ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর |
ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর
- অথবা, আইনের অনুশাসন বলতে কী বুঝ? আইনের অনুশাসন সম্পর্কে ডাইসির মতবাদ ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, আইনের অনুশাসন কাকে বলে? আইনের অনুশাসন সম্পর্কে ডাইসির ধারণা সমালোচনাসহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক নীতি হলো আইনের অনুশাসন। গণতান্ত্রিক জীবন ধারার সাথে এ নীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
আইনের অনুশাসন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। বিশিষ্ট রোমান দার্শনিক সিসেরোর মতে, আইনের অনুশাসন হলো সভ্যতার ভিত্তিস্বরূপ।
ব্রিটিশ নাগরিকগণ পৃথিবীর যে কোনো দেশের নাগরিকদের তুলনায় অধিকতর নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ভোগ করে। আইনের অনুশাসন হলো ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার মূল ভিত্তি ও রক্ষক।
আইনের অনুশাসনের সংজ্ঞা : আইনের অনুশাসন শব্দের মূল অর্থ আইনের প্রাধান্য। এ ধারণা অনুযায়ী আইনের স্থান সর্বোচ্চ, আইন মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক এবং এটি স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে আত্মরক্ষার অস্ত্র আইনের চোখে সকলেই সমান এবং সকলেই সুস্পষ্ট ও সুবিদিত আইনের অধীন।
কোনো ব্যক্তিকে আইন সঙ্গতভাবে আর্থিক বা দৈহিক কোনো প্রকার দত্ত দেওয়া যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশের সাধারণ আদালতের সামনে সাধারণ আইন অনুসারে প্রমাণ করা যায় যে, সে কোনো আইন ভঙ্গের অপরাধে অপরাধী।
কার্টার রেনী ও হার্জ (Carter, Ranney and Herz) বলেছেন, "The government and its agents, as well as individual citizens, are subject to laws which are definite and known in advance and which can be modified only by Act of parliament."
লর্ড হিউয়ার্ট (Lord Hewart) বলেন, "আইনের অনুশাসন বলতে ব্যক্তিস্বাধীনতা নির্ধারণ বা সংরক্ষণের জন্য সাধারণ আইনের সার্বভৌমত্ব বা প্রাধান্যকে বুঝায়।”
আইভর জেনিংস (Ivor Jennings) বলেন, অতি প্রাচীনকালে রোমান সাম্রাজ্য এবং পরবর্তীকালে আইনের অনুশাসন বলতে শৃঙ্খলা (Public order) সংরক্ষণকে বুঝায়। রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে এ জান শৃঙ্খলা রক্ষা করা হত। তাই জনশৃঙ্খলাকে আইনের অনুশাসনের সার্থক রূপে গণ্য করা হয়।
ভাইসির আইনের অনুশাসন আইনের অনুশাসন ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে, আইনের চক্ষে শ্রেণিগত বিভেদ সারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইনের অনুশাসন এক জীবন্ত প্রতিবাদস্বরূপ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ.ভি ডাইসি (A. V. Dicey) ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত তার "An Introduction to the law of the Constitution" নামক গ্রন্থে আইনের অনুশাসন এর ধারণাকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেন।
তিনি যে আইনের অনুশাসনের কথা বলেছেন, তা ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের (Individualism) প্রতিধ্বনি। ডাইসি আইনের অনুশাসনকে ব্রিটিশ সংবিধানের - মৌলনীতি বলে উল্লেখ করেছেন। ডাইসির ব্যাখ্যানুসারে আইনের অনুশাসন তিনটি মূলনীতি বা মৌলিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।
নিম্নে তিনটি নীতি ব্যাখ্যা করা হলো :
১. আইনের প্রাধান্য: "কোনো ব্যক্তিকে আইনসঙ্গতভাবে আর্থিক বা দৈহিক কোনো প্রকার দণ্ড দেয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশের সাধারণ আদালতের সামনে সাধারণ আইন অনুসারে প্রমাণ করা যায় যে, সে কোনো আইন ভঙ্গের অপরাধে অপরাধী।"
("No man is punishable or can be lawfully made to suffer in body or good except for a district breach of law established in the ordinary legal manners before the ordinary courts.") এর অর্থ শাসন বিভাগ কাউকে যথেচ্ছাভাবে শান্তি দিতে পারে না।
কোর্টে নিয়মমাফিক বিচার না করে কাউকে কারাগারে অথবা হাজতে রাখা সম্ভবপর হয় না। সুতরাং আইনের অনুশাসন শাসনবিভাগের যথেচ্ছ ক্ষমতা এবং প্রভাবকে প্রাধান্য ন দিয়ে স্বাভাবিক আইনকেই উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
২. আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান : ভাইসির মতে, আইনের নিতে সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে। কেউ আইনের নেয়। তার সামাজিক মর্যাদা যাই থাক না কেন বা তিনি
যত বড় পদে অধিষ্ঠিত হোন না কেন, তিনি দেশের সাধারণ আইন মানতে বাধ্য এবং সাধারণ আদালতের আওতাযুক্ত। সকলের জন্য একই আইন। আইনের চোখে সকল নাগরিক প্রধানমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে সাধারণ একজন কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই আইনের চোখে সমান ।
ডাইসি ফ্রান্সের শাসন বিভাগীয় আইন বা প্রশাসনিক আইন Droit administrative) হতে ব্রিটেনের আইনের অনুশাসনের পার্থক্য দেখিয়ে ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
ফ্রান্সে যেমন প্রশাসনিক কর্মচারীদের বিচারের জন্য স্বতন্ত্র আদালত ব্যবস্থা রয়েছে ব্রিটেনের তা নেই। ব্রিটেনে সাধারণ নাগরিক এবং সরকারি কর্মচারী নির্বিশেষে সকলের বিচার দেশের সাধারণ আদালতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ডাইসির মতে, "Whith us every official from the prime minister to a constable or a collector of taxes is under the same responsibility for every act done without legal justification as any other citizen."
৩. জনগণের অধিকার : সাধারণ আইন দ্বারা সংরক্ষিত ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য বিচারকগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব রায় দিয়েছেন তা থেকেই ইংল্যান্ডের সংবিধান উদ্ভূত হয়েছে।
তাই ডাইসি বলেন, সংবিধানের মূলনীতি ও সংশ্লিষ্ট বিধানাদি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও জনসাধারণের অধিকার বিচারকদের সিদ্ধান্ত থেকে জন্মলাভ করেছে। কিন্তু অন্যান্য দেশে সংবিধানের ফলে এ সকল জন্মলাভ করে। সুতরাং ব্যক্তির অধিকার এখানে মৌলিক।
ডাইসির (Dicey) মতে, ব্রিটেনে বিধিবদ্ধ সংবিধান দ্বারা জনগণের রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি কর্মচারীই হোক বা সাধারণ নাগরিকই হোক যে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অপর ব্যক্তির আইনগত অধিকারে বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাধারণ আইনের প্রতিকার পাওয়া যায় এবং এভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় বলে জনগণের অধিকার বিশেষভাবে সংরক্ষিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনে আইনের অনুশাসন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনের অনুশাসন (Rule of law) ব্যতীত কোনো দেশেই পূর্ণ শান্তি-শৃঙ্খলা
সম্ভব নয়। যদি কোনো দেশে আইনের অনুশাসন উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে দেশে সকল শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায় এবং দেশে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। আইনের অনুশাসন সম্পর্কে ডাইসির অভিমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব টি সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।