ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর
ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর

ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর

  • অথবা, ইলতুৎমিশের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে বর্ণনা দাও। 
  • অথবা, ইলতুৎমিশের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে মামলুক বা দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

তার প্রতিষ্ঠিত দাস বংশ ১২৬১-৯০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ দমন করে তিনি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। সাম্রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করেই তিনি রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।

→ ইলতুৎমিশের পরিচয় : ইলতুৎমিশ তুর্কিস্থানের বিখ্যাত ইলবারি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার বুদ্ধিমত্তা ও সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ভ্রাতারা তাকে বিক্রি করে দেয়। 

পরবর্তীতে ক্রীতদাস ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ঘুরে তিনি দিল্লিতে কুতুবউদ্দিন আইবেকের কাছে বিক্রি হন। স্বীয় মেধা, জ্ঞান ও বিচক্ষণতার জন্য তিনি কুতুবউদ্দিনের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। 

আইবেক তার কন্যার সাথে ইলতুৎমিশের বিয়ে দেন। পরবর্তীতে পাঞ্জাবের খোয়াব জাতির বিদ্রোহ দমনে মুহাম্মদ ঘুরীকে সাহায্য করলে ঘুরী তাকে দাস হতে মুক্ত করেন।

→ সিংহাসনারোহণ : ১২১০ সালে আইবেকের মৃত্যুর পর তার পুত্র আরাম শাহ ক্ষমতায় আসলে তার ব্যর্থতা ও দুর্বলতার সুযোগে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আমির-উলামাদের সমর্থনে ইলতুৎমিশ জুবের প্রান্তরে আরাম শাহকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

→ ইলতুৎমিশের রাজ্যবিস্তার : দাস বংশের একজন অন্যতম সাম্রাজ্যবাদী শাসক হলেন ইলতুৎমিশ। তিনি ক্ষমতায় আরোহণ করেই সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন। নিম্নে তার রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :

১. আমির-ওমরাহদের বিদ্রোহ দমন : ইলতুৎমিশের রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো আমির-উলামাদের বিদ্রোহ দমন। তার রাজত্বকালে ভারতীয় আমির-ওমরাহরা বিদ্রোহ করলে তিনি তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন।

২. পাঞ্জাব ও থানেশ্বর দখল : গজনির শাসক ইয়ালদুজ ভারতের পাঞ্জাব ও থানেশ্বর এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ইলতুৎমিশ ১২১৫ সালে থানেশ্বরে ইয়ালদুজকে পরাজিত করে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

৩. লাহোরে অভিযান : ইয়ালদুজের পরাজয়ের পর ইলতুৎমিশ নাসিরউদ্দিন কুবাচার দিকে দৃষ্টি দেন। সুলতানের শাসক নাসিরউদ্দিন কুবাচা স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ইলতুৎমিশ ১২১৭ সালে থানেশ্বর যুদ্ধে তাকে পরাজিত করে লাহোর হতে বিতাড়িত করেন। ১২২৭ সালে কুবাচা পুনরায় বিদ্রোহ করলে ইলতুৎমিশ তাকে পরাজিত করে লাহোর হস্তগত করেন।

৪. রনথম্বোর অধিকার : অভ্যন্তরীণ ও বিদ্রোহ হতে রক্ষা পেয়ে ইলতুৎমিশ হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করেন। যার ফলশ্রুতিতে ১২২৬ সালে রনথম্বোর এবং ১২২৭ সালে সিওয়ালিক পর্বতে অবস্থিত মান্দওয়ার অধিকার করেন ।

৫. লক্ষ্মণাবতী অধিকার : ১২৩০-৩১ সালে লক্ষ্মণাবতী বিদ্রোহী আমিরদের পরাজিত করে সুলতান আলাউদ্দিন খানকে সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

৬. গোয়ালিয়র দখল : ১২৩২ সালে হিন্দু রাজা মঙ্গলদেরকে পরাজিত করে গোয়ালিয়র দখল করেন। ১২৩৪ সালে মালবের ভিলসা দুর্গ অধিকার করেন।

৭. উজ্জয়িনী অধিকার : সুলতান ইলতুৎমিশ তার রাজত্বের শেষে দিকে এসে সমৃদ্ধশালী উজ্জয়িনী দখল করেন। তার সর্বশেষ অভিযান প্রেরিত হয় দোয়াব অঞ্চলের হিন্দু বেনিয়াদের বিরুদ্ধে কিন্তু অসুস্থার জন্য তিনি এ বিজয় সম্পন্ন করতে পারেননি ।

৮. বাংলা বিজয় : ১২২৫ সালে ইলতুৎমিশ বাংলার স্বাধীন সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইয়াজ খলজির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হন। গিয়াসউদ্দিন প্রথমে আত্মসমর্পণ করেন। 

কিন্তু কিছু দিন পর গিয়াসউদ্দিন আবার বিদ্রোহ করলে ইলতুৎমিশের পুত্র তাকে পরাজিত ও হত্যা করেন এবং নাসিরউদ্দিন বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। 

১২২৮ সালে নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর পর খলজিগণ বলকার নেতৃত্বে আবার একত্রিত হলে ইলতুৎমিশ ১২৩০ সালে বলকাকে পরাজিত করে বাংলাকে দিল্লি সালতানাতের অধীনস্ত করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ সমস্যা জর্জরিত দিল্লি সিংহাসনকে অতি কৌশলে সাহসিকতার সাথে বিপদমুক্ত করে ভারতে তুর্কি সালতানাতকে সত্যিকার অর্থে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। 

আর. পি ট্রিয়াথি-এর মতে, ভারতে মুসলিম সার্বভৌমত্বের ইতিহাস সঠিকভাবে ইলতুৎমিশের দ্বারা শুরু হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের ইলতুৎমিশের রাজ্য বিস্তার সম্পর্ক আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ