নতুন ধর্মমত প্রবর্তন : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মনে করতেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) যদি চারজন অনুচরের মাধ্যমে ইসলাম প্রবর্তন করতে সক্ষম হন তবে তিনি ও তার প্রধান ৪ জন সহযোগী উলুঘখান, জাফরখান বসরতখান ও আলপখানের নেতৃত্বে এক ধর্ম প্রবর্তন করতে পারবে এ পরিকল্পনার সম্ভাবনা জানার জন্য সে যুগে প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলাওল মুলকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত কোনো নবীরা ঐশীগ্রন্থ ছাড়া ধর্ম প্রবর্তন করতে পারে না।

২. নতুন ধর্ম প্রবর্তনের চিন্তার কারণ : নতুন ধর্ম প্রবর্তনে পরিকল্পনা গ্রহণে কি কারণ ছিল? এরূপ প্রশ্ন হতে পারে । এর উত্তর সে যুগের প্রেক্ষাপট ও ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার স্পৃহার মধ্যে অনুসন্ধান করতে হবে।

 আলাউদ্দিন খলজি অবিভাজ্য সীমাহীন রাজনৈতিক ক্ষমতার অভিলাষী ছিলেন। তিনি এ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন যে তার চূড়ান্ত ক্ষমতা মানবজাতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করুক। এটাই তখন সম্ভব যখন তিনি ধর্মীয় দিক থেকে নিয়ন্ত্রণকারী হতে পারবেন।

৩. ধর্মীয় জ্ঞান : যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন ততটুকু তার পুঁজি। আসলে আলাউদ্দিনের ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা ছিল না। 

তিনি নিজেই বলতেন, আমি নির্বোধ, লেখাপড়া জানি না। সূরা ফাতিহা, এখলাস, - দোয়া কুনুত ও তাশাহুদ ছাড়া কিছু জানতেন না ।.

৪. নামাজ-রোজার অলসতা : ঐতিহাসিক বারানি বলেন, আলাউদ্দিন খলজি ব্যক্তিগতভাবে নামাজ-রোজার অভ্যস্ত ছিলেন না। তবে কাজি মুন্সিদের সাথে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করতেন বলে জানিয়েছেন। 

এতে প্রতীয়মান হয় যে, তার ধর্মীয় প্রেরণার অভাব ছিল না। তিনি অলসতা ও অমনোযোগিতার কারণে নামাজ-রোজার প্রতি অভ্যস্ত ছিলেন না ।

৫. নতুন ধর্মমত প্রবর্তন জ্ঞানী-গুণীদের সাথে পরামর্শ : নগরীর ওলামা এবং জ্ঞানী গুণী পণ্ডিতবর্গ তার নতুন ধর্মমত এবং দিগ্বিজয়ের কথা শুনে কানাঘুষা করেছেন শুনে তিনি ধর্মীয় উপদেষ্টা আলাওল খানের সাথে পরামর্শ করেন। 

আলাওল খান তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, নতুন ধর্মমত প্রবর্তন না করে অবিজিত অঞ্চলগুলো দখল করা তার জন্য শ্রেয়।

৬. আলাওলের পরামর্শ : আলাওল মূলক অত্যন্ত নির্ভীকভাবে এবং সত্যনিষ্ঠ সহকারে সুলতানকে বাস্তব অবস্থা বুঝাতে সক্ষম হন। 

তিনি বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তার শপথ নতুন ধর্মমত প্রবর্তন ধর্মীয় বিধান ও এ সম্পর্কিত কথাবার্তা আপনি কখনো প্রকাশ করবেন না । কেননা নতুন ধর্মমত প্রবর্তন বাদশাহের কাজ নয়, এটা নবিদের কাজ ।

৭. নতুন ধর্ম প্রবর্তনের চিন্তাত্যাগ : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি আলাওল মূলকের পরামর্শ ভালোভাবে অনুধাবন করেন। 

ভারত উপমহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশসহ গোটা ভারতের উপর বিজয় গৌরবের অধিকারী আলাউদ্দিন বোধ হয় দিল্লির একমাত্র শাসক যিনি ইসলামি আমলে দুর্বল ছিলেন। আলাউদ্দিন পূর্বের পরিকল্পনা ছেড়ে রাজ্যবিস্তারে মনোনিবেশ করেন।

৮. দিগ্বিজয়ের আশা : দিগ্বিজয় সম্পর্কে আলাওল তাকে পরামর্শ দেয় যে, ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর যেহেতু তার আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এরিস্টলের মতো যখন কোনো বিচক্ষণ মন্ত্রী নেই।

সেক্ষেত্রে দিগ্বিজয়ের পরিকল্পনা তার জন্য বাতুলতা বই আর কিছু না। অতঃপর সুলতান নতুন ধর্মমত ও দিগ্বিজয়ের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন তার শাসন আমলে কতিপয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে যা তার শাসনব্যবস্থাও সাময়িকের জন্য বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তার অলীকও অবাস্তব পরিকল্পনা পরবর্তীতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

তিনি আলাওল মূলকের পরামর্শে তার নতুন মহাপরিকল্পনা যে অবাস্তব ও অলীক তা তিনি বুঝতে পারেন। অতঃপর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে রাজ্যবিস্তারে মনোযোগী হন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান । যদি তোমাদের আজকের আলাউদ্দিনের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে কি জান পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ