বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর |
বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর
- অথবা, বখতিয়ার খলজির বঙ্গ অভিযানের সফলতার কারণ কি?
- অথবা, বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ে সফলতার কারণ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : একজন ভাগ্যান্বেষী অসীম সাহসী তুর্কি বীর হিসেবে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে পূর্ব ভারতে অভিযান চালিয়ে প্রথম দক্ষিণ বিহার পরে পশ্চিম ও উত্তর বাংলা জয় করে।
বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কন করেন। এ বাংলা বিজয়ের পিছনে রয়েছে রণদক্ষতা, কূটকৌশল, দক্ষ সেনাবাহিনী ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা। যার মাধ্যমে তিনি সফলতা লাভ করেন।
বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ : বখতিয়ার খলজি ছিলেন জাতিতে তুর্কি বংশের খলজি ও বৃত্তিতে ভাগ্যান্বেষী একজন সৈনিক। তিনি আফগানিস্তানের গরমশির নামক অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।
সেখানে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন বাধা ও বহু প্রতীক্ষার পর তিনি বাংলা জয় করেন। নিচে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সফলতার কারণ আলোচনা করা হলো
১. ছদ্মবেশি আক্রমণ : বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ে সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে ছদ্মবেশি আক্রমণ। মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয় করেন।
তার মূল বাহিনীর পেছনে আসতে থাকে। মূলত তার বাহিনী নগরীতে প্রবেশ করার পর লক্ষণ সেন তাদের বণিক ভেবে আক্রমণ করেনি।
২. প্রচলিত পথে না আসা : বখতিয়ার খলজির সাফল্যের আরো একটি অন্যতম কারণ প্রচলিত পথে না আসা। বাংলা আসার অন্যতম পথ ছিল তেলিয়াগড় সীমান্ত।
কিন্তু বখতিয়ার খলজি তেলিয়াগড় সীমান্তে না গিয়ে ঝাড়খণ্ডের গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে নদীয়া আগমন করেন। এটা তার সফলতার অন্যতম কারণ।
৩. গুপ্তাশ্বরের অযোগ্যতা : রাজা লক্ষণের পরাজয় ও বখতিয়ার খলজির সফলতার অন্যতম আরও একটি কারণ হচ্ছে যে রাজা লক্ষণ সেনের গুপ্তদপ্তরের অযোগ্যতা।
কর্মতৎপর হীন রাজা লক্ষণ সেনের অদক্ষ গুপ্তচর বিভাগ বহিঃশত্রুর আক্রমণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ব্যর্থ হলে বখতিয়ারের বাংলা বিজয় সহজ হয়।
৪. গণঅসন্তোষ : রাজা লক্ষণ সেন ছিলেন একজন অত্যাচারী শাসক। তার অত্যাচারী শাসনে লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। তার অত্যাচারের মাত্রা ছিল সীমাহীন।
লক্ষণ সেনের অত্যাচারী শাসনের ফলে জনগণ তার প্রতি অতিষ্ঠ ছিল। ফলে তার এমন দুর্যোগ বা বিপদের কালে প্রজারা তাকে সাহায্যে করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। ফলে বখতিয়ার খলজি সফলতা লাভ করে।
৫. অরক্ষিত রাজধানী : লক্ষণ সেনের রাজধানী ছিল নদীয়া। বখতিয়ার আক্রমণের সময় তিনি নদীয়া অবস্থান করেছিলেন। নদীয়া গঙ্গা তীরবর্তী একটি তীর্থস্থান।
নদী তীরবর্তী হওয়ায় রাজা লক্ষণ নদীয়ার নিরাপত্তা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। নদীয়া সামরিক দিক দিয়ে তেমন সুরক্ষিত ছিল না। আর এ ধরনের নিরাপত্তার অভাবের সুযোগে ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয় করেন।
৬. দক্ষ তুর্কি নেতা : বখতিয়ার খলজি ছিলেন একজন সমরবিদ। তিনি তুর্কি জাতিদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন।
তার গঠিত তুর্কি বাহিনী ছিল অত্যন্ত দ্রুতগামী, ক্ষিপ্র, তরিৎকর্মা সুকৌশলী ও চৌকষ। তাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতার ফলে অতর্কিত হামলার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাজা লক্ষণ সেনের সৈন্যদের ছিল না।
৭. পরিষদবর্গের পশ্চাৎ প্রসারণ : বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সফলতা অন্যতম কারণ হচ্ছে তার পরিষদবর্গের পশ্চাৎ প্রসারণ।
বখতিয়ার খলজির বিহার বিজয়ের পর বাংলা আক্রমণ করতে পারে এ উদ্দেশে তারা নদীয়া ছেড়ে পূর্ববঙ্গে চলে যায়। ফলে বখতিয়ার খলজি সফলতা লাভ করে।
৮. মোক্ষম সময় : বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সফলতা লাভের অন্যতম কারণ হচ্ছে দুপুরে আক্রমণ। ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী প্রাতকালীন রাজদরবারের শেষে সবাই মধ্যাহ্ন ভোজ ও সিস্তা পালনে ব্যস্ত ছিল। ফলে হঠাৎ আক্রমণে রাজার সৈন্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে এবং তার প্রতি আক্রমণে সাহস হারিয়ে ফেলে।
৯. বখতিয়ার খলজির মূল বাহিনীর দ্রুততা : বখতিয়ার খলজির সফলতা লাভের আরো অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে তা মূল বাহিনীর দ্রুততা। বখতিয়ার একদিকে ১৮ জন সৈন্য নিয়ে প্রাসাদে ঢুকে পড়েছেন তখনই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে তার মূল বাহিনী নগরীতে তোরণ ধারে চলে আসে।
আর এ অবস্থায় রাজা লক্ষণ সেনের পালিয়ে যাওয়ার উপায় ছাড়া কোনো পথ ছিল না। আর এ সুযোগে বখতিয়ার বাংলা বিজয় করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয় তাকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দখল করে দিয়েছে। বাংলা বিজয়ে সফলতার মূলে রয়েছে তার সেনাবাহিনীর দক্ষতা তার কৌশল ও সামরিক মেধা।
সুদূর আফগানিস্তান থেকে এসে নিরস্ত্র সৈনিক হিসেবে জীবন শুরু করে নিজ ক্ষমতা ও সাহসিকতার বলে তিনি বাংলার জয়ের মাধ্যমে সফলতা লাভ করে।
অতপর সফলতা লাভ করার পর সেখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। বখতিয়ার খলজি তার অধ্যবসায় ও কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে গেছেন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের সাফল্যের কারণ আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।