ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর
ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর

ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর

  • অথবা, রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
  • অথবা, ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখাও।

উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় রাজা বা রানি এবং রাজতন্ত্র শব্দ দুটি সমার্থক নয়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ব্রিটেনে রাজা হলেন একজন ব্যক্তি মাত্র আর রাজতন্ত্র হলো একটি প্রতিষ্ঠান। 

এখানে রাজতন্ত্রের অনেক পরে কেবিনেট পার্লামেন্ট প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের যুগে সকল ক্ষমতা ব্যক্তিগতভাবে রাজার হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। 

রাজাই ছিলেন সকল ক্ষমতার উৎস। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। কিন্তু কালক্রমে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় ক্রমবিবর্তনের ধারায় রাজার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। 

রাজার ব্যক্তিগত ক্ষমতা সীমিত করে পার্লামেন্টের হাতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ন্যস্ত করা কর। নিম্নে রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য : গ্লাডস্টোনের মতে, ব্রিটেনে রাজা এবং রাজতন্ত্রের বা রাজশক্তির ভেতর পার্থক্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ :

১. প্রকৃতিগত পার্থক্য : রাজা বলতে রাজতন্ত্রের ব্যবহারকারী বিশেষ একজন ব্যক্তিকে বুঝায়। কিন্তু রাজতন্ত্র বলতে রাজার পদকে বুঝায় । অন্যভাবে বলা যায়, রাজা হলেন একজন ব্যক্তিমাত্র। আর রাজতন্ত্র হলো একটি প্রতিষ্ঠান।

২. স্থায়িত্বগত পার্থক্য : রাজা সিংহাসন পরিত্যাগ করতে পারেন। রাজত্ব চালাতে অসমর্থ হয়ে পড়তে পারেন বা মৃত্যুবরণ করতে পারেন। কিন্তু রাজতন্ত্রের স্থায়িত্ব ব্যক্তি রাজার মৃত্যুর সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায় না। রাজতন্ত্র আইনগতভাবে অবিনশ্বরতা ভোগ করে।

৩. ক্ষমতাগত পার্থক্য : ব্যক্তি রাজা প্রকৃতিগতভাবে ক্ষমতাহীন। তার নামে কেবিনেট সকল ক্ষমতা পরিচালনা করে। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক রাজা বা রাজতন্ত্রের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত। এ প্রাতিষ্ঠানিক রাজা ব্যক্তি নন।

৪. পরিধিগত পার্থক্য : ব্যক্তি রাজা প্রকৃতপক্ষে পার্লামেন্টের ক্ষমতার দ্বারা আবদ্ধ। অপরদিকে, রাজতন্ত্রের ক্ষমতা পার্লামেন্টের সম্মতি সাপেক্ষেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ পার্লামেন্ট অবহিত যে, রাজতন্ত্র সর্বতোভাবেই পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ এবং পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবেন।

৫. দায়িত্বগত পার্থক্য : রাজা একজন ব্যক্তিগত দেশের মন্ত্রিসভা তার নামে সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে। তবে মন্ত্রীদের রাজকর্মের জন্য রাজা বা রানির কোনো ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব নেই । 

অন্যদিকে, রাজতন্ত্র হলো একটি আইনগত বা নৈর্ব্যক্তিক ধারণা বিশেষ। ব্রিটেনে রাজতন্ত্রকে রাজার বিশেষাধিকার সমেত সরকারের ব্যাপক ক্ষমতার যোগফলের প্রতীক হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়।

৬. কার্টার, রেনী এবং হার্ড : রাজা বা রাজতন্ত্রের পার্থক্যকে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ নীতিরূপে উল্লেখ করেছেন। রাজার গুণাবলি যাই হোক না কেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজতন্ত্র এখনও প্রযুক্ত মর্যাদার অধিকারী। এ প্রতিষ্ঠানের প্রাচীনত্ব এবং তার সাথে জড়িত জাঁকজমকই এর মূল কারণ সরকারের পরিবর্তন সত্ত্বেও রাজতন্ত্র অব্যাহত থাকে।

৭. মুনরো এবং এয়ার্স্ট রাজা ও রাজতন্ত্রের পার্থক্য : আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, রাজার হাত থেকে রাজশক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমেই ব্রিটিশ সংবিধানের বিকাশ ঘটেছে। রাজার মর্যাদা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। 

রাজার মর্যাদা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি এখনও আইনের ঊর্ধ্বে। পার্লামেন্ট তাকে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে আবদ্ধ করেছে। ব্রিটেনে রাজা এবং রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যের দ্যোতক হিসেবে কতকগুলো প্রবচন বা ধারণা গড়ে উঠেছে। 

নিচে ধারণাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

রাজা কোনো অন্যায় করতে পারেন না, ("The king Can do no wrong") :

এ উক্তিটির মূল কথা হলো ব্যক্তিগতভাবে রাজাকে রাজকার্যের জন্য দায়ী করা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে রাজা কোনো আদালতে বিচার্য হবেন না। এর মূলগত অর্থ তিনটি

১. রাজা এখন ইংল্যান্ডের রাজশক্তির প্রতীক নন তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। ক্রমে ক্রমে রাজার হাত থেকে সমস্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের হাতে এসে পড়েছে। রাজা বর্তমানে সকল প্রকার রাজনৈতিক দলাদলি ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

২. শাসনকার্যের জন্য মন্ত্রিসভার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত দায়িত্ব হয়েছে। রাজা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত স্তর। যদি তিনি নিজে শাসন কার্যে অংশগ্রহণ করেন, তবে তার দ্বারা অন্যায় কার্য সম্পন্ন হওয়া অসম্ভব নয়। 

কিন্তু আসলে তার প্রত্যেকটি কার্য কোনো না কোনো মন্ত্রীর দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং ঐ কার্যের আদেশপত্রে সে মন্ত্রীর স্বাক্ষর থাকে। তাই রাজা ঐ সকল কাজের জন্য দায়ী নন। 

তাকে কেউ গ্রেফতার করতে পারে না। তিনি কোনো আদালতের আওতার মধ্যে পড়েন না। কেননা তিনি আদালতের মালিক।

৩. তিনি কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করতে অসমর্থ শুধু তাই নয়, তিনি কাউকে অন্যায় করতে আদেশ দিতে পারেন না। ফলে রাজার নামে কেউ অন্যায় করে রেহাই পেতে পারে না। 

উল্লেখ্য যে, রাজার ব্যক্তিগত কাজের জন্য মন্ত্রিরা দায়ী নন। যদিও ডাইসি বলেন, “রাজা যদি রাগারাগি করে তার প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে বসেন। তবুও বিচারালয়ে তার বিচার | হবে না।” এসব নিছক রসিকতাপূর্ণ উক্তি। তবে রাজার ব্যক্তিগত ব্যাপারে খুব অল্প স্বাধীনতা রয়েছে।

রাজার মৃত্যু নেই : প্রতিষ্ঠিত হিসেবে রাজশক্তি বা রাজতন্ত্র (Crown) অমর। ব্লাকস্টোন (Blackstone) যেমন বলেছেন, ব্যক্তি হিসেবে হেনরি এডওয়ার্ড প্রমুখের মৃত্যু ঘটতে পারে কিন্তু রাজতন্ত্র অবিনশ্বর।

রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠানই রাজশক্তির নিয়ামক। এক রাজা পরলোক গমন করলে অন্য রাজা তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং রাজতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।

রাজা শিশু নন : রাজা কোনোদিনই শিশু বা বৃদ্ধ নন, তিনি সকল সময়ই রাজা। যদি কোনো শিশু সিংহাসনে আরোহণ করেন। তথাপি রাজকার্য পরিচালনার সময় তিনি শিশু বলে পরিগণিত হবেন না।

পার্লামেন্টের বিল অনুমোদনের কাজ থেকে আরম্ভ করে সকল কার্যসম্পাদনের যোগ্য বলে তিনি বিবেচিত হন। তবে যদি তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হন, তাহলে রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। 

শারীরিক অসুস্থতা বা মানসিক দুর্বলতার জন্য যদি তিনি অপারগ হন তবে "রাজ প্রতিনিধি তার পক্ষে শাসনকার্য পচিালনা করতে পারবেন। 

বর্তমানে রাজতন্ত্রের নিয়ন্তা বা রাজবংশের উত্তরাধিকারী পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। রাজা ও রানির প্রথম সন্তান রাজমুকুট ধারণের অধিকারী (Principle of Primegeniture)। প্রতি বছর একটি বড় রকমের ভাতা নির্ধারিত হয় রাজপরিবারের জন্য।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনে রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে এক বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। মুনরো ও এয়ার্স্ট ব্যক্তি এবং রাজশক্তির মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে, ব্যক্তি রাজার কাজ থেকে ক্ষমতা রাজশক্তির কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। 

তার ফলে গ্রেট ব্রিটেনের বিকাশ সাধিত হয়েছে। ব্যক্তিগত বিচারে রাজার পদমর্যাদার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক আবদ্ধ হয়েছেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। যদি তোমাদের আজকের ব্রিটেনের রাজা ও রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ