ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর
ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর


ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর

  • অথবা, ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দাও ।
  • অথবা, ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতের ইতিহাসে সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। কারণ তুর্কি জাতি যখন বিপদাপন্ন, দেশ যখন বিদ্রোহী সর্দার ও ক্ষমতাশালী অভিজাতগণের দ্বারা পূর্ণ এবং বিজিত রাজ্য ও রাজাগণ যখন দিল্লির সুলতানের ক্ষমতা ও অস্তিত্ব বিলোপ সাধনে সচেষ্ট, সে দুর্যোগের দিনে ইলতুৎমিশের আবির্ভাব। 

এ সংকটময় মুহূর্তে তিনি তার দূরদর্শী শক্তি ও সামরিক দক্ষতা দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দিল্লি সালতানাতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন ।

সিংহাসনারোহণ : ইলতুৎমিশ ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত তুর্কিস্থানের ইলতারি গোত্রের জনৈক সর্দারের ছেলে। শৈশবে তার বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্বের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তার ভ্রাতারা তাকে বুখারার এক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে দেন। 

উক্ত ব্যবসায়ী তাকে অপর আরেক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করলে সে তাকে দিল্লিতে নিয়ে আসে কুতুবউদ্দিনের নিকট বিক্রি করেন। 

তার মেধার গুণে তাকে কুতুবউদ্দিন বদাউনের শাসনকর্তা পদে বহাল করেন এবং পরবর্তীতে ১২১১ সালে তিনি আরাম শাহকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন ।

ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা : নিম্নে ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস সাধন : ইলতুৎমিশ সাম্রাজ্যে সুসংগঠিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। মুহাম্মদ জুনাইকি এবং ফখরুল মূলক আসামির সহায়তায় তিনি কেন্দ্রে বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। ড. কোরায়েশি বলেন, তিনি বিশৃঙ্খলা ও বহুধাবিভক্ত সাম্রাজ্যে সদয় ও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

২. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ইলতুৎমিশ ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলেন। জনগণের অভিযোগ শোনার জন্য তিনি দেওয়ান-ই- মাসালিচ বিচার বসাতেন। তার বিচার ব্যবস্থার প্রশংসা করে ইবনে বতুতা বলেছেন, ইলতুৎমিশ তার প্রাসাদে একটি শিকল ও ঘণ্টা স্থাপন করেছিলেন। 

ন্যায়বিচারের জন্য সুলতান সমীপে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য তিনি এ ব্যবস্থা করেন।

৩. রাজস্ব বিভাগ ও অর্থ দপ্তরের পুনর্গঠন : কেন্দ্রে বিভিন্ন | দপ্তর স্থাপনের মাধ্যমে ইলতুৎমিশ রাজস্ব বিভাগ ও অর্থদপ্তরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কঠোরভাবে রক্ষা করার নির্দেশ দেন।

৪. আরবি রৌপ মুদ্রার প্রচলন : ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমান শাসকদের মধ্যে ইলতুৎমিশ সর্বপ্রথম রৌপ মুদ্রা প্রচলন করেন। এটি রুপাইয়া নামে অভিহিত হতো। তিনি যে রূপার টাকা প্রবর্তন করেন তার প্রতিটি টাকার ওজন ছিল ১৭৫ গ্রেন । মুদ্রায় তিনি বাগদাদের খলিফার নামাঙ্কন করতেন।

৫. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একাধিক রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করেন।

৬. বন্দেগান-ই-চেহেলগান : ইলতুৎমিশ সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য বন্দেগান-ই-চেহেলগান বা চল্লিশ চক্রের একটি ক্ষমতাশালী দল গঠন করেন। এরা সবাই ছিল প্রতিভাবান আমির-উলামা এবং সাম্রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখতো ।

৭. শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ : ইলতুৎমিশ নিজে একজন বিদ্ধান ছিলেন এবং তিনি বিদ্ধানকে অতি শ্রদ্ধা জানাতেন। তার রাজধানীকে বলা হতো তৎকালীন শিক্ষা-সংস্কৃতির রাজধানী। 

তার দরবারে অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, ধর্ম প্রচারক, শিল্পি ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের আনাগোনা ছিল। তিনি দিল্লিতে কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। তিনি বিখ্যাত আলেম ও ধর্ম প্রচারক, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী ও জালালউদ্দিন তাব্রিজকে শ্রদ্ধা জানাতেন ।

৮. স্থাপত্য শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতা : ইলতুৎমিশ অনেক স্মৃতিসৌধ ও মসজিদ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে দিল্লির কুতুবমিনার, কুয়াতুল ইসলাম ও আজমিরের আড়াই দিনকা ঝোপড়া মসজিদ উল্লেখযোগ্য ।

তিনি বদাউনে একটি বড় ঈদগাহ মাঠ এবং রাজ্যের মধ্যে অসংখ্য রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইলতুৎমিশ তার সুস্থ সুন্দর ও সুদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা দ্বারা একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে জন্য ঐতিহাসিকগণ তাকে দাস বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলে অভিহিত করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের ইলতুৎমিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ