ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর

  • অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
  • অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ধারণা দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে একটি প্রাচীনতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত। সুদীর্ঘকালের বিবর্তনের ধারায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র তার প্রায় নিরবচ্ছিন্ন অস্তিত্ব আজ বজায় রয়েছে। 

সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে অলিভার ক্রমওয়েল ও রিচার্ড ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এ ধারা সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। 

তবে ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের এ দুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে | ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সামজস্য সাধন করতে হয়েছে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস : ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের ইতিহাস অনেক সুদীর্ঘ। নিম্নে বিস্তারিতভাবে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের জমিবিকাশের ইতিহাস বর্ণনা করা হলো :

১. অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগ : ব্রিটেনে রাজন্ত্রের ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের অধ্যায় শুরু হয় নবম শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে। নবম ও দশম শতাব্দীতে অ্যাংলো স্যাক্সন (Anglo saxon) যুগে রাজারা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজসিংহাসনে আরোহণ করতেন। 

এ সময় উইটান (Witan) বা বিষজন সভা (Council of wisemen) এর সাহায্যে তারা রাজ্য শাসন করতেন। তবে এ | সভা কোনোভাবেই প্রতিনিধিত্বমূলক ছিল না। স্বয়ং রাজা | উইটানের সভায় সভাপতিত্ব করতেন।

২. নর্মান্ডীয় যুগ : একাদশ শতকে নর্মান্ডির উইলিয়াম (William) ব্রিটেনে জয় করেন। এ সময় ১০৬৬ সাথে ব্রিটেনে | সামস্তপ্রথার সূত্রপাত ঘটে এবং রাজার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি, পায়। 

এ সময় ব্রিটেনে ভূস্বামীদের ক্ষমতা যথেষ্ট কম থাকায় রাজারা সহজেই কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করাতে সমর্থ হন। 

তবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হলেও উইলিয়াম ও তার উত্তরাধিকারীরা মহাপরিষদ (Magnum Concilium) নামক একটি সভার পরামর্শক্রমে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। ওইটানের মতো এ সভাতেও জনপ্রতিনিধিদের কোনো স্থান ছিল না।

৩. মহাসনদ : কেন্দ্রীভূত রাজতন্ত্রের অধীনে থেকে ব্রিটেনের, | সামন্তবাদী শ্রেণি যথার্থভাবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে না পারায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও তাদের স্বার্থ আশানুরূপভাবে সুরক্ষিত হতে পারেনি। 

তাই যাজকশ্রেণির সাথে হাত মিলিয়ে তারা চরম রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। অবশেষে ১২১৫ সালের ১৫ জুন রুনীমিও নামক স্থানে সমবেত হয়ে তারা নিজেদের দাবি সম্বলিত একটি দলিল মেনে নিতে রাজা জনগণকে বাধ্য করে। এ দলিল ইতিহাসে মহাসনদ বা ম্যাগনাকার্টা (Magna Carta) নামে পরিচিত।

৪. গোলাপের যুদ্ধ : ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে গোলাপের যুদ্ধ (War of rose) এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে সামন্তরা পারস্পরিক বিরোধে লিপ্ত হয়। 

এ বিরোধ শেষ পর্যন্ত রক্তক্ষণী সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়। এ সংঘর্ষ ইতিহাসে গোলাপের বুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধের ফলে সামস্তশ্রেণির ক্ষমতা ও প্রভাব বিলুপ্ত হয়।

৫. টিউডর আমল : ষোড়শ শতাব্দীতে ব্রিটেনে টিউডর স্বৈরতান্ত্রিকতা শুরু হয়। এ রাজবংশের নৃপতিগণ কঠোরহস্তে অরাজকতা দূর করে রাজকীয় কর্তৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কে এসময় ব্রিটেনে ৰণিক শ্রেণি নামে একটি নতুন শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। 

এ শ্রেণি টিউত্তর আমলে রাজকীয় সমর্থনের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে টিউডর রাজত্বের সুশৃঙ্খল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এ শ্রেণি তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সমৃদ্ধি লাভ করে। 

তবে রানি এলিজাবেথের আমলের শেষের দিকে ব্রিটেনের বণিকশ্রেণি পার্লামেন্টের মাধ্যমে অধিকতর রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের উদ্যোগী হতে শুরু করে।

৬. স্টুয়ার্ট যুগ : সপ্তদশ শতাব্দীতে স্টুয়ার্ট রাজনের রাজত্বকালে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র সংকটের সম্মুখীন হয়। রাজা প্রথম জেমস পার্লামেন্টের প্রাধান্য বা সাধারণ আইনের বিরোধিতা করেন। 

তিনি রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণা প্রচার করেন। তার ফলে রাজার সাথে পার্লামেন্টের বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাজা প্রথম চার্লসের রাজত্বকালে এ বিরোধ চূড়ান্ত রূপলাভ করে। 

তিনি ১৬২৮ সালে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। কিন্তু বণিক শ্রেণিদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত চার্লস পার্লামেন্ট আহ্বান করতে এবং অধিকারের আবেদন (Petition of Rights) মেনে নিতে বাধ্য হন।

 অধিকারের আবেদন মেনে নিলেও কার্যক্ষেত্রে তিনি সেটিকে উপেক্ষা করতে লাগলেন। ফলে ১৬৪১ সালে অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে উদীয়মান বণিক শ্রেণি ক্ষমতা দখল করে প্রথম চার্লসকে। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। এর মাধ্যমে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭. গৌরবময় বিপ্লব : ১৬৫৮ সালে ক্রমওয়েলের মৃত্যুর পর ব্রিটেনে পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জেমস এর রাজত্বকালে পুনরায় রাজা ও উদীয়মান বণিক শ্রেণির বিরোধ শুরু হলে দ্বিতীয় জেমস সিংহাসনচ্যুত হন এবং তার কন্যা মেরী ও জামাতা উইলিয়াম সিংহাসন অধিকার করে নেন।

 ১৬৮৮ সালের এ ঘটনা ইতিহাসে গৌরবময় বিপ্লব (Glorious revolution) হিসেবে পরিচিত। রাজা বা রানির স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনাকে রদ করার জন্য ১৬৮৯ সালে পার্লামেন্ট অধিকারের বিল (Bill of Rights) বিধিবদ্ধ করে। 

এর ফলে রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নষ্ট হয়। নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র স্বীকৃত হয় এবং পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা করে।

 বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের পর বিশ্বব্যাপী ধনতন্ত্রবাদের সংকট শুরু হলে ব্রিটিশ বুর্জোয়ারা ক্রমান্বয়ে ব্যক্তিগত রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ ও কর্তৃত্ব | অক্ষুণ্ণ রাখতে সচেষ্ট হয়েছে। 

তাই বর্তমানে ব্যক্তি রাজার ক্ষমতার পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক রাজার ক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।বস্তুত ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লবের পর থেকে ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা সাধারণভাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অনেক বিবর্তন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজশক্তি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। গ্রেট ব্রিটেনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। 

এ পরিবর্তন থেকে রাজশক্তিও অব্যাহতি পায়নি। রাজশক্তির বিকাশের মাধ্যমেই ঐ দেশের সাংবিধানিক কাঠোমোর বৈচিত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ